Bengali alphabet at a glance for all competitive exams: বাংলা ভাষার মৌলিক ভিত্তি হলো বাংলা বর্ণমালা। বাংলা বর্ণমালার সঠিক জ্ঞান যে কোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার (যেমন WBCS, PSC, TET, Railways, SSC, এবং অন্যান্য সরকারি চাকরির পরীক্ষা) জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাকরণের ভিত্তি থেকে শুরু করে বানান ও উচ্চারণগত নিয়ম পর্যন্ত বর্ণমালার বিশদ ধারণা পরীক্ষায় ভালো ফল করতে সহায়তা করে।
এই ব্লগে আমরা বাংলা বর্ণমালার গঠন, স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ, যুক্তাক্ষর, উচ্চারণ নিয়ম, এবং বানানের গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে আলোচনা করব। সহজ ও সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনার মাধ্যমে আমরা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরব, যা আপনাকে প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে।
চলুন, বাংলা ভাষার মূল কাঠামোকে আরও ভালোভাবে জানার যাত্রা শুরু করা যাক! ✍️📖
⇨ মোট বর্ণ আছে ৫০টি।
⇨ স্বরবর্ণ ১১টি (হ্রস্ব স্বর ৪টি + দীর্ঘ স্বর ৭টি)
⇨ ব্যঞ্জণবর্ণ ৩৯টি (প্রকৃত ৩৫টি + অপ্রকৃত ৪টি)।
⇨ স্পর্শধ্বনি/বর্গীয় ধ্বনি আছে ২৫টি (ক থেকে ম পর্যন্ত)।
⇨ পূর্ণমাত্রাযুক্ত বর্ণ আছে ৩২টি (স্বরবর্ণ ৬টি + ব্যঞ্জণবর্ণ ২৬টি)।
⇨ অর্ধমাত্রাযুক্ত বর্ণ আছে ৮টি (স্বরবর্ণ ১টি + ব্যঞ্জণবর্ণ ৭টি)।
⇨ মাত্রাহীন বর্ণ আছে ১০টি (স্বরবর্ণ ৬টি + ব্যঞ্জণবর্ণ ৪টি), অ আ ই ঈ উ ঊ ঋ এ ঐ ও ঔ কার আছে এমন স্বরবর্ণ ১০টি (‘অ’ ছাড়া)।
⇨ ফলা আছে এমন ব্যঞ্জণবর্ণ ৫টি (ম, ন, ব, য,র)।
⇨ মূর্ধন্য/পশ্চাৎদন্ত্যমূলীয় ধ্বনি আছে ৯টি (‘ট’ বর্গীয় ধ্বনি + ষ, র, ড়, ঢ়)।
⇨ দন্ত্য ধ্বনি আছে ৭টি (‘ত’ বর্গীয় ধ্বনি + স, ল)।
⇨ অঘোষ ধ্বনি আছে ১৪টি (প্রতি বর্গের ১ম ও ২য় ধ্বনি + ঃ, শ, ষ, স)।
⇨ ঘোষ ধ্বনি আছে ১১টি (প্রতি বর্গের ৩য় ও ৪র্থ ধ্বনি + হ)।
⇨ অল্পপ্রাণ ধ্বনি আছে ১৩টি (প্রতি বর্গের ১ম ও ৩য় ধ্বনি + শ, ষ, স)।
মহাপ্রাণ ধ্বনি আছে ১১টি (প্রতি বর্গের ২য় ও ৪র্থ ধ্বনি + হ)।
⇨ নাসিক্য/অনুনাসিক ধ্বনি আছে ৮টি (প্রতি বর্গের ৫ম ধ্বনি + ং, ঁ, ও)।
⇨ উষ্ম/শিস ধ্বনি ৪টি (শ, ষ, স, হ)।
