Madhyamik 2026 History Chapter 3: মাধ্যমিক ইতিহাস ২০২৬ পরীক্ষার্থীদের জন্য অধ্যায় ৩ – “প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ” (Madhyamik 2026 History Chapter 3) একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই অধ্যায়ে ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে স্থানীয় জনগণের প্রতিরোধ, বিভিন্ন বিদ্রোহ এবং তাদের প্রভাব বিশ্লেষণ করা হয়। এই বিষয়টি ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হলে প্রয়োজন অধ্যায়ের নির্ভুল ব্যাখ্যা, বহুনির্বাচনি (MCQ), সংক্ষিপ্ত (SAQ), ও রচনামূলক (LAQ) প্রশ্নোত্তরের সঠিক অনুশীলন।
এই ব্লগে আমরা আলোচনা করবো –
- মাধ্যমিক ইতিহাস ২০২৬ এর সিলেবাস অনুযায়ী অধ্যায় ভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর,
- অধ্যায় ৩: প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ এর সকল ধরণের প্রশ্নের বিশ্লেষণ (MCQ, SAQ, LAQ),
- Class 10 History Bengali Q&A সহ একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতির গাইড,
- Madhyamik 2026 History suggestion, Chapter 3 History Madhyamik, এবং
- মাধ্যমিক ইতিহাস অধ্যায় ৩ সাজেশন ও নোটস।
এই পোস্টটি যারা ইতিহাস প্রশ্নোত্তর বাংলা মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ইতিহাস অধ্যায় ৩ প্রস্তুতি, অথবা Madhyamik History Chapter-wise preparation খুঁজছেন – তাদের জন্য বিশেষভাবে সহায়ক।
✅ চলুন শুরু করি আজকের অধ্যায়ভিত্তিক প্রস্তুতি!
Madhyamik 2026 History Chapter 3 l মাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ MCQ প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik History Protirodh o Bidroho Question and Answer
Table of Contents
- ‘ বিপ্লব ‘ কথার অর্থ হল –
(A) ধীর পরিবর্তন
(B) আমূল পরিবর্তন
(C) পরিবর্তন
(D) কোনোটিই নয়
Ans: (B) আমূল পরিবর্তন
- ‘ আরণ্যক ‘ আদিবাসীদের বিদ্রোহকে ‘ অশান্ত অরণ্য জীবন ‘ বলেছেন –
(A) দীপেশ চক্রবর্তী
(B) জ্ঞান পাণ্ডে
(C) রামচন্দ্র গুহ
(D) গৌতম ভদ্র
Ans: (C) রামচন্দ্র গুহ
- ভারতবর্ষের বনজ সম্পদের ওপরে ব্রিটিশদের নজর পড়ে—
(A) ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে
(B) ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে
(C) ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে
(D) ১৮০৮ খ্রিস্টাব্দে
Ans: (C) ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে
- লর্ড কর্নওয়ালিশ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেন –
(A) ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দে
(B) ১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দে
(C) ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে
(D) ১৭৯৭ খ্রিস্টাব্দে
Ans: (C) ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে
- ব্রিটিশ সরকার ‘ অরণ্য আইন ‘ জারি করে –
(A) ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে
(B) ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে
(C) ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে
(D) ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে
Ans: (B) ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে
- ভারতে প্রথম অরণ্য আইন পাস হয় –
(A) ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে
(B) ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে
(C) ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে
(D) ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে
Ans: (B) ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে
- ১৮৬৫ সালের ‘ অরণ্য আইন’কে জোরদার করা হয় –
(A) ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে
(B) ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে
(C) ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে
(D) ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে
Ans: (D) ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে
- ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ অরণ্যের ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ আইন প্রবর্তন করেন –
(A) ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে
(B) ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে
(C) ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে
(D) ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে
Ans: (A) ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে
- ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দের অরণ্য আইনে অরণ্যকে ভাগ করা হয় –
(A) দুটি স্তরে
(B) চারটি স্তরে
(C) তিনটি স্তরে
(D) পাঁচটি স্তরে
Ans: (C) তিনটি স্তরে
- ‘ সংরক্ষিত ‘ বনভূমি ছিল—
(A) সরকারের অধীনে
(B) ব্যবসায়ীদের অধীনে
(C) উপজাতিদের অধীনে
(D) প্রহরীদের অধীনে
Ans: (A) সরকারের অধীনে
- ১৯০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সরকারের অধীনে চলে আসে
বনভূমির—
(A) ২০ শতাংশ
(B) ৬০ শতাংশ
(C) ৪০ শতাংশ
(D) ৮০ শতাংশ
Ans: (A) ২০ শতাংশ
- ব্রিটিশ সরকার কাকে প্রথম ভারতের অরণ্য অঞ্চ পরিচালনার জন্য নিযুক্ত করেন ?
(A) জর্জ এভারেস্ট
(B) ডেইট্রিক ব্রান্ডিস
(C) জেমস ক্লার্ক
(D) ডবলিউ হান্টার
Ans: (B) ডেইট্রিক ব্রান্ডিস
- চুয়াড়রা মূলত বাস করত বাংলার –
(A) মেদিনীপুর ও বাঁকুড়া জেলায়
(B) দিনাজপুর জেলায়
(C) মালদহ জেলায়
(D) নদিয়া জেলার জঙ্গলমহলে
Ans: (A) মেদিনীপুর ও বাঁকুড়া জেলায়
- ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনকালে বাংলায় প্রথম আদিবাসী বিদ্রোহ ছিল –
(A) কোল বিদ্রোহ
(B) রংপুর বিদ্রোহ
(C) ভিল বিদ্রোহ
(D) চুয়াড় বিদ্রোহ
Ans: (D) চুয়াড় বিদ্রোহ
- দুর্জন সিং ছিলেন –
(A) কোল বিদ্রোহের নেতা
(B) সাঁওতাল বিদ্রোহের নেতা
(C) মুন্ডা বিদ্রোহের নেতা
(D) চুয়াড় বিদ্রোহের নেতা
Ans: (D) চুয়াড় বিদ্রোহের নেতা
- পাইকের কাজ করার বিনিময়ে চুয়াড়রা যে জমি ভোগ করত তার নাম –
(A) খাস জমি
(B) নিলামি জমি
(C) তালুক জমি
(D) পাইকান জমি
Ans: (D) পাইকান জমি
- চুয়াড় বিদ্রোহ কটি ভাগে বিভক্ত ছিল ?
(A) ২ টি ভাগে
(B) ৪ টি ভাগে
(C) ৬ টি ভাগে
(D) ৭ টি ভাগে
Ans: (A) ২ টি ভাগে
- চুয়াড় বিদ্রোহের প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হয় –
(A) ১৭৬৬-৬৭ খ্রিস্টাব্দে
(B) ১৭৬৭- ৬৮ খ্রিস্টাব্দে
(C) ১৭৬৮-৬৯ খ্রিস্টাব্দে
(D) ১৭৬৯-৭০ খ্রিস্টাব্দে
Ans: (A) ১৭৬৬-৬৭ খ্রিস্টাব্দে
- দ্বিতীয় পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহ চলেছিল –
(A) ৩ বছর ধরে
(B) ৬ বছর ধরে
(C) ২ বছর ধরে
(D) ৫ বছর ধরে
Ans: (C) ২ বছর ধরে
- ধাদকার শ্যামগঞ্জ ছিলেন –
(A) মুন্ডা বিদ্রোহের নেতা
(B) চুয়াড় বিদ্রোহের নেতা
(C) সাঁওতাল বিদ্রোহের নেতা
(D) নীল বিদ্রোহের নেতা
Ans: (B) চুয়াড় বিদ্রোহের নেতা
[আরোও দেখুন:- Madhyamik History Suggestion 2026 Click here]
- রানি শিরোমণি ছিলেন –
(A) মেদিনীপুর জেলার রানি
(B) নলহাটির রানি
(C) সুবর্ণগড়ের রানি
(D) কর্ণগড়ের রানি
Ans: (A) মেদিনীপুর জেলার রানি
- ‘ পাইক ‘ সৈনিক গোষ্ঠী যে বিদ্রোহে যুক্ত ছিল—
(A) চুয়াড় বিদ্রোহে
(B) কোল বিদ্রোহে
(C) সাঁওতাল বিদ্রোহে
(D) মুন্ডা বিদ্রোহে
Ans: (A) চুয়াড় বিদ্রোহে
- মেদিনীপুরের চুয়াড় অধ্যুষিত অঞ্চলকে বলা হত –
(A) চুয়াড়মহল
(B) জলমহল
(C) খাসমহল
(D) জঙ্গলমহল
Ans: (D) জঙ্গলমহল
- ‘ দিকু ‘ কথার অর্থ –
(A) স্বদেশি ব্যবসায়ী
(B) নীল ব্যবসায়ী
(C) ব্রিটিশ ব্যবসায়ী
(D) বহিরাগত ব্যবসায়ী
Ans: (D) বহিরাগত ব্যবসায়ী
- ব্র্যাডলে বার্টের মতে , মহাজনরা সাঁওতালদের যে স্তরে নামিয়ে এনেছিল –
(A) ক্রীতদাসের স্তরে
(B) শ্রমিকের স্তরে
(C) মজুরদের স্তরে
(D) ভৃত্যের স্তরে
Ans: (A) ক্রীতদাসের স্তরে
- বাঙালি ব্যবসায়ীরা সাঁওতালদের উৎপাদিত ফসল কিনত –
(A) ন্যায্য দরে
(B) অতিরিক্ত দরে
(C) বাজার দরেl
(D) সস্তা দরে
Ans: (D) সস্তা দরে
- ১৮৫১ সালে কোম্পানি বছরে ‘ দামিন – ই – কোহ ‘ থেকে রাজস্ব আদায় করে –
(A) ২২,০০০ টাকা
(B) ৪৪,০০০ টাকা
(C) ৩৩,০০০ টাকা
(D) ৫৫,০০০ টাকা
Ans: (B) ৪৪,০০০ টাকা
- আদিবাসীরা বহিরাগত ব্যবসায়ীদের বলত –
(A) ইজারাদার
(B) সাউকার
(C) বেনিয়া
(D) দিকু
Ans: (D) দিকু
- সাঁওতাল বিদ্রোহ শুরু হয় –
(A) ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে
(B) ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে
(C) ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে
(D) ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে
Ans: (B) ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে
- সাঁওতাল বিদ্রোহের একজন নেতা হলেন –
(A) কালো প্রামাণিক
(B) চিমনজি যাদব
(C) দুর্জন সিংহ
(D) বীরসা মুন্ডা
Ans: (A) কালো প্রামাণিক
- সিধু ও কানহ ছিলেন—
(A) দুই ভাই
(B) কাকা – ভাইপো
(C) পিতা – পুত্র
(D) মামা – ভাগনে
Ans: (A) দুই ভাই
- সাঁওতাল বিদ্রোহের পর তৈরি হয় –
