Kohlbergs moral development theory in Bengali: নৈতিকতা বা নীতিশিক্ষার মূল বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে, কোহলবার্গের নৈতিক বিকাশের তত্ত্ব (Kohlbergs moral development theory in Bengali) একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। মনোবিজ্ঞানী লরেন্স কোহলবার্গ প্রস্তাবিত এই তত্ত্বটি মানুষ কীভাবে নৈতিকতা এবং মূল্যবোধ উপলব্ধি করে ও তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তার একটি সংবদ্ধ মডেল।
কোহলবার্গের তত্ত্বটি তিনটি প্রধান স্তরের ওপর ভিত্তি করে তৈরি: প্রাক-প্রচলন পর্যায়, প্রচলন পর্যায় এবং উত্তর-প্রচলন পর্যায়। প্রতিটি স্তর আবার দুটি করে ধাপে বিভক্ত। এই তত্ত্বটি আমাদের শেখায় যে, নৈতিক বিকাশ একটি চলমান প্রক্রিয়া যা সময়ের সাথে সাথে এবং বিভিন্ন সামাজিক প্রেক্ষাপটে পরিবর্তিত হয়।
কোহলবার্গের নৈতিক বিকাশের তত্ত্ব l Kohlbergs moral development theory in Bengali
Table of Contents

কোহলবার্গের ধারণা (Kohlberg’s concept):
1. কোহলবার্গ শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিশুর নৈতিক বিকাশের ওপর গবেষণা করেন।
2. পিঁয়াজের মতে বিকাশ হল কতগুলি পৃথক চিহ্নিত স্তরের সমন্বয়; আপনার পক্ষে কোলবার্গ এর মতে বিকাশ হল এক সামঞ্জস্যপূর্ণ ক্রম সমন্বয়ের প্রক্রিয়া। প্রত্যেক স্তরের বিকাশে তার পূর্বস্তরের বিকাশমূলক বৈশিষ্ট্য গুলোর পুনর্বিন্যাস হয়।
3. তাঁর নৈতিক বিকাশের তত্ত্ব দার্শনিক আদর্শ ও আচরণভিত্তিক মনোবিদ্যার ওপর প্রতিষ্ঠিত।
4. নীতিবোধ বলতে তিনি ন্যায়-পরায়ণতাকে বুঝিয়েছেন।
নীতি(Morality):
সমাজ, ধর্ম বা কোন প্রতিষ্ঠান দ্বারা আবিষ্কৃত আচরণবিধি(Some codes of conduct formulated by a society, religion or any other organisation)।
নৈতিক বিকাশ (Moral development):
শিশুর মত ন্যায়-অন্যায়, উপকার-অপকার, প্রভৃতি নৈতিক অনুভূতি গুলির সক্রিয়তা লাভ করার প্রক্রিয়াকে শিশুর নৈতিক বিকাশ বলা হয় (Development of one’s sense of justice)।
নৈতিক বিকাশ তত্ত্বের ভিত্তি (Basis):
1. মনুষ্য পরিবেশে পারস্পরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া (interaction) হয়। এই ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ায় নৈতিক বিকাশের মূল ভিত্তি।
2. বিকাশের কোনো প্রাক্ষোভিক কেন্দ্র নেই। নীতিবোধ হলো justice (ন্যায়বিচার) যা যুক্তি নির্ভর- অর্থাৎ নৈতিক বিকাশ এক ধরনের জ্ঞানমূলক বিকাশ।
3. মানুষ তার বহিরাচরণ(manifest behaviour), ওই আচরণের উদ্দেশ্য (intention of behaviour) এবং ওই আচরণের আভ্যন্তরীণ প্রভাবের(censequence) মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। এই তিনটি ক্ষমতা মানুষের নৈতিক বিকাশে সহায়তা করে।
নৈতিক বিকাশ প্রক্রিয়ার উপাদান:
1. জ্ঞানমূলক বিকাশ (cognitive development)।
2. জ্ঞানমূলক দ্বন্দ্ব(cognitive conflict)।
3. নির্দিষ্ট ভূমিকা গ্রহণের ক্ষমতা (role taking ability)।
4. ব্যক্তির মধ্যে দুটি বিপরীতধর্মী বিশ্বাস জ্ঞানমূলক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করে।
