Piajets 4 Theory of Cognitive Development: মানব মস্তিষ্কের জ্ঞানমূলক বিকাশ(Piajets Theory of Cognitive Development) এবং শিখন প্রক্রিয়ার ওপর পিঁয়াজের তত্ত্ব এক অসাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে। জঁ পিঁয়াজে, একজন সুইস মনোবিজ্ঞানী, এই তত্ত্বটি প্রস্তাব করেন, যা শিশুদের বুদ্ধির বিকাশের বিভিন্ন স্তর ও ধাপ নিয়ে আলোচনা করে।
পিঁয়াজের তত্ত্বটি মূলত চারটি প্রধান স্তরে বিভক্ত: সংবেদন-প্রভাবক পর্যায়, পূর্ব-পরিচালন পর্যায়, মূর্ত-পরিচালন পর্যায়, এবং আনুষ্ঠানিক-পরিচালন পর্যায়। প্রতিটি স্তর একটি নির্দিষ্ট বয়স এবং জ্ঞানমূলক ক্ষমতার বিকাশকে নির্দেশ করে। এই তত্ত্বটি শিশুদের জ্ঞানীয় বিকাশের এক প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করে, যেখানে তারা ধাপে ধাপে পরিবেশের সাথে সংযোগ স্থাপন করে এবং নিজেদের বুদ্ধি ও চিন্তাশক্তিকে উন্নত করে।
Piajets 4 Theory of Cognitive Development l পিঁয়াজের জ্ঞানমূলক বিকাশের তত্ত্ব
Table of Contents
পিঁয়াজের ধারণা(Piaget’s Concept):
সুইস জৈব বিশারদ পিঁয়াজে তার জ্ঞানমূলক বিকাশের তত্ত্ব গঠনে চিন্তাবিদ হারবার্ট স্পেনসার এবং ডারউইনের সভিব্যক্তিবাদের(Theory of Evaluation)দ্বারা প্রভাবিত হন। তিনি তাঁর তথ্য গঠনের দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গের সমন্বয়ে ঘটিয়েছেন।
পিঁয়াজের তত্ত্বের ভিত্তি (Basis of Piaget’s Theory):
1. দার্শনিক ভিত্তি: জ্ঞান মানুষের আবিষ্কৃত। জ্ঞান মানুষের জন্মগত সংগঠনের মধ্যে থাকে না।
2. জৈবিক ভিত্তি: জন্মগতভাবে মানুষের দুটি বৈশিষ্ট্য থাকে- 1. তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার ক্ষমতা যা বংশগতির ধারায় প্রাপ্ত জৈবিক প্রতিক্রিয়া। এর সাহায্যে শিশু পূর্ব নির্ধারিত পদ্ধতিতে পরিবেশের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করে। 2. স্বতঃস্ফূর্তভাবে পরিবেশের সঙ্গে প্রতিক্রিয়াকরণ। এই জৈবিক সক্রিয়তার দুটি উপাদান হলো আত্তীকরণ ও সহযোজন।
শিশুর জ্ঞানমূলক বিকাশের স্তর সমূহ (Stages of intellectual development in children):
1. সংবেদন সঞ্চালন মূলক স্তর(Sensory motor stage) 0-2 বছর:
বৈশিষ্ট্য: 1. দেহ সঞ্চালন ও ইন্দ্রিয়ের ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশের সঙ্গে প্রতিক্রিয়াকরণ, 2. আত্মকেন্দ্রিকতা, 3. বস্তুর স্থায়িত্ব সম্পর্কে বোধ না থাকা।
2. প্রাক্ সক্রিয়তা স্তর(Pre-operational stage) 2-7 বছর:
বৈশিষ্ট্য: 1. বস্তুকে তাদের নামের মাধ্যমে সনাক্ত করতে পারে এবং তাদের একই শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। 2.সর্বপ্রাণবাদ, 3. বিলম্বিত অনুকরণ-পূর্বে প্রত্যক্ষ করা কাজকে শিশুরা অনুকরণ করতে পারে, 4. রূপক অভিনয়-ঘুমিয়ে পড়ার ভান, নিজেকে অন্য কিছু ভাবা। 5.অঙ্কন-নিজেদের কল্পনা গুলিকে অঙ্কনের মাধ্যমে রূপ দেয়।
3. মূর্ত সক্রিয়তা স্তর(Concrete operational stage) 7-11 বছর:
বৈশিষ্ট্য: 1. যুক্তিপূর্ণ চিন্তাভাবনা, 2. শ্রেণীকরণের ধারণা, 3. সংরক্ষণের ধারণা, 4. সংখ্যার ধারণা, 5. ক্রমপর্যায়, 6. প্রজ্ঞা সক্রিয়তা কগনিটিভ অপারেশন।
4. যৌগিক সক্রিয়তা স্তর(Formal operational stage) 11-18 বছর:
বৈশিষ্ট্য: 1. বিমুর্ত চিন্তন ক্ষমতা, 2. ভবিষ্যৎ সম্পর্কে চিন্তা, 3. প্রকল্প গঠন, 4. সম্ভাবনা নির্ণয়, 5. কার্য-কারণ ব্যাখ্যা, 6. গ্রুপ অপারেশন।
শিক্ষাগত তাৎপর্য (Educational implications):
1. সমস্যাভিত্তিক শিখন: শিখনের উদ্দেশ্য কেবলমাত্র তথ্য সরবরাহ নয়, যুক্তির দ্বারা তথ্য গ্রহণের সহায়তা করা। তাই চিন্তন ও সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় করে তুলতে হবে।