(A) উত্তর ২৪ পরগনা
(B) দক্ষিণ ২৪ পরগনা
(C) সাঁওতাল পরগনা
(D) কোনোটিই নয়
Ans: (C) সাঁওতাল পরগনা
- সাঁওতাল বিদ্রোহের ঘটনার কথা লেখা আছে—
(A) ‘ লাল মাটি ‘ উপন্যাসে
(B) ‘ আরণ্যক ‘ উপন্যাসে
(C) ‘ গণদেবতা ‘ উপন্যাসে
(D) ” ঋজুদার সাথে জঙ্গলে ‘ নামক উপন্যাসে ”
Ans: (B) ‘ আরণ্যক ‘ উপন্যাসে
- The Santal Insurrection of 1855-57 ‘ গ্রন্থটির লেখক –
(A) কালীকিঙ্কর দত্ত
(B) রমেশচন্দ্র মজুমদার
(C) বীরেন্দ্রনাথ বাস্কে
(D) রমেশচন্দ্র দত্ত
Ans: (A) কালীকিঙ্কর দত্ত
- সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রেক্ষাপট তৈরি হয় –
(A) অত্যাচারী মহাজনদেরকে আক্রমণের মাধ্যমে
(B) পুলিশ হত্যা করে
(C) জমিদারদের কাছারি বাড়ি আক্রমণ করে
(D) খাদ্যসামগ্রী লুঠ বা ডাকাতির মাধ্যমে
Ans: D) খাদ্যসামগ্রী লুঠ বা ডাকাতির মাধ্যমে
- ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে সিধু ও কার নেতৃত্বে দশ হাজারেরও বেশি মানুষ সমবেত হয়েছিল –
(A) গড়ের মাঠে
(B) ভাগনাডিহির মাঠে
(C) সাঁওতাল পরগনার মাঠে
(D) মানভূমের মাঠে
Ans: B) ভাগনাডিহির মাঠে
- ভাগনা মাঝির বিশ্বাসঘাতকতায় ধরা পড়ে –
(A) সিধু
(B) চাঁদ ও ভৈরব
(C) ডোমন মাঝি
(D) কানহূ
Ans: (A) সিধু
- ‘ হুল ‘ শব্দের অর্থ –
(A) বিক্ষোভ
(B) বিপ্লব
(C) বিদ্রোহ
(D) অভ্যুত্থান
Ans: (C) বিদ্রোহ
- ‘ হুল ‘ হল –
(A) সাঁওতালদের জাতি সংগঠনের নাম
(B) একটি জনগোষ্ঠীর নাম
(C) অরণ্যের অধিবাসীদের সমাজের নাম
(D) সাঁওতালদের বিদ্রোহের নাম
Ans: (D) সাঁওতালদের বিদ্রোহের নাম
- ভাগনাডিহিতে যে বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল—
(A) ভিল বিদ্রোহের
(B) মোপলা বিদ্রোহের
(C) রংপুর বিদ্রোহের
(D) সাঁওতাল বিদ্রোহের
Ans: (D) সাঁওতাল বিদ্রোহের
- মহেশলাল দত্ত , যাঁকে সাঁওতালরা হত্যা করেছিলেন , তিনি ছিলেন একজন—
(A) জমিদার দারোগা
(B) মহাজন
(C) সেনানায়ক
(D) দারোগা
Ans: (D) দারোগা
- সাঁওতাল বিদ্রোহের সময় পাকুড়ে সাঁওতালদের নেতৃত্ব –
(A) কামাররা
(B) সিধু
(C) গোছ মাঝি
(D) কানু
Ans: C) গোছ মাঝি
- বিদ্রোহী সাঁওতালদের তথ্য সরবরাহ করত –
(A) কুমোররা
(B) কালো প্রামাণিক
(C) গোয়ালারা
(D) তেলিরা
Ans: (C) গোয়ালারা
- সাঁওতালরা গ্রাম লুঠ করে সেখানে –
(A) লাল রঙের কাপড় বেঁধে আসতেন
(B) চামড়া – বাঁধা বাঁশ পুঁতে আসতেন
(C) সেগুন গাছ লাগিয়ে আসতেন
(D) পরবর্তী লুঠের পোস্টার দিয়ে আসতেন
Ans: (B) চামড়া – বাঁধা বাঁশ পুঁতে আসতেন
- ডোমন মাঝি যে বিদ্রোহের নেতা ছিলেন—
(A) মুন্ডা বিদ্রোহের নেতা
(B) সাঁওতাল বিদ্রোহের নেতা
(C) কোল বিদ্রোহের নেতা
(D) ভিল বিদ্রোহের নেতা
Ans: (B) সাঁওতাল বিদ্রোহের নেতা
- কার যে ধরনের শাস্তি হয় , তা হল –
(A) গুলি করে হত্যা
(B) ফাঁসি
(C) দ্বীপান্তর
(D) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
Ans: (B) ফাঁসি
- ফ্রেডারিক হ্যাডলি ছিলেন বাংলার –
(A) বড়োলাট
(B) সেজোলাট
(C) মেজোলাট
(D) ছোটোলাট
Ans: (D) ছোটোলাট
- সাঁওতাল বিদ্রোহ ছিল একটি –
(A) কৃষক বিদ্রোহ
(B) শ্রমিক বিদ্রোহ
(C) সিপাহি বিদ্রোহ
(D) উপজাতি বিদ্রোহ
Ans: D) উপজাতি বিদ্রোহ
- সাঁওতালদের দমন করতে এসে পরাজিত হয়েছিলেন—
(A) লেফটেন্যান্ট ফার্গুসন
(B) মেজর বারোস
(C) ক্যাপটেন মর্গ্যান
(D) হ্যাভলক
Ans: (B) মেজর বারোস
- ভিল বিদ্রোহ সংঘটিত হয় –
(A) ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে
(B) ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে
(C) ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে
(D) ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে
Ans: (A) ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে
- ভাই উত্থান ছিলেন –
(A) কোল বিদ্রোহের নেতা
(B) সাঁওতাল বিদ্রোহের নেতা
(C) মুন্ডা বিদ্রোহের নেতা
(D) ভিল বিদ্রোহের নেতা
Ans: (D) ভিল বিদ্রোহের নেতা
- রংপুর বিদ্রোহ যার বিরুদ্ধে হয়েছিল –
(A) দেবী সিংহ
(B) অচল সিংহ
(C) মানসিংহ
(D) কালীপ্রসন্ন সিংহ
Ans: A) দেবী সিংহ
- রংপুর বিদ্রোহ হয়েছিল –
(A) ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে
(B) ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে
(C) ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দে
(D) ১৭৮৫ খ্রিস্টাব্দে
Ans: (C) ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দে
- নুরুলউদ্দিন কোন বিদ্রোহের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ?
(A) রংপুর বিদ্রোহ
(B) পাবনা বিদ্রোহ
(C) ফরাজি আন্দোলন
(D) ফকির বিদ্রোহ
Ans: (A) রংপুর বিদ্রোহ
- রংপুর বিদ্রোহের নেতা ছিলেন যিনি –
(A) সিউরাম
(B) ভবানী পাঠক
(B) নুরুলউদ্দিন
(C) মজনু শাহ
Ans: (B) নুরুলউদ্দিন
- বাংলাদেশের প্রথম কৃষক বিদ্রোহ ছিল –
(A) নীল বিদ্রোহ
(B) কোল বিদ্রোহ
(C) সন্ন্যাসী – ফকির বিদ্রোহ
(D) মুন্ডা বিদ্রোহ
Ans: C) সন্ন্যাসী – ফকির বিদ্রোহ
সন্ন্যাসী – ফকির বিদ্রোহ গ রংপুর বিদ্রোহ
- বঙ্কিমচন্দ্রের কোন উপন্যাসে সন্ন্যাসী – ফকির বিদ্রোহের প্রেক্ষিত আছে ?
(A) আনন্দমঠ
(B) দেবী চৌধুরানি
(C) দুর্গেশনন্দিনী
(D) বিষবৃক্ষ
Ans: A) আনন্দমঠ
- ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম সংঘবদ্ধ বিদ্রোহ ছিল –
(A) মুন্ডা বিদ্রোহ
(B) নীল বিদ্রোহ
(C) কোল বিদ্রোহ
(D) সন্ন্যাসী – ফকির বিদ্রোহ
Ans: (D) সন্ন্যাসী – ফকির বিদ্রোহ
- সন্ন্যাসী – ফকির বিদ্রোহ শুরু হয় ।
(A) ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে
(B) ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে
(C) ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে
(D) ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে
Ans: (B) ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে
- সন্ন্যাসী বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল –
(A) রাজশাহিতে
(B) খুলনাতে
(C) ঢাকায়
(D) চট্টগ্রামে
Ans: C) ঢাকায়
- সন্ন্যাসী বিদ্রোহের একজন বিখ্যাত নেতা ছিলেন –
(A) ভবানী পাঠক
(B) কালীচরণ
(C) বিরুচরণ বিশ্বাস
(D) বীরসা মুন্ডা
Ans: A) ভবানী পাঠক
- ‘ আনন্দমঠ ‘ উপন্যাসে যে বিদ্রোহের উল্লেখ আছে –
(A) ভিল বিদ্রোহের
(B) কোল বিদ্রোহের
(C) সন্ন্যাসী – ফকির বিদ্রোহের
(D) মুন্ডা বিদ্রোহের
Ans: C) সন্ন্যাসী – ফকির বিদ্রোহের
- সন্ন্যাসী বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন –
(A) নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ভুক্ত সন্ন্যাসীরা
(B) দশনামী সম্প্রদায়ভুক্ত সন্ন্যাসীরা
(C) উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত সন্ন্যাসীরা
(D) ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ভুক্ত সশস্ত্র সন্ন্যাসীরা
Ans: B) দশনামী সম্প্রদায়ভুক্ত সন্ন্যাসীরা
- সন্ন্যাসী – ফকির বিদ্রোহীদের সাহায্য করেছিল –
(A) অত্যাচারিত কৃষকরা
(B) মহাজনরা
(C) ছোটো জমিদাররা
(D) ইজারাদাররা
Ans: (A) অত্যাচারিত কৃষকরা
- সন্ন্যাসী – ফকির বিদ্রোহের ঘটনাকে ‘ যাযাবর ও পেশাদার ডাকাতদের উপদ্রব ‘ বলেছেন—
(A) উইলিয়ম হান্টার
(B) উইলিয়ম বেন্টিঙ্ক
(C) কর্নেল টড
(D) সি . আর . উইলসন
Ans: A) উইলিয়ম হান্টার
- পূর্ণিয়ায় ইংরেজ বাহিনীর কাছে সন্ন্যাসী বিদ্রোহীরা পরাজিত হয়েছিলেন—
(A) ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে
(B) ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে
(C) ১৭৭৫ খ্রিস্টাব্দে
(D) ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে
Ans: (A) ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে
- সন্ন্যাসী বিদ্রোহের সময় রংপুরের যুদ্ধে ( ১৭৭২ খ্রি . ) যে ইংরেজ সেনাপতি নিহত হন , তাঁর নাম –
(A) সেনাপতি টমাস
(B) এডওয়ার্ড
(C) সেনাপতি হ্যাভল
(D) সেনাপতি নেলসন্
Ans: (A) সেনাপতি টমাস
- বগুড়া জেলায় মঞ্জুরার যুদ্ধে নিহত হন—
(A) ভবানী পাঠক
(B) চিরাগ আলি
(C) মজনু শাহ
(D) দেবী চৌধুরানি
Ans: (C) মজনু শাহ
- ভবানী পাঠক নিহত হন –
(A) ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে
(B) ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে
(C) ১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দে
(D) ১৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে
Ans: (C) ১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দে
- সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহে অংশ নিয়েছিলেন অন্তত –
(A) ৪০ হাজার বিদ্রোহী
(B) ৩০ হাজার বিদ্রোহী
(B) ৫০ হাজার বিদ্রোহী
(C) ৬০ হাজার বিদ্রোহী
Ans: (B) ৩০ হাজার বিদ্রোহী
- ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতবর্ষের প্রথম কৃষক বিদ্রোহ হল –
(A) সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ
(B) নীল বিদ্রোহ
(C) রংপুরের বিদ্রোহ
(D) বারাসত বিদ্রোহ
Ans: (A) সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ
Madhyamik 2026 History Chapter 3 l মাধ্যমিক ইতিহাস প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | Madhyamik History Protirodh o Bidroho Question and Answer
- প্রথম চুয়াড় বিদ্রোহে বিদ্রোহীদের কাছে কে পরাজিত হন ?