5. ব্যক্তির বিশ্বাস ও বর্হিপরিবেশের সংঘাতই জ্ঞানমূলক দ্বন্দ্বের জন্ম দেয়।
6. ব্যক্তির নীতিবোধ তার অন্তরদ্বন্দ্ব ও বর্হিদ্বন্দ্বের অবসান ঘটায়।
7. ব্যক্তি তার জ্ঞান মূলক দ্বন্দ্বের অবসান ঘটাতে পারবে কিনা তা নির্ভর করে ব্যক্তির ভূমিকা গ্রহণ করার ক্ষমতার উপর। ব্যক্তির ভূমিকা গ্রহণের ক্ষমতা হল- কোনো পরিস্থিতিতে অন্যের মতো করে পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতা।
জ্ঞানমূলক বিকাশ:
জ্ঞানমূলক দ্বন্দ্বের কারণ হয়। ব্যক্তির নির্দিষ্ট ভূমিকা গ্রহণের ক্ষমতা জ্ঞানমূলক দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়ে সাম্যাবস্থা স্থাপন করে।
নৈতিক বিকাশের পর্যায় (Stages of moral development):
নৈতিক বিকাশ পর্যায় সমূহ –
1. প্রাক্ প্রথাগত নীতিবোধের পর্যায় স্তর (4-10 বছর)
• সামঞ্জস্যহীন নীতিবোধ:- এই স্তরে শিশু ভালো মন্দ বিচার করে ফলাফল, অর্থাৎ শাস্তি বা পুরস্কারের দ্বারা।
• ব্যক্তিকেন্দ্রিক নীতিবোধ:- এই স্তরের শিশুর নৈতিক আচরণ তার নিজের ইচ্ছার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
2. প্রথাগত নীতিবোধের পর্যায় স্তর (10-13 বছর)
• প্রত্যাশামূলক নীতিবোধ:- এই স্তরে শিশুর নৈতিক চিন্তাধারা তার অন্যান্য সহযোগীর প্রত্যাশা দ্বারা নির্ধারিত হয়। অনেক ক্ষেত্রে দলের অন্যান্য সহযোগীদের সন্তুষ্টির জন্য সে নীতিবিরুদ্ধ কাজ করে।
• সমাজনিয়ন্ত্রিত নীতিবোধ:- এই স্তরে শিশুর নৈতিক আচরণ সমাজের স্বার্থ এবং নিয়মানুযায়ী নির্ধারিত হয়।
3. উত্তর প্রথাগত নীতিবোধের পর্যায় স্তর(>13 বছর)
• সামাজিক চুক্তি নিয়ন্ত্রিত নীতিবোধ:- এই স্তরে ব্যক্তির নৈতিক আচরণ সমাজের প্রতি তার দায়বদ্ধতার দ্বারা নির্ধারিত হয়, যুক্তির আশ্রয় নেয়, আইন তার আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে।
• সর্বজনীন নীতিবোধ:- বিবেক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সকলের কল্যাণ হয় এমন নীতিবোধ। এর জন্য প্রয়োজন হয় বিমুর্ত চিন্তন ক্ষমতা।
আধুনিক শিক্ষাবিদদের মতে, তথ্য গ্রহণের মাধ্যমে শিশুর নৈতিক বিকাশ ঘটে না। কোন বিষয়বস্তুকে শিশুর কাছে যুক্তিগ্রাহ্য করতে পারলে, তবে তা শিশুর চিন্তা শক্তিকে সক্রিয় করে তোলে। এর ফলে নৈতিক বিকাশ ঘটে।
শিক্ষাগত তাৎপর্য (Educational implications):
1. জ্ঞানমূলক দ্বন্দ্বের দরুণ নৈতিক বিকাশ হয়। বিভিন্ন বৌদ্ধিকমানসম্পন্ন শিশু একই শ্রেণীতে থাকলে (heterogeneous) এই ধরনের দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হবে।
2. শিক্ষার্থীদের মানসিক দ্বন্দ্বের অবসান ঘটানোর জন্য পারস্পরিক আলোচনার সুযোগ দিতে হবে। এই আলোচনার সময় গ্রহণ ও বর্জনের মাধ্যমে তাদের নৈতিক বিচারকরনের সুযোগ ঘটবে।
3. শিক্ষক সব সময় বিভিন্ন পাঠ্য বিষয়ের অভিজ্ঞতার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের আলোচনাকে সংযুক্ত করবেন।
4. দীর্ঘমেয়াদী শিক্ষা কর্মসূচির প্রবর্তন নৈতিক বিকাশের সহায়ক।
Also Read: মহাত্মা গান্ধীর মৌলিক শিক্ষা