⇨ অন্তঃস্থ ধ্বনি ৪টি (ব, য, র, ল)।
⇨ পার্শ্বিক ধ্বনি ১টি (ল)।
⇨ কম্পনজাত ধ্বনি ১টি (র)।
⇨ তাড়নজাত ধ্বনি ২টি (ড়, ঢ়)।
⇨ পরাশ্রয়ী ধ্বনি ৩টি (ং, ঃ, ঁ)।
⇨ যৌগিক স্বরজ্ঞাপক ধ্বনি ২টি (ঐ, ঔ)।
⇨ যৌগিক স্বরধ্বনি ২৫টি।
⇨ ব্যঞ্জণ ধ্বনি ১টি (ৎ)।
⇨ অর্ধস্বর ২টি (য, ব)।
এই দুটি স্বরধ্বনিকে দ্বিস্বর বা যুগ্ম স্বরধ্বনি বলে। কারণ, এই দুটি মূলত ২টি স্বরধ্বনির মিশ্রণ। যেমন- অ+ই = ঐ, অ+উ = ঔ বা ও+উ = ঔ। অর্থাৎ, বাংলা ভাষায় মৌলিক স্বরধ্বনি মূলত ৯টি।
۞ বর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপ ; কার ও ফলা :
প্রতিটি স্বরবর্ণ ও কিছু কিছু ব্যঞ্জনবর্ণ দুটো রূপে ব্যবহৃত হয়। প্রথমত, স্বাধীনভাবে শব্দের মাঝে ব্যবহৃত হয়। আবার অনেক সময় অন্য কোন বর্ণে যুক্ত হয়ে সংক্ষিপ্ত রূপে বা আশ্রিত রূপেও ব্যবহৃত হয়। যেমন, ‘আ’ বর্ণটি ‘আমার’ শব্দের স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, আবার ‘ম’-র সঙ্গে আশ্রিত হয়ে সংক্ষিপ্ত রূপেও (া ) ব্যবহৃত হয়েছে। স্বরবর্ণের এই আশ্রিত সংক্ষিপ্ত রূপকে বলে কার, আর ব্যঞ্জনবর্ণের আশ্রিত সংক্ষিপ্ত রূপকে বলে ফলা। উপরে ‘আমার’ শব্দে ‘ম’-র সঙ্গে যুক্ত ‘আ’-র সংক্ষিপ্ত রূপটিকে (া ) বলা হয় আ-কার। এমনিভাবে ই-কার ( ি), ঈ-কার ( ী ), উ- কার ( ু ), ঊ-কার ( ূ ), ঋ-কার (ৃ ), এ-কার ( ে ), ঐ-কার ( ৈ ), ও-কার ( ো), ঔ- কার ৌ) কার। তবে ‘অ’ এর কোন কার নেই। আবার আম্র শব্দে ‘ম’-র সঙ্গে ‘র’ সংক্ষিপ্ত রূপে বা ফলা যুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ সংক্ষিপ্ত রূপটি র-ফলা। এরকম ম- ফলা , ল-ফলা , ব-ফলা , ইত্যাদি।
★ যৌগিক স্বরধ্বনি : পাশাপাশি দুটি স্বরধ্বনি থাকলে তারা উচ্চারণের সময় সাধারণত একটি স্বরধ্বনি রূপে উচ্চারিত হয়ে থাকে। পাশাপাশি দুটি স্বরধ্বনি একটি স্বরধ্বনি রূপে উচ্চারিত হলে মিলিত স্বরধ্বনিটিকে বলা হয় যৌগিক স্বর, সন্ধিস্বর, সান্ধ্যক্ষর বা দ্বি-স্বর। বাংলা ভাষায় যৌগিক স্বর মোট ২৫টি। তবে যৌগিক স্বরবর্ণ মাত্র ২টি- ঐ, ঔ। অন্য যৌগিক স্বরধ্বনিগুলোর নিজস্ব প্রতীক বা বর্ণ নেই। উচ্চারণ অনুযায়ী ব্যঞ্জনধ্বনিগুলো অনেকগুলো ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