Ans: স্টিফেন মরগান ( ইংরেজ সেনাপতি ) প্রথম চুয়াড় বিদ্রোহে বিদ্রোহীদের কাছে পরাজিত হন ।
- ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দের চুয়াড় বিদ্রোহের নেতৃত্ব কে দেন ?
Ans: দুর্জন সিং ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দের চুয়াড় বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন ।
- দ্বিতীয় চুয়াড় বিদ্রোহ কত খ্রিস্টাব্দে শেষ হয় ?
Ans: ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় চুয়াড় বিদ্রোহ শেষ হয় ।
- কোন্ বড়োলার্টের নির্দেশে ব্রিটিশ সেনাদল সাঁড়াশি আক্রমণ চালিয়ে চুয়াড় বিদ্রোহীদের পর্যদন্তু করে ?
Ans: লর্ড ওয়েলেসলির নির্দেশে ব্রিটিশ সেনাদল সাঁড়াশি আক্রমণ চালিয়ে চুয়াড় বিদ্রোহীদের পর্যুদস্ত করে ।
- আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য চুয়াড় বিদ্রোহের নেতাদের কী করা হয়েছিল ।
Ans: আতষ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য চুয়াড় বিদ্রোহীদের ফাঁসি দেওয়া এবং তাঁদের ঘাঁটিগুলিতে অগ্নিসংযোগ করা ।
- চুয়াড় বিদ্রোহ সম্পর্কে জে সি প্রাইস কী লিখেছেন ?
Ans: জে . সি . প্রাইস ১৭৯৮ ও ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দকে ভয়ংকর চুয়াড় বিদ্রোহের বছর হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ।
- কোলরা কোথায় বাস করত ?
Ans: কোলরা বর্তমান ঝাড়খণ্ডের ছোটোনাগপুরে বাস করত ।
- ছোটোনাগপুরে কোলরা ছাড়াও কোন্ কোন্ উপজাতির বাস ছিল ?
Ans: ছোটোনাগপুরে কোলরা ছাড়াও মুন্ডা , হো , ওঁরাও প্রভৃতি উপজাতি বাস করত ।
- অরণ্যের অধিকারকে কোলরা কী মনে করত ?
Ans: অরণ্যের অধিকারকে কোলরা ঈশ্বর প্রদত্ত অধিকার মনে করত ।
- দৰ্পনাথ সাহি কোথাকার রাজা ছিলেন ?
Ans: দর্পনাথ সাহি ছিলেন পালামৌর রাজা ।
- দর্পনাথ সাহির সঙ্গে কোম্পানির কী চুক্তি হয়েছিল ?
Ans: দর্পনাথ সাহির সঙ্গে কোম্পানির ইতিপূর্বে নির্ধারিত বাৎসরিক খাজনা ছাড়াও অতিরিক্ত ছয় হাজার টাকা কোম্পানিকে দেওয়ার চুক্তি হয়েছিল ।
- কত খ্রিস্টাব্দে কোম্পানি ও দর্পনাথ সাহির চুক্তি হয় ?
Ans: ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানি ও দর্পনাথ সাহির চুক্তি হয় ।
- কোম্পানি কত খ্রিস্টাব্দে ছোটোনাগপুরের শাসনভার সরাসরি গ্রহণ করে ?
Ans: ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানি ছোটোনাগপুরের শাসনভার সরাসরি গ্রহণ করে ।
- মাধব সিং কে ছিলেন ?
Ans: মাধব সিং ছিলেন কোম্পানির দেওয়ান ।
- ফসল বিক্রি করতে গেলে কোলদের কারা প্রতারিত করত ?
Ans: ফসল বিক্রি করতে গেলে কোলদের প্রতারিত করত মহাজন , জমিদাররা ।
- কোলদের ঐতিহ্যবিরোধী কাজ কোনটি ছিল ?
Ans: আফিম চাষ ছিল কোলদের ঐতিহ্যবিরোধী কাজ ।
- কোল বিদ্রোহের একটি কারণ লেখো ।
Ans: কোল বিদ্রোহের একটি কারণ ছিল সরকারি কাজে কোলদের বেগার খাটানো ।
- কোল বিদ্রোহের সূচনা করে হয় ?
Ans: ১৮৩১-৩২ খ্রিস্টাব্দে কোল বিদ্রোহের সূচনা হয় ।
- কোল বিদ্রোহ কোথায় প্রথম শুরু হয় ।
Ans: ছোটোনাগপুরের রাঁচিতে কোল বিদ্রোহের সূচনা হয় ।
- কোল বিদ্রোহের নেতৃত্বে কারা ছিলেন ?
Ans: সুই মুক্তা , সিংরাই মানকি , বুদ্বু ভগৎ , জোয়া ভগৎ , খাঁদু পাতর প্রমুখ ছিলেন কোল বিদ্রোহের নেতা ।
- কোন বিদ্রোহে আর কোন কোন উপজাতির লোকেরা যোগ দিয়েছিল ?
Ans: কোল বিদ্রোহে ওঁরাও , মুন্ডা , হো উপজাতির লোকেরা যোগ দিয়েছিল ।
- কোলরা কী বাজিয়ে বিদ্রোহের সূচনা করত ?
Ans: কোলরা ঢাক বাজিয়ে বিদ্রোহের সূচনা করত ।
- কোল বিদ্রোহীদের আক্রমণের লক্ষ্য কারা ছিল ?
Ans: কোল বিদ্রোহীদের আক্রমণের লক্ষ্য ছিল জমিদার , মহাজন , শস্য ব্যবসায়ী এবং কোম্পানির কর্মচারীরা ।
- কোলরা পুলিশবাহিনীকে কাদের সহযোগী মনে করত ?
Ans: কোলরা পুলিশবাহিনীকে জমিদার ও মহাজনদের সহযোগী মনে করত ।
- কোল বিদ্রোহ দমন করতে কার নেতৃত্বে ইংরেজবাহিনী এসেছিল ?
Ans: কোল বিদ্রোহ দমন করতে ক্যাপটেন উইলকিনসনের নেতৃত্বে ইংরেজবাহিনী এসেছিল ।
- কোলদের সমরাস্ত্র কী কী ছিল ?
Ans: তির , ধনুক , বল্লম প্রভৃতি ছিল কোলদের সমরাস্ত্র ।
- দক্ষিণ – পশ্চিম সীমান্ত এজেন্সি নামক পৃথক অঞ্চল কত খ্রিস্টাব্দে গঠন করা হয় ?
Ans: ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ – পশ্চিম সীমান্ত এজেন্সি নামক পৃথক অঞ্চল গঠন করা হয় ।
- একটি উপজাতি বিদ্রোহের নাম বলো ।
Ans: কোল / সাঁওতাল / মুন্ডা বিদ্রোহ একটি উপজাতি বিদ্রোহ ।
- ‘ দামিন – ই – কোহ্ ‘ বলতে কী বোঝায় ?
Ans: ‘ দামিন – ই – কোহ ‘ বলতে বোঝায় পাহাড়ের প্রাপ্তদেশ ।
- ‘ দামিন – ই – কোহ’তে কতজন সাঁওতাল বাস করত ( ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ) ।
Ans: ‘ দামিন – ই – কোহ’তে প্রায় ৮৩,০০০ জন সাঁওতাল বাস করত ।
- কবে সাঁওতাল বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল ?
Ans: সাঁওতাল বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের ৩০ জুন ।
- মুদ্ৰা বিদ্রোহ কবে শুরু হয় ।
Ans: ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে মুন্ডা বিদ্রোহ শুরু হয় ।
- ‘ উলগুলান ‘ বলতে কী বোঝায় ?
Ans: ‘ উলগুলান ‘ বলতে ভীষণ বিশৃঙ্খলা বা বিদ্রোহকে বোঝায় ।
- মুন্ডারা কেমন মানুষ ছিলেন ?
Ans: মুক্তারা ছিলেন নিরীহ , সহজ – সরল প্রকৃতির মানুষ ।
- মুক্তা উপজাতির লোকেরা কী কাজ করত ।
Ans: মুক্তা উপজাতির লোকেরা কৃষিকাজ করত ।
- কাঠি ‘ বা ‘ খুস্তকটি ’ প্রথা মানে কী ?
Ans: ‘ খুঁৎকাঠি ‘ বা ‘ খুস্তকটি ’ প্রথা মানে জমির যৌথ মালিকানা ।
- মাঝিহাম ‘ মানে কী ?
Ans: ‘ মাঝিহাম ‘ মানে খাসজমি ।
- বেঠ বেগার বেগারি ‘ মানে কী ?
Ans: ‘ বঠ বেগার বেগারি ’ মানে বিনা মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য করা ।
- মুন্ডাদের খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করতে চেষ্টা করেছিল এমন দুই মিশনারি সম্প্রদায়ের নাম লেখো ।
Ans: মুন্ডাদের খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করতে চেষ্টা করেছিল লুথারান ও অ্যাংলিকান মিশনারি সম্প্রদায় ।
- ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে শেষ উল্লেখযোগ্য উপজাতি অভ্যুত্থান কোনটি ?
Ans: ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে শেষ উল্লেখযোগ্য উপজাতি অভ্যুত্থান মুন্ডা বিদ্রোহ ।
- মুন্ডা চাষিরা কার আহ্বানে বিদ্রোহের জন্য প্রস্তুত হতে থাকে ?
Ans: বীরসা মুন্ডার আহ্বানে মুন্ডা চাষিরা বিদ্রোহের জন্য প্রস্তুত হতে থাকে ।
- কবে , কার নেতৃত্বে মুন্ডা বিদ্রোহ শুরু হয় ?
Ans: ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে মুন্ডা বিদ্রোহ শুরু হয় ।
- বীরসা মুন্ডার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁর অনুগামীরা কোন্ সম্প্রদায় সৃষ্টি করেছিল ?
Ans: বীরসা মুন্ডার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁর অনুগামীরা ‘ বীরসা সম্প্রদায় ’ সৃষ্টি করেছিল ।
- মুন্ডা বিদ্রোহের প্রভাবে ওঁরাও সম্প্রদায় যে আন্দোলনটি শুরু করে তার নাম কী ?
Ans: মুন্ডা বিদ্রোহের প্রভাবে ওঁরাও সম্প্রদায় তানা ভগৎ আন্দোলন শুরু করে ।
- মুন্ডা বিদ্রোহ কোথায় কোথায় ছড়িয়ে পড়েছিল ।
Ans: মুন্ডা বিদ্রোহ রাঁচি , হাজারিবাগ , ছোটোনাগপুর , সিংভূম অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল ।
- প্রথম জীবনে বীরসা কী কাজ শুরু করেছিলেন ?
Ans: প্রথম জীবনে বীরসা ধর্মপ্রচারের কাজ শুরু করেছিলেন ।
- মুন্ডা বিদ্রোহীরা ব্রিটিশদের কার সঙ্গে তুলনা করেছিল ?
Ans: মুক্তা বিদ্রোহীরা ব্রিটিশদের রাবণের সঙ্গে তুলনা করেছিল ।
- বীরসা মুক্তা গ্রেফতার হওয়ার কতদিন পরে মুক্তি পান ?
Ans: বীরসা মুন্ডা গ্রেফতার হওয়ার ২ বছর বাসে মুক্তি পান ।
- বীরসা মুণ্ডার করে মৃত্যু হয় ।
Ans: ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে বীরসা মুক্তার মৃত্যু হয় ।
- বীরসা মুন্ডাকে তাঁর অনুগামীরা কী রূপে দেখতা ?
Ans: বীরসা মুন্ডাকে তাঁর অনুগামীরা ভগবান রূপে দেখত ।
- কেন ব্রিটিশ সরকার ছোটোনাগপুর প্রজাস্বত্ব আইন পাস করে ?