2. মানসিক সক্রিয়তা: শিক্ষার্থীদের দৈহিক দিক থেকে সক্রিয় করে তোলার পাশাপাশি মানসিক দিক থেকে সক্রিয় করে তুলতে হবে।
3. জীবন বিকাশের স্তরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পাঠ্যক্রম নির্বাচন করতে হবে।
4. আধুনিক শিক্ষণ পদ্ধতি, বিশেষ করে শিক্ষণ মডেল, পিঁয়াজের তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।
পিঁয়াজের জ্ঞানমূলক বিকাশের তত্ত্ব:
1. জ্ঞানমূলক বিকাশ হল মানসিক ক্ষমতা ও সামর্থ্যের বিকাশ যা ব্যক্তিকে সদা পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলতে সাহায্য করে।
2. জ্ঞানমূলক বিকাশের বৈশিষ্ট্য:
• জন্ম থেকে শুরু হয়।
• বছরে বছরে পরিবর্তিত হয়।
• উপযুক্ত পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়।
• শিখনের ওপর নির্ভরশীল।
3. জ্ঞানমূলক বিকাশ প্রক্রিয়ার অন্তর্গত বিষয় সমূহ:
• সংবেদন ও প্রত্যক্ষণ।
• ধারণা গঠন।
• ভাষার বিকাশ।
• স্মৃতির বিকাশ।
• বুদ্ধির বিকাশ।
• চিন্তার বিকাশ।
• সমস্যা সমাধান ক্ষমতার বিকাশ।
4. জ্ঞানমূলক বা প্রজ্ঞামূলক বিকাশের জন্য দায়ী প্রক্রিয়াসমূহ:
• পরিনমন:- শারীরিক বিকাশ, পেশি ও স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশ।
• অভিজ্ঞতা:- প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জন, ব্যবহারের মাধ্যমে বস্তু সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন, সামাজিক মিথস্ক্রিয়া, ভারসাম্য।
5. শিশুর জ্ঞানমূলক বিকাশের সূচনা হয় স্পর্শ, দর্শন, স্বাদ ইত্যাদি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে।
6. জীবন বিকাশের সৃজনাত্মক তত্ত্বের(Constructive Theory) প্রবক্তা হলেন পিঁয়াজে ও কোহলবার্গ।
7. ব্যক্তির নিজস্ব সংগঠন ও পরিবেশের উদ্দীপনার মধ্যে পারস্পরিক ক্রিয়ার দরুন ব্যক্তিজীবনের জ্ঞানমূলক বিকাশ ঘটে থাকে।
8. কোনো মুহূর্তে অর্জিত তথ্য সমূহের একক সংগঠন হলো স্কিমা।
9. জন্মগত স্কিমা হল- চোষন করা, দর্শন,স্পর্শ, আঁকড়ে ধরে রাখা।
10. স্কিমা সম্প্রসারণে দুটি প্রক্রিয়া সক্রিয় হয়- অভিযোজন(adaptation) ও সাংগঠনিকরণ(organisation)।
11. অভিযোজন দুটি প্রক্রিয়ার সমন্বয়- আত্তীকরণ(assimilation) ও সহযোজন (accomodation)।
12. আত্তীকরণ হলো প্রাণীর আত্মসংরক্ষণ প্রবণতা।
13. আত্তীকরণ হল স্কিমা সংগঠনের মধ্যে নতুন তথ্য, চিন্তা ধারণা বা ভাবের সংযোজন।
14. সহযোজন হল নতুন তথ্য, চিন্তা, ভাব ইত্যাদি প্রয়োজন মত পরিবর্তন করে স্কিমার মধ্যে যুক্ত করা বা বর্তমান স্কিমার(existing schema) পরিবর্তন।
15. সহযোজন হলো প্রাণীর আচরণ পরিবর্তনের প্রক্রিয়া।
16. শুদ্ধ সহযোজন প্রক্রিয়া হলো অনুকরণ(imitation)।
17. অভিযোজন হল আত্তীকরণ ও সহযোজনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান।
18. স্কিমা সম্প্রসারিত হয়ে জটিল কাজ করলে তাকে বলে সাংগঠনিকরণ।
19. আঁকড়ে ধরে রাখা (grasping) স্কিমা সম্প্রসারিত হলে শিশু বইয়ের পাতা ধরে উল্টাতে পারে।
20. শিশু যে ধারণাগুলির সাহায্যে সক্রিয় চিন্তন করে থাকে তাদের অপারেশন (সক্রিয়তা) বলা হয়।
21. তিনটি মুখ্য অপারেশন হলো- শ্রেণী, সম্পর্ক এবং সংখ্যা।
22. প্রজ্ঞা সক্রিয়তা (cognitive operation): সংরক্ষণ, ক্রম নির্ণয়, শ্রেণীকরণ এবং সংখ্যার ধারণা-এই অপারেশনগুলি সংঘটিত হয়ে ভারসাম্য তৈরি করে। একে পিঁয়াজে প্রজ্ঞা সক্রিয়তা বলেছেন।
23. যৌক্তিক বা নিয়ম তান্ত্রিক সক্রিয়তা স্তরের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো:- প্রকল্প ভিত্তিক অবরোহী চিন্তন। এ স্তরে ব্যক্তি সম্ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তি সংগ্রহ করে।
24. পিঁয়াজের জ্ঞানমূলক বিকাশের স্তর সংখ্যা হল চারটি।
25. জেনেটিক এপিসটেমোলজিস্ট- ব্যক্তির বিকাশের সঙ্গে জ্ঞানের বিকাশের সম্পর্ক অনুসন্ধানে আগ্রহ প্রকাশকারী।