★ স্পর্শ ব্যঞ্জন : ক থেকে ম পর্যন্ত প্রথম ২৫ টি ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারিত হওয়ার সময় ফুসফুস থেকে বের হওয়া বাতাস মুখগহবরের কোন না কোন জায়গা স্পর্শ করে যায়। এজন্য এই ২৫টি বর্ণকে বলা হয় স্পর্শধ্বনি বা স্পৃষ্টধ্বনি।
★ অল্পপ্রাণ ও মহাপ্রাণ ধ্বনি : যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় নিঃশ্বাস জোরে সংযোজিত হয় বা ফুসফুস থেকে বের হওয়া বাতাসের জোর বেশি থাকে, তাকে মহাপ্রাণ ধ্বনি বলে। আর যে ধ্বনিগুলোতে বাতাসের জোর কম থাকে, নিঃশ্বাস জোরে সংযোজিত হয় না, তাদেরকে মহাপ্রাণ ধ্বনি বলে। ক, গ, চ, জ- এগুলো অল্পপ্রাণ ধ্বনি। আর খ, ঘ, ছ, ঝ- এগুলো মহাপ্রাণ ধ্বনি।
★ ঘোষ ও অঘোষ ধ্বনি : যে সকল ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রী অনুরণিত হয়, অর্থাৎ গলার মাঝখানের উঁচু অংশে হাত দিলে কম্পন অনুভূত হয়, তাদেরকে ঘোষ ধ্বনি বলে। আর যে সব ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রী অনুরণিত হয় না, তাদেরকে অঘোষ ধ্বনি বলে। যেমন, ক, খ, চ, ছ- এগুলো অঘোষ ধ্বনি। আর গ, ঘ, জ, ঝ- এগুলো ঘোষ ধ্বনি।
★ উষ্মধ্বনি বা শিশধ্বনি : শ, ষ, স, হ- এই চারটি ধ্বনি উচ্চারণের শেষে যতক্ষণ ইচ্ছা শ্বাস ধরে রাখা যায়, বা শিশ্ দেয়ার মতো করে উচ্চারণ করা যায়। এজন্য এই চারটি ধ্বনিকে বলা হয় উষ্মধ্বনি বা শিশধ্বনি। এগুলোর মধ্যে শ, ষ, স- অঘোষ অল্পপ্রাণ, হ- ঘোষ মহাপ্রাণ।
★ ঃ (বিসর্গ) : অঘোষ ‘হ’-র উচ্চারণে প্রাপ্ত ধ্বনিই হলো ‘ঃ’। বাংলায় একমাত্র বিস্ময়সূচক অব্যয়ের শেষে বিসর্গ ধ্বনি পাওয়া যায়। পদের মধ্যে ‘ঃ’ বর্ণটি থাকলে পরবর্তী ব্যঞ্জনের উচ্চারণ দুইবার হয়, কিন্তু ‘ঃ’ ধ্বনির উচ্চারণ হয় না।
★ কম্পনজাত ধ্বনি- র : ‘র’ ধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহবার অগ্রভাগ কম্পিত হয়, বা কাঁপে এবং দন্তমূলকে কয়েকবার আঘাত করে ‘র’ উচ্চারিত হয়। এজন্য ‘র’-কে বলা হয় কম্পনজাত ধ্বনি।
★ তাড়নজাত ধ্বনি- ড় ও ঢ় : ‘ড়’ ও ‘ঢ়’ উচ্চারণের সময় জিহবার অগ্রভাগের নিচের দিক বা তলদেশ ওপরের দাঁতের মাথায় বা দন্তমূলে দ্রচত আঘাত করে বা তাড়না করে উচ্চারিত হয়। এজন্য এদেরকে তাড়নাজাত ধ্বনি বলে। মূলত ‘ড’ ও ‘র’ দ্রচত উচ্চারণ করলে যে মিলিত রূপ পাওয়া যায় তাই ‘ড়’ এর উচ্চারণ। একইভাবে ‘ঢ়’, ‘ঢ’ ও ‘র’-এর মিলিত উচ্চারণ।