Ans: ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে মুন্ডাদের অভাব – অভিযোগের সুষ্ঠু সমাধানের উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার এই আইন পাস করেন ।
- The Curious History of a Munda Fanatic গ্রন্থের লেখক কে ? :
Ans: ‘ The Curious History of a Munda Fanatic ‘ গ্রন্থের লেখক শরৎচন্দ্র রায় ।
- কবে , কার বিরুদ্ধে রংপুর বিদ্রোহ শুরু হয় ?
Ans: ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দে ইজারাদার দেবী সিংহের বিরুদ্ধে রংপুর বিদ্রোহ শুরু হয় ।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ (তৃতীয় অধ্যায়) মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik History Protirodh o Bidroho Question and Answer
- বিপ্লব বলতে কী বোঝায় ?
Ans: বিপ্লব বলতে বোঝায় — প্রথমত , এটি এমন এক দীর্ঘস্থায়ী প্রক্রিয়া যা পুরোনো অর্থনৈতিক , সামাজিক বা রাজনৈতিক ব্যবস্থার ওপর আঘাত হেনে তার আমূল পরিবর্তন ঘটায় । দ্বিতীয়ত , একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে এই পরিবর্তন সংঘটিত হয় । তৃতীয়ত , বিপ্লবের উদাহরণগুলি হল — আমেরিকার স্বাধীনতা বিপ্লব , ফরাসি বিপ্লব , শিল্প বিপ্লব , চিনের সাংস্কৃতিক বিপ্লব ।
- “ বিদ্রোহ ’ বলতে কী বোঝায় ?
Ans: বিদ্রোহ বলতে বোঝায় — প্রথমত , কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে নির্দিষ্ট কিছু মানুষ নিজেদের স্বার্থে নির্দিষ্ট কিছু দাবি আদায় বা প্রচলিত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশের ঘটনা অথবা সহিংস প্রতিবাদের মাধ্যমে দাবি আদায়ের চেষ্টাই হল বিদ্রোহ । দ্বিতীয়ত , বিদ্রো উদ্দেশ্য সীমিত থাকার কারণে তা ক্ষণস্থায়ী এবং আমূল পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ হয় । তৃতীয়ত , ইংরেজ শাসন – শোষণ ও অত্যাচারই ছিল ভারতে সংঘটিত আদিবাসী বিদ্রোহ , কৃষক বিদ্রোহ ও সিপাহি বিদ্রোহের সাধারণ কারণ ।
- বিপ্লব ও বিদ্রোহের মধ্যে পার্থক্য কী ?
Ans: বিপ্লব বলতে বোঝায় — প্রথমত , এটি এমন এক দীর্ঘস্থায়ী প্রক্রিয়া যা পুরোনো অর্থনৈতিক , সামাজিক বা রাজনৈতিক ব্যবস্থার ওপর আঘাত হেনে তার আমূল পরিবর্তন ঘটায় । দ্বিতীয়ত , একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে এই পরিবর্তন সংঘটিত হয় । বিদ্রোহ বলতে বোঝায় — প্রথমত , কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে নির্দিষ্ট কিছু মানুষের নিজেদের স্বার্থে নির্দিষ্ট কিছু দাবি আদায় বা প্রচলিত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশের ঘটনা অথবা সহিংস প্রতিবাদের মাধ্যমে দাবি আদায়ের চেষ্টাই হল বিদ্রোহ । দ্বিতীয়ত , বিদ্রোহের উদ্দেশ্য সীমিত থাকার কারণে তা ক্ষণস্থায়ী এবং আমূল পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ হয় ।
- বিদ্রোহ , অভ্যুত্থান ও বিপ্লবের পার্থক্যগুলি কী ?
Ans: বিদ্রোহ বলতে আসলে পুঞ্জীভূত অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশকেই বোঝায় । পূর্ববর্তী অবস্থার হঠাৎ বা আকস্মিক পরিবর্তন হল অভ্যুত্থান । অপরদিকে কোনো দেশের শাসন অথবা সমাজব্যবস্থার দ্রুত আমূল পরিবর্তন বা উত্তরণকেই বিপ্লব আখ্যা দেওয়া যায় ।
- ঔপনিবেশিক অরণ্য আইনের উদ্দেশ্য কী ছিল ?
Ans: ঔপনিবেশিক অরণ্য আইনের উদ্দেশ্যগুলি ছিল – প্রথমত , ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দের পর ভারতে ইংরেজ কোম্পানির নৌবাহিনীতে জাহাজ নির্মাণের জন্য ওক কাঠের প্রয়োজনীয়তা থেকে ভারতীয় বনজ সম্পদের দিকে কোম্পানির নজর পড়ে । দ্বিতীয়ত , উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে রেলপথের বিস্তার শুরু হলে রেললাইনের স্লিপার , রেলগাড়ি অফিসের আসবাবপত্র নির্মাণের জন্য প্রচুর পরিমাণ কাঠের দরকার পড়ে যা বনভূমি সংরক্ষণের বিষয়টিকে জরুরি করে তোলে । তৃতীয়ত , অরণ্যে বসবাসকারী অধিবাসীরা যাে যথেচ্ছভাবে বৃক্ষচ্ছেদন করতে না পারে সেদিকেও লক্ষ রাখা দরকার হয়ে পড়ে ।
- অরণ্য আইন কী ?
Ans: ১৮৬৫ ও ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার তাদের সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থে ভারতের বনজ সম্পদকে ব্যবহারের জন্য দুটি আইন প্রণয়ন করে । এই দুই আইনকেই বলা হয় ‘ অরণ্য আইন ‘ ।
- অরণ্য আইনে কী বলা হয়েছিল ?
Ans: অরণ্য আইন অনুযায়ী— প্রথমত , ভারতের বনভূমিকে তিনভাগে ভাগ করা হয় — ‘ সংরক্ষিত ’ বা ‘ রিজার্ভড ‘ বনভূমি , ‘ সুরক্ষিত ’ বা ‘ প্রোটেক্টেড ’ বনভূমি আর ‘ অশ্রেণিবিভক্ত ’ বা ‘ আনক্লাসিফায়েড ’ বনভূমি । দ্বিতীয়ত , ‘ সংরক্ষিত ’ বনভূমি ছিল সম্পূর্ণভাবে সরকারের অধীনে , যেখানে গাছ কাটা ছিল সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ । তৃতীয়ত , সুরক্ষিত বনভূমি থেকে উপজাতিরা প্রথমে বিনা পয়সায় ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কাঠ সংগ্রহ করতে পারত কিন্তু তা বিক্রি করতে পারত না , অশ্রেণিবিভক্ত অরণ্যাঞ্চলে প্রবেশাধিকার ছিল অবাধ ।
- চুয়াড় বিদ্রোহের গুরুত্ব কী ?
Ans: চুয়াড় বিদ্রোহের গুরুত্বগুলি হল— প্রথমত , এটি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে জমিদার , তার অনুচরবর্গ এবং কৃষকদের বিদ্রোহ হলেও এর প্রাণশক্তি ছিল নিপীড়িত কৃষক । দ্বিতীয়ত , এই বিদ্রোহের মাধ্যমে চুয়াড়রা জমিদারদের নিপীড়নের হাত থেকে মুক্তির চেয়ে ব্রিটিশ শাসনের অবসান বেশি জরুরি বলে মনে করেছিল । তৃতীয়ত , এই বিদ্রোহ ন্যায্য অধিকার রক্ষার সংগ্রামকে অনুপ্রেরণা দেয় — যা পরবর্তীকালে অনেক আন্দোলনের দিশারি হয়ে দাঁড়ায় ।
- উনিশ শতকে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে দুটি উপজাতি বিদ্রোহের নাম করো ।
Ans: উনিশ শতকে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে দুটি উপজাতি বিদ্রোহ হল কোল বিদ্রোহ ও সাঁওতাল বিদ্রোহ । ১৮৩১-৩২ খ্রিস্টাব্দে কোল বিদ্রোহ শুরু হয় এবং এই বিদ্রোহের নেতা ছিলেন বুদ্বু ভগৎ , জোয়া ভগৎ , সুই মুন্ডা । অন্যদিকে ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে সিধু – কানহুর নেতৃত্বে শুরু হয়েছিল সাঁওতাল বিদ্রোহ ।
- ‘ কোল কারা ?
Ans: ভারতের আদিম উপজাতিগুলির একটি গোষ্ঠীর নাম হল ‘ কোল ’ এবং এদের বৈশিষ্ট্যগুলি হল— প্রথমত , এদের বিশেষ কোনো জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত নয় বলে একটি ভাষা গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত বলা যায় , যার অন্তর্ভুক্ত ছিল কোল , ভিল , হো , মুন্ডা প্রভৃতি উপজাতি । দ্বিতীয়ত , এদের চেহারা হল খর্বাকৃতি , গায়ের রং কালো এবং নাক চ্যাপটা । তৃতীয়ত , পাহাড়ে ও জঙ্গলে বসবাসকারী এই গোষ্ঠীর মানুষদের ভাষাগুলি ছোটোনাগপুর , ওড়িশা ও মধ্যভারতের এক বিস্তীর্ণ অংশে বহুল পরিমাণে প্রচলিত ।
- কোল বিদ্রোহ কোথায় কোথায় ছড়িয়ে পড়েছিল ?
Ans: ছোটোনাগপুরের রাঁচিতে কোল বিদ্রোহের সূচনা হলেও ক্রমশ এই বিদ্রোহ সিংভূম , মানভূম , হাজারিবাগ , পালামৌ জেলায় ছড়িয়ে পড়েছিল । যদিও বহু আগেই এই বিদ্রোহ প্রকাশ পেয়েছিল সিংভূম জেলার শোনপুর পরগনায় । উত্তর অন্যান্য বিদ্রোহের মতো কোল বিদ্রোহের ক্ষেত্রেও স্থানীয় নেতৃত্বের সৃষ্টি হয় । এঁরা হলেন — সুই মুন্ডা , বুন্ধু ভগৎ , জোয়া ভগৎ , খাদু পাতর , ঝিন্দরাই মানকি , সূর্য , সিংরাই প্রমুখ ।
- দর্শনাথ সাহি কে ছিলেন । তাঁর সঙ্গে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কী চুক্তি হয়েছিল ?
Ans: দর্পনাথ সাহি ছিলেন পালামৌর রাজা । ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে দর্শনাথ সাহির সঙ্গে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চুক্তি হয় যে , বাৎসরিক ছয় হাজার টাকা রাজস্ব – সহ অতিরিক্ত ছয় হাজার টাকা তিনি কোম্পানিকে প্রদান করবেন ।
- কোল বিদ্রোহের উদ্দেশ্য কী ছিল ?
Ans: কোল বিদ্রোহের উদ্দেশ্যগুলি হল প্রথমত , চার্লস মেটকাফ – এর মতে , কোল বিদ্রোহীদের প্রথম ও প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ইংরেজ শাসনের অবসান ঘটানো । দ্বিতীয়ত , এ ছাড়া জমিদার , মহাজন , শস্য ব্যবসায়ী , পুলিশ , কোম্পানির কর্মচারীদের প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়া ছিল অন্যতম উদ্দেশ্য । কারণ কোল বিদ্রোহীরা এদের ইংরেজ শাসনের অঙ্গ হিসেবেই দেখেছিল ।
- কোল বিদ্রোহের কারণ কী ? অথবা , কোল বিদ্রোহের দুটি কারণ লেখো ।
Ans: কোল বিদ্রোহের কারণগুলি হল— প্রথমত , ছোটোনাগপুর অঞ্চলে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক উচ্চহারে রাজস্ব বৃদ্ধি , জমিদার – মহাজন – ব্যবসায়ীদের শোষণ ছিল কোল বিদ্রোহের মূল কারণ । দ্বিতীয়ত , অন্য কারণগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল — দেশি মদের ওপর কর বসানো , কোলদের ঐতিহ্যবিরোধী আফিম চাষ করতে বাধ্য করা , বেগার খাটানো , নারীদের সম্মান হানি হওয়া । তৃতীয়ত , এ ছাড়া বনজ সম্পদের ওপর কোলদের আজন্ম অধিকার ব্রিটিশরা ছিনিয়ে নিলে কোলরা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে ।
- কোল বিদ্রোহের প্রকৃতি আলোচনা করো ।
Ans: কোল বিদ্রোহের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় প্রথমত , এটি ছিল বেশ কয়েকটি আদিবাসী গোষ্ঠীর সম্মিলিত বিদ্রোহ , কারণ— কোল বিদ্রোহে কোল ছাড়াও ওঁরাও , হো , মুন্ডা উপজাতির মানুষেরা যোগ দিয়েছিল । দ্বিতীয়ত , বিদ্রোহীরা দিকু , অর্থাৎ বহিরাগতদের এলাকা ছেড়ে যেতে নির্দেশ দেয় এবং নির্দেশ অমান্যকারীদের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় । তৃতীয়ত , ধর্মীয় কারণে বহু হিন্দুকে আদিবাসী দেবতার সামনে বলি দেওয়া হয় এবং কোলদের আক্রমণে সূত্রধর ও কর্মকার ছাড়া কেউই রক্ষা পায়নি ।
- ‘ বেচারাম ‘ কাকে বলা হয় ?
Ans: বেচারাম আসলে নির্দিষ্ট ওজনের চেয়ে কম ওজনের এক ধরনের বাটখারা যা ‘ ছোটো বাউ ‘ নামেও পরিচিত ছিল । এর দ্বারা সাঁওতালদের কিনতে আসা জিনিসপত্র কম ওজনের বাটখারায় মেপে পরিমাণে কম দিয়ে প্রতারিত করা হত । সাঁওতাল বিদ্রোহের অন্যতম কারণ ছিল এই বাটখারা ।
- ‘ কেনারাম কাকে বলে ?
Ans: কেনারাম আসলে নির্দিষ্ট ওজনের চেয়ে বেশি ওজনের এক ধরনের বাটখারা । এর দ্বারা ব্যবসায়ীরা সাঁওতালদের বিক্রি করতে আসা জিনিসপত্র বেশি ওজনের বাটখারার সাহায্যে মেপে ওজনে কম দেখিয়ে সাঁওতালদের ঠকাতো । কেনারামকে বড়ো বাউ – ও বলা হয় ।
- সাঁওতাল বিদ্রোহ কি নিছক একটি উপজাতি বিদ্রোহ ছিল ?
Ans: সাঁওতাল বিদ্রোহকে শুধুমাত্র একটি উপজাতি বিদ্রোহ বলা যায় না , কারণ প্রথমত , এই বিদ্রোহে সাঁওতালরা ছাড়াও নিম্নবর্গের সাধারণ মানুষ , অর্থাৎ কামার , কুমোর , গোয়ালা , তাঁতি ( জোলা ) , তেলি প্রভৃতি নানা পেশার হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায় সাহায্য ও সমর্থন জানায় । দ্বিতীয়ত , নিছকই একটি উপজাতি বিদ্রোহ না বলে বরং সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধেও মহাজন , জমিদার , ব্যবসায়ীদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষের ঐক্যবদ্ধ সশস্ত্র সংগ্রাম বলাই শ্রেয় ।
- সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রকৃতি নিয়ে ঐতিহাসিকরা কী মত পোষণ করেন ?
Ans: আধুনিক গবেষক ও ঐতিহাসিকগণ সাঁওতাল বিদ্রোহকে শুধুমাত্র একটি উপজাতি বিদ্রোহ মনে করেন না । প্রথমত , রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে , ১৮৫৫-৫৬ খ্রিস্টাব্দের সাঁওতাল বিদ্রোহ ব্রিটিশ অপশাসনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বিদ্রোহ রূপে চিহ্নিত । দ্বিতীয়ত , সুপ্রকাশ রায় সাঁওতাল বিদ্রোহকে ‘ মহাবিদ্রোহের অগ্রদূত ‘ বলেছেন ।
- গিরা কী ? সাঁওতালরা গ্রাম লুঠ করে সেখানে কী রেখে আসতেন ?
Ans: গিরা হল শালগাছের ডাল । সাঁওতালরা গ্রাম লুঠ করে বা ইংরেজদের বাংলোগুলি লুঠ করে সেখানে চামড়া – বাঁধা বাঁশ পুঁতে রেখে আসত । এটি ছিল সাঁওতালদের অধিকার ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার ইঙ্গিতবাহী ।
- কীভাবে সাঁওতাল বিদ্রোহের সূচনা হয় ?
Ans: স্বাধীন সাঁওতাল রাজ্য প্রতিষ্ঠার সংকল্প নিয়ে সিধু ও কানহু – র নেতৃত্বে ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের ৩০ জুন ভাগনাডিহির মাঠে ১০ হাজার সাঁওতাল এই বিদ্রোহের সূচনা করে । প্রথমে তাঁরা দলবদ্ধভাবে পাঁচ কাঠিয়া গ্রাম আক্রমণ করে , দিঘি থানার দারোগা মহেশলাল দত্তকে হত্যা করে , কেনারাম ভগৎ – সহ পাঁচজন কুখ্যাত মহাজনকে তারা হত্যা করে । এ ছাড়াও তারা সরকারের দপ্তরখানা , জমিদারদের কাছাড়ি এবং মহাজনদের আড়তগুলি আক্রমণ করেছিল ।
- কারা সাঁওতালদের ওপর শোষণ করত ।
Ans: সাঁওতালরা অনেকের দ্বারা শোষিত হয়েছিল । এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল- ( ১ ) জমিদার ও তাদের নিযুক্ত খাজনা আদায়কারী , ( ২ ) বহিরাগত দিকু বা মহাজন , ( ৩ ) ব্যবসায়ী , ( 8 ) রেলপথ নির্মাণের ঠিকাদার , ( ৫ ) ইউরোপীয় কর্মচারী , ( ৬ ) বহিরাগত শস্য ব্যবসায়ী এবং ( 4 ) নীলকর সাহেব । এরা সকলেই সাঁওতালদের ওপর শোষণ ও অত্যাচার করেছিল ।
- তালদের আক্রমণের লক্ষ্য হয়েছেন কারা ?
Ans: সাঁওতাল বিদ্রোহের সময় সাঁওতালদের আক্রমণের লক্ষ্য হয়েছিল প্রথমত , দিঘি থানার দারোগা মহেশলাল দত্ত , কেনারাম ভগৎ সহ বহু কুখ্যাত মহাজন , পাকুড়ের রাজবাড়ি , অম্বর পরগনার জমিদার এবং বহু নীলকর সাহেব । দ্বিতীয়ত , রেলপথের ইউরোপীয় কর্মচারী , পদস্থ পুলিশকর্তা , ব্যবসায়ীদের অনেকে সাঁওতালদের দ্বারা নিহত হয় । তৃতীয়ত , সাধারণত বিদ্রোহীদের আক্রমণের লক্ষ্য হত ইংরেজদের বাংলো এবং জমিদারদের গুদাম ও ধানের গোলা ।
- কীভাবে সাঁওতাল বিদ্রোহের অবসান হয় ?
Ans: তির , ধনুক ও বল্লম সম্বল করে সাঁওতালরা কলকাতা দখলের উদ্দেশ্যে দল বেঁধে বেরিয়ে পড়লে ইংরেজ সেনাপতি মেজর বুরাফ ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে ১৬ জুলাই পিরপৈত্তির কাছে সাঁওতাল বিদ্রোহীদের হাতে পরাজিত হন । ঐ বছরের নভেম্বরে সাঁওতাল বিদ্রোহীদের অধীনস্থ সমগ্র এলাকায় সামরিক শাসন জারি করে মেজর জেনারেল লয়েডের নেতৃত্বে ৫৫ নং পার্বত্য বাহিনী সাঁওতালদের আক্রমণ করে । ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত উভয়পক্ষের সংঘর্ষ চললেও শেষ পর্যন্ত ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতন চালিয়ে ব্রিটিশ সরকার এই বিদ্রোহ দমন করে ।
- সাঁওতালদের পরাজয়ের কারণ কী ?
Ans: সাঁওতালদের পরাজয়ের একাধিক কারণ ছিল । এই কারণগুলি হল – ( ১ ) আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের অভাব , ( ২ ) সিধু ও কার মৃত্যু , ( ৩ ) প্রায় ২০ হাজার সাঁওতালকে নির্মমভাবে হত্যা করা , ( ৪ ) ব্রিটিশবাহিনী কর্তৃক গ্রামের পর গ্রাম ধ্বংস করা প্রভৃতি ।
- সিধু , কান ও অন্য সাঁওতালদের কী শাস্তি হয় ?