★ পার্শ্বিক ধ্বনি- ল : ‘ল’ উচ্চারণের সময় জিহবার অগ্রভাগ উপরের দাঁতের মাথায় বা দন্তমূলে ঠেকিয়ে জিহবার দু’পাশ দিয়ে বাতাস বের করে দেয়া হয়। দু’পাশ দিয়ে বাতাস বের হয় বলে একে পার্শ্বিক ধ্বনি বলে।
★ আনুনাসিক বা নাসিক্য ধ্বনি : ঙ, ঞ, ণ, ন, ম- এদের উচ্চারণের সময় এবং ং, ঁ কোন ধ্বনির সঙ্গে থাকলে তাদের উচ্চারণের সময় মুখ দিয়ে বাতাস বের হওয়ার সময় কিছু বাতাস নাক দিয়ে বা নাসারন্ধ্র দিয়েও বের হয়। উচ্চারণ করতে নাক বা নাসিক্যের প্রয়োজন হয় বলে এগুলোকে বলা হয় আনুনাসিক বা নাসিক্য ধ্বনি।
★ পরাশ্রয়ী বর্ণ : ং,ঃ,ঁ – এই ৩টি বর্ণ যে ধ্বনি নির্দেশ করে তারা কখনো স্বাধীন ধ্বনি হিসেবে শব্দে ব্যবহৃত হয় না। এই ধ্বনিগুলো অন্য ধ্বনি উচ্চারণের সময় সেই ধ্বনির সঙ্গে মিলিত হয়ে উচ্চারিত হয়। নির্দেশিত ধ্বনি নিজে নিজে উচ্চারিত না হয়ে পরের উপর আশ্রয় করে উচ্চারিত হয় বলে এই বর্ণগুলোকে পরাশ্রয়ী বর্ণ বলে।
★ অন্তঃস্থ ধ্বনি : য, র, ল, ব- এদেরকে অন্তঃস্থ ধ্বনি বলা হয়। তবে অন্তঃস্থ ‘ব’ এখন আর বর্ণমালায় নেই, এবং এখন আর এটি শব্দে স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত হয় না। তবে ব্যাকরণের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিশেষত সন্ধিতে এর প্রয়োগ দেখা যায়।
۞ কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ যুক্তবর্ণ:
1) ক+ত = ক্ত, 2) জ+ঞ = জ্ঞ, 3) ত+ত = ত্ত, 4) ন+থ = ন্থ, 5) র+উ = রু, 6) ষ+ম = ষ্ম, 7) হ+উ = হু, 8) ক+ষ = ক্ষ, 9) ঞ+জ = ঞ্জ, 10) ত+থ = ত্থ, 11) ন+ধ = ন্ধ, 12) র+ঊ = রূ, 13) ষ+ণ = ষ্ণ, 14) হ+ঋ = হৃ, 15) ক+য = ক্য, 16) ঞ+চ = ঞচ, 17) ত+ম = ত্ম, 18) র+ধ = র্ধ, 19) স+র = স্র, 20) হ+ব = হ্ব, 21) ক+র = ক্র, 22) ঞ+ছ = ঞ্ছ, 23) ত+র = ত্র, 24) ব+ধ = ব্ধ, 25) ল+ল = ল্ল, 26) স+ন = স্ন, 27) হ+ণ = হ্ণ, 28) গ+উ = গু, 29) ট+ট = ট্ট, 30) ত+র+উ = ত্রু, 31) ভ+র = ভ্র, 32) স+ব = স্ব, 33) হ+ন = হ্ন, 34) ঙ+গ = ঙ্গ, 35) ণ+ড = ণ্ড, 36) দ+য = দ্য, 37) ভ+র+উ = ভ্রু, 38) শ+উ = শু, 39) স+ত = স্ত, 40) হ+ম = হ্ম, 41) ঙ+ক = ঙ্ক, 42) দ+ম = দ্ম, 43) ম+ব = ম্ব, 44) শ +র+উ = শ্রু, 45) স+য = স্য, 46) দ+ধ = দ্ধ, 47) শ+র+ঊ = শ্রূ, 48) স+থ = স্থ।