Ans: সিধুকে গ্রেফতার করার সাথে সাথে গুলি করে হত্যা করা হয় । কান্তু উপেনবান্দায় গ্রেপ্তার হলে কয়েকদিনের মধ্যে তাঁর ফাঁসি হয় । বিদ্রোহে অংশগ্রহণকারী প্রায় ২০ হাজার সাঁওতালকে হত্যা করা হয় ।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ (তৃতীয় অধ্যায়) মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik History Protirodh o Bidroho Question and Answer :
1. ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে বিভিন্ন উপজাতি বিদ্রোহের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস আলোচনা করো ।
Ans: ভূমিকা : ভারতে ব্রিটিশ শাসনের প্রথম একশো বছরে নানা প্রতিবাদ , প্রতিরোধ ও বিদ্রোহের সম্মুখীন হতে হয়েছে কোম্পানির সরকারকে । কোম্পানির শাসনের বিরুদ্ধে চুয়াড় , কোল , ভিল , মুন্ডা , ওঁরাও , সাঁওতাল , হো প্রভৃতি উপজাতিদের বিক্ষিপ্ত বিদ্রোহগুলি ছিল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ।
বিভিন্ন উপজাতি বিদ্রোহ : ঔপনিবেশিক ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা , মহাজন , বণিক , জমিদার ও মধ্যস্বত্বভোগী গোষ্ঠীর শোষণ , কোম্পানি কর্তৃক সমস্ত বনাঞ্চলকে খাস জমিতে পরিণত করে বন্যসম্পদের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি কারণে উপজাতিদের মধ্যে গভীর অসন্তোষের সৃষ্টি হয় , যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে বিদ্রোহের মাধ্যমে । উপজাতি বিদ্রোহগুলির মধ্যে চুয়াড় , কোল , সাঁওতাল ও মুন্ডা বিদ্রোহ ছিল উল্লেখযোগ্য ।
চুয়াড় বিদ্রোহ : ব্রিটিশ কোম্পানির সীমাহীন অর্থনৈতিক , শোষণ – অত্যাচার ও নিপীড়নে অতিষ্ঠ হয়ে মেদিনীপুর , বাঁকুড়া , বীরভূম জেলার চুয়াড়রা যে বিদ্রোহের সূচনা করে , তা চুয়াড় বিদ্রোহ নামে পরিচিত । প্রায় ত্রিশ বছর ধরে চলা এই বিদ্রোহে বিভিন্ন সময়ে নেতৃত্ব প্রদান করেন জগন্নাথ ধল , ধাদকার শ্যামগঞ্জন , মাধব সিংহ , দুর্জন সিংহ প্রমুখ । কোম্পানির সেনাবাহিনী নির্মম দমননীতির দ্বারা এই বিদ্রোহ দমন করে ।
কোল বিদ্রোহ : ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে যেসব আদিবাসী বিদ্রোহ ঘটে তার অন্যতম ছিল কোল বিদ্রোহ ( ১৮৩১-৩২ খ্রি . ) । রাঁচি , হাজারিবাগ , সিংভূম , পালামৌ প্রভৃতি অঞ্চলে বুদ্বু ভগৎ , জোয়া ভগৎ , ঝিন্দরাই মানকি , সুই মুন্ডার নেতৃত্বে ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দে এই বিদ্রোহ চরম আকার ধারণ করলে ক্যাপটেন উইলকিনসের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী বহু কোল উপজাতির নরনারীদের নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে এই বিদ্রোহ দমন করেন ।
সাঁওতাল বিদ্রোহ : কোম্পানির শোষণ ও শাসনের বিরুদ্ধে নিজেদের স্বাধীনতা বজায় রাখার জন্য আদিবাসী ও উপজাতিদের দ্বারা সংঘটিত বিদ্রোহগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপজাতি বিদ্রোহ হল ১৮৫৫-৫৬ খ্রিস্টাব্দের সাঁওতাল বিদ্রোহ । ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে ৩০ জুন প্রায় দশ হাজার সাঁওতাল ভাগনাডিহির মাঠে জমায়েত হয়ে সিধু – কানহুর নেতৃত্বে স্বাধীন সাঁওতাল রাজ্য গঠনের পরিকল্পনা করে । ক্রমশ এই বিদ্রোহ ব্যাপ্তি লাভ করলে করে ফাঁসি দেওয়ায় ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে এই বিদ্রোহ স্তিমিত হয়ে পড়ে ।
মুন্ডা বিদ্রোহ : ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে বীরসা মুন্ডার নেতৃত্বে মুন্ডারা যে বিদ্রোহ করেছিল তা মুন্ডা বিদ্রোহ নামে পরিচিত । ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে এটিই ছিল শেষ গুরুত্বপূর্ণ উপজাতি বিদ্রোহ । ১৮৯৯-১৯০০ খ্রিস্টাব্দে মুন্ডা বিদ্রোহ , রাঁচি , হাজারিবাগ , সিংভূমের পার্বত্য অঞ্চলে প্রসার লাভ করলে ব্রিটিশ সরকার তীব্র দমননীতি চালিয়ে বীরসা মুন্ডাকে গ্রেপ্তার করে এই বিদ্রোহ দমন করে । মূল্যায়ন চুয়াড় , কোল , সাঁওতাল , মুন্ডা এবং অন্য উপজাতি বিদ্রোহগুলি ব্যর্থ হয়ে গেলেও পরবর্তীকালে স্বাধীনতা আন্দোলনের জমি তৈরির ক্ষেত্রে এইসব আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম ।
2. চুয়াড় বিদ্রোহ সম্পর্কে আলোচনা করো । অথবা , চুয়াড় বিদ্রোহের প্রেক্ষাপট ও গতিপথ বর্ণনা করো ।
Ans: ভূমিকা : মেদিনীপুর , বীরভূম , বাঁকুড়া , ঘাটশিলায় চুয়াড় উপজাতির কৃষকেরা ১৭৬৮ থেকে ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় সাতবার যে বিদ্রোহ করেছিল , তা চুয়াড় বিদ্রোহ নামে পরিচিত । এগুলির মধ্যে ১৭৯৮-১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে দুর্জন সিংহের নেতৃত্বে পরিচালিত বিদ্রোহ ছিল দ্বিতীয় পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহ ।
বিদ্রোহের কারণ : চুয়াড় বিদ্রোহের কারণগুলি হল— জমি দখল : কৃষিকাজ ও পশুপালন ছিল চুয়াড়দের প্রধান জীবিকা । বাংলায় কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠার পর কোম্পানির কর্তৃপক্ষ এই অঞ্চলের জমিদারদের জমি দখল করে তার ওপর অত্যন্ত চড়া হারে ভূমিরাজস্ব ধার্য করলে জমিদাররা এবং তাদের পাইক চুয়াড়রা এর বিরোধিতা করে ।
জীবিকা সমস্যা : সরকার কর্তৃক নিষ্কর জমি ( পাইকান ) দখল , চুয়াড় বিদ্রোহের অন্যতম কারণ । জমি – নির্ভর চুয়াড়দের অধিকাংশ জমি কোম্পানি দখল করে নিলে তারা জীবিকাহীন হয়ে পড়লে চুয়াড়রা বিদ্রোহের সূচনা করে ।
চুয়াড় বিদ্রোহের ব্যাপ্তি : দ্বিতীয় পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহ শুরু হলে রায়পুরের পূর্বতন জমিদার দুর্জন সিংহ , মেদিনীপুরের জমিদার রাণি শিরোমণি এই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসেন । এই বিদ্রোহ রায়পুর , তমলুক , রামগড় , শালবনী , বাসুদেবপুর প্রভৃতি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে । দুর্জন সিং – এর নেতৃত্বে অন্তত ৩০ টি গ্রামের সর্দার ও পাইকরা দল বেঁধে লুটপাট চালায় ও হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে । এই বিদ্রোহের উল্লেখযোগ্য নেতা ছিলেন গোবর্ধন দিকপতি , লাল সিং মোহনলাল প্রমুখ ।
বিদ্রোহর দমন : ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে দুর্জন সিংহের নেতৃত্বে চুয়াড় বিদ্রোহে মেদিনীপুরের শান্তি বিঘ্নিত হলে প্রথমত , লর্ড ওয়েলেসলি দুটি সেনাদলের সাহায্যে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে বিদ্রোহীদের চূড়ান্তভাবে পরাজিত করেন । দ্বিতীয়ত , সেনাবাহিনী বিদ্রোহীদের গ্রেপ্তার করে গাছে ঝুলিয়ে ফাঁসি দিয়ে তাদের ঘাঁটিগুলি জ্বালিয়ে , তাণ্ডব চালিয়ে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করে এই বিদ্রোহ দমন করে । তৃতীয়ত , বিভাজন নীতির আশ্রয় নিয়ে চুয়াড় ও পাইকদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে এবং জমিদারদের নানাভাবে আশ্বস্ত করে কৌশলে চুয়াড় বিদ্রোহের অবসান ঘটানো হয় । গুরুত্ব : চুয়াড় বিদ্রোহের বেশ ক – টি গুরুত্ব ছিল , যেমন—
কৃষক চৈতন্য : প্রাণশক্তি নিপীড়িত কৃষকরা বুঝেছিল যে , জমিদারদের নিপীড়নের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া অপেক্ষা ব্রিটিশ শাসনের অবসান বেশি জরুরি ।
ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম : জমিদার ও কৃষকরা মিলিত হয়ে এই বিদ্রোহ সংগঠিত করেছিল যা অত্যন্ত বিরল ঘটনা ।
অনুপ্রেরণাস্থল : বিদ্রোহীদের আত্মত্যাগ ও ন্যায্য অধিকার রক্ষার সংগ্রাম পরবর্তীকালে আরও বৃহত্তর সংগ্রামের দিশারি ছিল ।
স্বতঃস্ফূর্ত বিদ্রোহ : অধ্যাপক নরহরি কবিরাজ বলেছেন যে চুয়াড় বিদ্রোহ ছিল নিম্নশ্রেণির মানুষদের স্বতঃস্ফূর্ত অথচ ব্যাপক বিদ্রোহ ।
3. সাঁওতাল বিদ্রোহ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো ।
Ans: ভূমিকা : ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ভারতে ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে যে সমস্ত উপজাতি বিদ্রোহ ঘটে তার মধ্যে সবচেয়ে ব্যাপক ছিল ১৮৫৫-৫৬ খ্রিস্টাব্দের সাঁওতাল বিদ্রোহ ।
বিদ্রোহের কারণ : সাঁওতালরা হাজারিবাগ , মানভূম থেকে রাজমহলের পার্বত্য সমতলভূমিতে এসে , সেখানকার জঙ্গলাবৃত অঞ্চল পরিষ্কার করে বসবাস ও কৃষিকাজ শুরু করে অঞ্চলটির নাম দেয় ‘ দামিন – ই – কোহ ‘ বা মুক্ত অঞ্চল । কিন্তু সেখানে তারা জমিদার , মহাজন , বহিরাগত ব্যবসায়ী ও ইংরেজদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে শেষপর্যন্ত বিদ্রোহের পথ বেছে নেয় ।
বিদ্রোহের লক্ষ্য : বিদ্রোহীদের লক্ষ্য ছিল বহিরাগত মহাজন ( দিকু ) ও ব্যবসায়ীদের অত্যাচার ও এবং জমিদারি ও ব্রিটিশ শাসনের উচ্ছেদ ঘটিয়ে সাঁওতাল রাজ প্রতিষ্ঠা করা ।
বিদ্রোহের শুরু : ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের ৩০ জুন সিধু – কানহুর নেতৃত্বে প্রায় দশ হাজার সাঁওতাল নরনারী ভাগনাডিহির মাঠে জমায়েত হয়ে স্বাধীন সাঁওতাল রাজ্য গঠনের পরিকল্পনা নেন । দীঘি থানার অত্যাচারী দারোগা মহেশলাল দত্ত ও কুখ্যাত মহাজন কেনারাম ভগৎকে হত্যার মাধ্যমে এই বিদ্রোহ শুরু হয় ।
সাঁওতাল বিদ্রোহের নেতা সিধু বিদ্রোহের নেতৃত্ব ও ব্যাপ্তি : বিদ্রোহীরা সিধু , কানহু , ডোমন মাঝি , চাঁদ , ভৈরব , কালো প্রামাণিকের নেতৃত্বে মহাজনদের আড়ত , বণিকদের বাড়ি , নীলকুঠি ও জমিদারের কাছারি আক্রমণ করে । রেলস্টেশন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস করে । এভাবে রাজমহল থেকে মুরশিদাবাদ পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বিদ্রোহের আগুন ছড়িয়ে পড়ে । মুরশিদাবাদ , বীরভূমে পাকুড় ও সাঁওতাল পরগনার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ইংরেজবাহিনী পর্যদস্তু হয়ে পড়ে । সবশেষে বিদ্রোহীরা তির , ধনুক , বল্লম সম্বল করে কলকাতা দখলের উদ্দেশ্যে দল বেঁধে বেরিয়ে পড়লে শেষপর্যন্ত ইংরেজ কোম্পানি প্রচণ্ড দমনপীড়নের মাধ্যমে এই বিদ্রোহ দমন করে ( ১৮৫৬ খ্রি . ) ।
বিদ্রোহের প্রকৃতি : ব্রিটিশ ঐতিহাসিকরা একে নিছক বর্বরদের স্থানীয় বিদ্রোহ ও আদিম ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ বললেও আধুনিক ঐতিহাসিকরা একে দেশীয় শোষণ ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক গণসংগ্রাম তথা শ্রমজীবীদের প্রতিরোধ হিসেবে দেখেছেন ।
ফলাফল : এই বিদ্রোহের ফলে ( ১ ) সরকার সাঁওতাল পরগনা নামে একটি স্বতন্ত্র সংরক্ষিত এলাকা সৃষ্টি করে সেখানে সাঁওতালদের আইনকানুন চালু করে ; ( ২ ) সাঁওতালদের উপজাতি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং মিশনারি ছাড়া সমতলের লোকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ হয় ; ( ৩ ) সাঁওতাল মোড়ল ও সর্দারদের ক্ষমতা স্বীকার করা হয় ; এবং ( ৪ ) সর্বত্র একই ধরনের ওজন বিধি চালু হয় । উপসংহার : ব্যাপ্তিতে ক্ষুদ্র ও বিক্ষিপ্ত হলেও সাঁওতাল বিদ্রোহের মধ্যে শোনা গিয়েছিল প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের পদধ্বনি । ঐতিহাসিক সুপ্রকাশ রায় তাই সাঁওতাল বিদ্রোহকে ‘ মহাবিদ্রোহের অগ্রদূত ’ বলেছেন ।
4. সন্ন্যাসী – ফকির বিদ্রোহের ( ১৭৬৩–১৮০০ ) কারণ ও ব্যর্থতার কারণগুলি আলোচনা করো ।
অথবা , সন্ন্যাসী – ফকির বিদ্রোহের পটভূমি ও পরিণতি উল্লেখ করো ।
Ans: ভূমিকা : কোম্পানির শাসনের প্রথম দিকে কৃষিজীবী হিন্দু সন্ন্যাসী ও মুসলমান ফকিরদের নেতৃত্বে বাংলা – বিহারের কিছু অঞ্চল জুড়ে যে বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল , তা সন্ন্যাসী – ফকির বিদ্রোহ নামে পরিচিত । দীর্ঘ চল্লিশ বছর ( ১৭৬৩-১৮০০ খ্রি . ) ব্যাপী এই আন্দোলন ছিল কোম্পানির শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম সংঘবদ্ধ বিদ্রোহ ।
বিদ্রোহের কারণ : সন্ন্যাসী – ফকির বিদ্রোহের প্রধান প্রধান কারণগুলি হল গ্রে কোম্পানির উচ্চহারে রাজস্ব বৃদ্ধি : ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অত্যধিক রাজস্ব বৃদ্ধি কৃষিজীবী সন্ন্যাসী ও ফকিরদের ক্ষুব্ধ করে তোলে ।
তীর্থকর : সন্ন্যাসী ও ফকিররা মাঝে মাঝে ইচ্ছেমতো দলবদ্ধভাবে বিভিন্ন তীর্থক্ষেত্রে গেলে সরকার থেকে তাদের ওপর তীর্থকর আদায় করা হয় । এতে সন্ন্যাসী ও ফকিররা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ।
কোম্পানির কর্মচারীদের জুলুম : ফকির ও সন্ন্যাসীদের মধ্যে অনেকেই রেশম ব্যাবসার সঙ্গে যুক্ত ছিল । কোম্পানির কর্মচারীরা তাদের এই ব্যাবসাতে নানাভাবে জুলুম ও বাধা প্রদান করে ।
মধ্যস্বত্বভোগীদের শোষণ ও অত্যাচার : কোম্পানির কর্মচারী ছাড়াও ইজারাদার , পত্তনিদার প্রভৃতি মধ্যস্বত্বভোগীদের শোষণ – অত্যাচার সন্ন্যাসী – ফকির বিদ্রোহের অন্যতম কারণ ।
বিদ্রোহের ব্যাপ্তি ও নেতৃত্ব : ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় সর্বপ্রথম সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ শুরু হয় । ক্রমশ তা দাবানলের মতো মালদহ , রংপুর , দিনাজপুর , কোচবিহার , ময়মনসিংহ , ফরিদপুর প্রভৃতি জেলায় ছড়িয়ে পড়ে । অত্যাচারিত ও নির্যাতিত দরিদ্র কৃষক , মুঘল সেনাবাহিনীর বেকার সৈন্য এবং সন্ন্যাসী ও ফকিরদের বিভিন্ন সম্প্রদায় এই বিদ্রোহে অংশ নেয় । ভবানী পাঠক , মজনু শাহ , দেবী চৌধুরানি , চিরাগ আলি , মুসাশাহ প্রমুখ ছিলেন এই বিদ্রোহের নায়ক । প্রায় ৫০ হাজার মানুষ এই বিদ্রোহে অংশ নেয় ।
মূল্যায়ন : সন্ন্যাসী – ফকির বিদ্রোহ বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ ছিল প্রথমত , কোম্পানির শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের প্রথম বিদ্রোহ । দ্বিতীয়ত , বিদ্রোহীরা হিন্দু ও মুসলমানদের এক ছাতার তলায় এনে এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছিল । তৃতীয়ত , ওয়ারেন হেস্টিংস এই বিদ্রোহকে যতই ‘ পেশাদার ডাকাতের উপদ্রব বলে অভিহিত করুক না কেন , এডওয়ার্ড উইলিয়াম হান্টারের মতে , এটি ছিল প্রকৃত কৃষক বিদ্রোহ ।
5. ওয়াহাবি আন্দোলনের ওপর একটি প্রবন্ধ লেখো ।
Ans: ভূমিকা : উনিশ শতকের প্রথমার্ধে ভারতে শাহ ওয়ালিউল্লাহ ও তাঁর পুত্র আজিজ এবং রায়বেরিলির সৈয়দ আহম্মদ রেলভি ভারতে ওয়াহাবি আদর্শের ভিত্তিতে ইসলাম ধর্মের শুদ্ধি আন্দোলন শুরু করেন । বাংলার তিতুমিরের নেতৃত্বে এই আন্দোলন ধর্মীয় , আর্থসামাজিক ও শেষে ব্রিটিশ – বিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয় ।
আন্দোলনের উদ্দেশ্য : ( ১ ) ইসলামের শুদ্ধিকরণ ও ইসলাম ধর্মের কুসংস্কার দূর করে ‘ তরিকা – ই – মোহম্মদিয়া ‘ প্রতিষ্ঠা করা ; ( ২ ) ভারতকে ‘ দার – উল – হারব ‘ বা বিধর্মীর দেশ থেকে ‘ দার – উল – ইসলাম ‘ বা ইসলামের দেশে পরিণত করা এবং এই উদ্দেশ্যে শিখ ও ইংরেজ বিরোধিতা করা ; ( ৩ ) অত্যাচারী সামস্তদের শোষণ থেকে কৃষকদের মুক্ত করা ; ( ৪ ) নিম্নবর্গের মানুষদের আর্থিক সংকট থেকে মুক্ত করা এবং ( ৫ ) ইংরেজি শিক্ষা ও সরকারি উচ্চপদগুলিতে ইংরেজদের একচেটিয়া আধিপত্যের বিরোধিতা করা ।
সৈয়দ আহম্মদের ভূমিকা : শাহ ওয়ালিউল্লাহ ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলনের সূচনা করলেও এই আন্দোলনের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রায়বেরিলির সৈয়দ আহম্মদ ব্রেলভি ( ১৭৬৬-১৮৩১ খ্রিস্টাব্দ ) । তিনি এই আন্দোলনের বিস্তার ঘটাতে— প্রথমত , ভারতের নানা স্থানে বিশেষ করে কলকাতায় আবদুল ওয়াহাবের বাণী প্রচার করেন এবং পাটনায় ওয়াহাবিদের প্রধান কেন্দ্র স্থাপন করেন । দ্বিতীয়ত , চার খলিফা বা আঞ্চলিক শাসকদের মাধ্যমে ভারতে এর সংগঠন বিস্তৃত হয় । ব্রিটিশের বিরুদ্ধে জেহাদের মাধ্যমে তিনি ভারতকে ‘ দার – উল – ইসলাম ‘ – এ পরিণত করতে চান । তৃতীয়ত , উত্তর – পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে তাঁর প্রভাব বৃদ্ধি পায় । ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে শিখদের বিরুদ্ধে বালাকোটার যুদ্ধে তাঁর মৃত্যু হয় ।
তিতুমিরের ভূমিকা : বাংলার ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রাণপুরুষ তিতুমির এই আন্দোলনের বিস্তার ঘটাতে – প্রথমত , মহাজন , জমিদার , নীলকর ও তাদের সহযোগী ইংরেজদের অত্যাচার ও দমননীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান । দ্বিতীয়ত , তিনি নারকেলবেড়িয়ায় বাঁশের কেল্লায় সদর দপ্তর স্থাপন করে আশপাশের জমিদারদের কাছে কর দাবি করেন । তৃতীয়ত , ইংরেজ শাসনের অবসানের কথা ঘোষণা করে তিতুমির নিজেকে ‘ বাদশাহ ‘ রূপে তুলে ধরেন । চতুর্থত , শেষপর্যন্ত ইংরেজ সেনাবাহিনীর কামানের আঘাতে বাঁশের কেল্লা ধ্বংস হয় এবং তিতুমিরের মৃত্যু হয় ।
অন্যত্র আন্দোলনের প্রসার : ওয়াহাবি আন্দোলনকে এনায়েত্ আলি ফরিদপুর , নদিয়া , রাজশাহী ও পাটনায় ছড়িয়ে দেন । যশোহর , ঢাকা , ফরিদপুর , নদিয়া , পাবনা , রংপুর , নোয়াখালি , ময়মনসিংহ , ত্রিপুরা ও শ্রীহট্টে এই আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে ।
ব্যর্থতার কারণ : গঠনমূলক কর্মসূচির অভাব , উপযুক্ত সংগঠনের অভাব , ধর্মীয় আন্দোলন হিসেবে শুরু হলেও ক্রমশ এই আন্দোলনের রাজনৈতিক রূপ পরিগ্রহ করা , আন্দোলনে হিন্দু সমাজের যোগদান না করা , আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের অভাব , অভিজাত শ্রেণির সাহায্য না পাওয়া , সরকারের দমননীতি ও বিভেদ নীতি ইত্যাদি কারণে এই আন্দোলন শেষপর্যন্ত ব্যর্থ হয় ।
গুরুত্ব : পরবর্তী আন্দোলনগুলির ওপর ওয়াহাবি আন্দোলনের যথেষ্ট প্রভাব পড়েছিল , যেমন— প্রথমত , এই আন্দোলনের হাত ধরেই ভারতে সর্বপ্রথম মুসলিম সমাজের সংস্কার শুরু হয় । দ্বিতীয়ত , ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে মতাদর্শ গড়ে তুলে এটি ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র রূপ পরিগ্রহ করে , যা আগামী দিনের নতুন পথের সন্ধান দিয়েছিল ।
6. ফরাজি আন্দোলনের ওপর একটি প্রবন্ধ রচনা করো ।
অথবা , ফরাজি আন্দোলনের সূচনা ও প্রসার আলোচনা করো ।
Ans: ভূমিকা : ঊনবিংশ শতকের প্রথমার্ধে কৃষক বিদ্রোহের ইতিহাসে মুসলিম সম্প্রদায়ের ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ । ফরাজি আন্দোলন হল এইরকমই একটি কৃষক বিদ্রোহ ।
আন্দোলনের উৎপত্তি : পূর্ববঙ্গের ফরিদপুর নিবাসী হাজি শরিয়ত উল্লাহ মুসলিম ধর্মের সংস্কারের জন্য ফরাজি আন্দোলনের সূচনা করেন । তিনি ব্রিটিশ – শাসিত ভারতবর্ষকে ‘ দার – উল – হারব ’ বা বিধর্মীদের দেশ বলে অভিহিত করেন । ইসলামের আদি ও অকৃত্রিম আদর্শের পুনরুজ্জীবন ঘটিয়ে বাংলাদেশকে তিনি ‘ দার – উল – ইসলাম ‘ – এ পরিণত করতে চেয়েছিলেন । পরবর্তীকালে এই বিদ্রোহ কৃষক বিদ্রোহের চরিত্র নেয় ।
আদর্শ : এই আন্দোলনের মূল আদর্শ ছিল- ( ১ ) ইসলাম আদর্শ বিরোধী সকল আচার – অনুষ্ঠান , রীতিনীতি ও কুসংস্কার বর্জন করা , ( ২ ) ইসলামের সাম্যের আদর্শকে প্রতিষ্ঠা করা এবং ( ৩ ) ভারতবর্ষকে ‘ দার – উল – ইসলামে ‘ পরিণত করা ।
উদ্দেশ্য : কোরানের পবিত্র আদর্শ অনুসরণ করে চলা , ইসলামীয় ভাবধারার পুনরুজ্জীবন করা , জমিদারদের শোষণের হাত থেকে কৃষকদের মুক্ত করা , ব্রিটিশ শাসনের উচ্ছেদ করে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করা , জমিদার মহাজনের বিরোধিতা করা , সাম্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করাই ছিল এই আন্দোলনের লক্ষ্য ।
দুদু মিঞার ভূমিকা : ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে শরিয়ত উল্লাহের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র দুদু মিঞা ( মোহম্মদ মহসীন ) ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ফরাজি আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন । তিনি– ( ১ ) বাহাদুরপুরে প্রধান কার্যালয় স্থাপন করে , লাঠিয়াল ও গুপ্তচর বাহিনী গঠন করেন ; ( ২ ) তাঁর প্রভাবাধীন এলাকাকে কয়েকটি হল্কায় বিভক্ত করে খলিফা নিয়োগ করেন এবং ( ৩ ) জমিদার নীলকরদের বিরুদ্ধে আক্রমণ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করে ফরাজি আন্দোলনকে ধর্মীয় আন্দোলন থেকে আর্থসামাজিক – রাজনৈতিক আন্দোলনে উন্নীত করেন । আতঙ্কিত জমিদার , মহাজন , নীলকরদের চাপে ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে , ১৮৪১ খ্রিস্টাব্দে এবং ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে দুদু মিঞাকে গ্রেপ্তার করা হলেও প্রমাণাভাবে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় । ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে দুদু মিঞার মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র নোয়া মিঞা এই আন্দোলনে ধর্মীয় আদর্শকে গুরুত্ব প্রদান করলে এর গুরুত্ব কমে যায় ।
প্রকৃতি : ঢাকা , বরিশাল , ফরিদপুর , ময়মনসিংহ , ত্রিপুরা প্রভৃতি জেলায় এই আন্দোলন বিস্তার লাভ করে । ফরাজি আন্দোলন ইসলাম ধর্মের সংস্কার সাধনের উদ্দেশ্যে শুরু হলেও ক্রমশ তা জমিদার – বিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয় । অধিকাংশ জমিদাররাই হিন্দু হলেও ফরাজি আন্দোলন সম্পূর্ণভাবে হিন্দু – বিরোধী সাম্প্রদায়িক আন্দোলন ছিল না , কারণ এই আন্দোলনে মুসলমান কৃষকদের পাশাপাশি বহু হিন্দু কৃষকও শামিল হয়েছিল ।
ব্যর্থতার কারণ : দুদু মিঞার মৃত্যুর পর যোগ্য নেতৃত্বের অভাব , ধর্মীয় সংকীর্ণতা , রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবে আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে । এ ছাড়া সাধারণ লোককে জোর করে দলভুক্ত করা , অর্থ আদায় , সরকারি দমননীতি প্রভৃতি কারণে ফরাজি আন্দোলন ব্যর্থ হয়ে যায় ।
গুরুত্ব : ফরাজি আন্দোলন শেষপর্যন্ত ব্যর্থ হলেও ব্রিটিশ বিরোধী কৃষক আন্দোলন হিসেবে এই আন্দোলন ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ । ড . অভিজিৎ দত্ত বলেছেন , ফরাজিরা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের উচ্ছেদ করতে না পারলেও বাংলা থেকে ব্রিটিশ শাসনের উচ্ছেদ কামনা করেছিল ।
7. দুদু মিঞা স্মরণীয় কেন ?
Ans: ভূমিকা : ভারতে উনিশ শতকে মুসলিম সমাজের পুনরুজ্জীবন ও সংস্কার সাধনের লক্ষ্যে গড়ে ওঠা ফরাজি আন্দোলনের জনক শরিয়ত উল্লাহের মৃত্যুর পর আন্দোলনের দায়িত্ব নেন তাঁর পুত্র দুদু মিঞা ( ১৮৩৭–১৮৬২ খ্রিস্টাব্দ ) ।
দুদু মিঞা ও ফরাজি আন্দোলন : দুদু মিঞার প্রকৃত নাম মহম্মদ মহসীন । ইতিহাসে তিনি যেসব কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন , সেগুলি হল আন্দোলনের প্রাণপুরুষ : দুদু মিঞার নেতৃত্বেই পূর্ববঙ্গের অত্যাচারী জমিদার , নীলকর ও তাদের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ফরাজি আন্দোলন আরও সুসংহতভাবে পরিচালিত হয় । তার নেতৃত্বে ফরাজি আন্দোলন ধর্মসংস্কার আন্দোলন থেকে ধর্মীয় – সামাজিক রাজনৈতিক আন্দোলনের রূপ নেয় ।
দুদু মিঞার আহ্বান : দুদু মিঞা ঘোষণা করেন , ‘ জমির মালিক আল্লাহ , তাই জমিদারদের খাজনা আদায় করার কোনো অধিকার নেই । ‘ তিনি তার সমর্থকদের কাছে জমিদারদের খাজনা দেওয়ার , নীলচাষ না করার এবং বিদেশি শাসক ইংরেজদের অগ্রাহ্য করার আহ্বান জানান । তার এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে পূর্ববঙ্গের লক্ষ লক্ষ দরিদ্র কৃষক তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে ।
ফরাজি – খিলাফত : দুদু মিঞা ফরাজি খিলাফত নামে একটি প্রশাসন গড়ে তোলেন । এই প্রশাসনের শীর্ষে ছিলেন তিনি স্বয়ং । তাঁকে বলা হত ওস্তাদ ( শীর্ষ প্রশাসক ) । তাঁর সাহায্যকারীদের বলা হত খলিফা । প্রশাসনিক কার্যকে সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য তিনি সমগ্র পূর্ববঙ্গকে কয়েকটি অঞ্চল বা হল্কায় ভাগ করেন এবং প্রত্যেক হল্কায় একজন করে খলিফা নিযুক্ত করেন । দুদু মিঞার নির্দেশমতো নিজের এলাকার কৃষকদের সংগঠিত করা , জমিদার ও নীলকরদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং আসন্ন সংগ্রামের প্রস্তুতি হিসেবে অর্থ সংগ্রহ করা ছিল খলিফাদের প্রধান কাজ ।
জমিদার ও নীলকরদের আক্রমণ : লাঠিয়াল ও গুপ্তচর বাহিনী গঠন করে দুদু মিঞা নিজ প্রভাবাধীন এলাকায় কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ করে জমিদার ও নীলকরদের আক্রমণ করেন । জমিদার ও নীলকরদের প্রচেষ্টায় ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে দুদু মিঞাকে ব্রিটিশ সরকার গ্রেপ্তার করে তাঁকে জেলে বন্দি করে । উচ্চতর আদালতের নির্দেশে তিনি ছাড়া পান ।
মূল্যায়ন : দুদু মিঞা ফরাজি আন্দোলনকে ধর্মীয় বৃত্তের বাইরে বের করে যেভাবে একটি সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করেন সেজন্য তিনি ভারতবাসীর মনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন ।
8. ফরাজি ও ওয়াহাবি আন্দোলনের পার্থক্যগুলি ম আলোচনা করো ।
Ans: ভূমিকা : ভারতে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপটে উনিশ শতকে ইসলামীয় পুনরুজ্জীবনের জন্য যে সমস্ত আন্দোলন হয়েছিল তার মধ্যে ফরাজি ও ওয়াহাবি আন্দোলন ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।
পার্থক্য : দুটি আন্দোলনের মধ্যে যথেষ্ট মিল থাকলেও উভয় আন্দোলনের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য লক্ষ করা যায় , যেমন
ব্রিটিশ বিরোধিতা : ওয়াহাবি আন্দোলন তথা তিতুমিরের আন্দোলন যতটা ইংরেজ – বিরোধী ছিল ফরাজি আন্দোলন ততটা ছিল না । তিতুমির ব্রিটিশ শাসনের উচ্ছেদের পক্ষে ছিলেন । অন্যদিকে , দুদু মিঞা সরকারের কাছে এক আর্জিতে জানান যে , জমিদার ও নীলকরদের বিরুদ্ধে তাদের সংগ্রাম , ব্রিটিশ রাজ সম্পর্কে তাদের কোনো বিদ্বেষ নেই ।
স্বাধীনতার ধারণা : তিতুমির ব্রিটিশ শাসনকে গুরুত্ব না দিয়ে স্বাধীন ওয়াহাবি রাজ্য ঘোষণা করেন । অন্যদিকে , দুদু মিঞা খিলাফত প্রশাসন নামক একটি স্বশাসিত প্রশাসন গড়ে তোলেন ।
আন্দোলনের পরিধি : ফরাজি আন্দোলন মূলত বাংলাদেশে বিস্তার লাভ করেছিল কিন্তু ওয়াহাবি আন্দোলনের পরিধি ছিল অনেক বিস্তৃত ।
ধর্মীয় আচরণ : ওয়াহাবিদের বলা হত জুম্মাওয়ালা , কেননা তাঁরা নামাজ ও জুম্মা পাঠ করতেন । অন্যদিকে ফরাজিদের বলা হত বে – জুম্মাওয়ালা । কারণ তাঁদের মতে , ইংরেজ অধিকৃত ভারতবর্ষ ছিল ‘ দার – উল – হারব ‘ । সুতরাং এই অবস্থায় ভারতে জুম্মা প্রার্থনা উচিত নয় বলে তাঁরা মনে করতেন ।
সাম্যের ধারণা : ওয়াহাবিরা প্রত্যেক ওয়াহাবিকে সমান মনে না করলেও ফরাজি মতে সকল ফরাজি ছিল সমান । শীর্ষ নেতৃত্ব তিতুমির ও তাঁর অনুগামীরা সৈয়দ আহম্মদকে গুরু বলে মনে করতেন , কিন্তু ফরাজিরা সৈয়দ আহম্মদের গুরু শাহ ওয়ালিউল্লাহের মতাবলম্বী ছিল ।
মূল্যায়ন : দুটি আন্দোলনের মধ্যে কিছু কিছু পার্থক্য থাকলেও এই আন্দোলন দুটির হাত ধরেই মুসলমান সমাজের সংস্কার শুরু হয় যা পরবর্তীকালের আন্দোলনগুলির পথপ্রদর্শক রূপে চিহ্নিত হয়ে আছে ।
9. ফরাজি ও ওয়াহাবি আন্দোলনের মধ্যে সাদৃশ্যগুলি আলোচনা করো ।
Ans: ভূমিকা : ভারতে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপটে উনিশ শতকে ইসলামীয় পুনরুজ্জীবনের জন্য যে সমস্ত আন্দোলন হয়েছিল তার মধ্যে ফরাজি ও ওয়াহাবি আন্দোলন ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ । ফরাজি ও ওয়াহাবি আন্দোলনের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য থাকলেও উভয় আন্দোলনের মধ্যে যথেষ্ট সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয় ।
বহিরাগত ধারণা : দুটি আন্দোলনেরই প্রেরণা আসে ভারতের বাইরে থেকে । ফরাজি আন্দোলনের প্রবর্তক হাজি শরিয়ত উল্লাহ মক্কা থেকে ফিরে এসে ইসলাম ধর্মের আদিম ও অকৃত্রিম আদর্শে মনোনিবেশ করেন ; অন্যদিকে ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রবর্তক ইবন আব্দুল ওয়াহাব যিনি ছিলেন আরব দেশের ধর্ম সংস্কারক অর্থাৎ এই আন্দোলনের সূত্রপাতও আরব দেশে ।
ইসলামের পুনরুজ্জীবন : দুটি আন্দোলনই ছিল ইসলাম ধর্মের পুনরুজ্জীবনবাদী আন্দোলন । ইসলাম ধর্মের কু – প্রথা দূর করে শুদ্ধিকরণের মাধ্যমে এই ধর্মের পুনরুজ্জীবন ছিল দুটি আন্দোলনেরই লক্ষ্য ।
সামন্ততন্ত্রের বিরোধিতা : আর্থসামাজিক দিক থেকে দুটি আন্দোলনই ছিল সামন্ততন্ত্র – বিরোধী । দুটি আন্দোলনেই ধর্মীয় জাগরণের মধ্যে আর্থসামাজিক শোষণ থেকে মুক্তির পথ খোঁজা হয়েছিল ।
সাম্প্রদায়িক ধারণায় আক্রান্ত : দুটি আন্দোলনেই পরবর্তীকালে সাম্প্রদায়িক প্রভাব ভীষণভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল । একদিকে তিতুমিরের আন্দোলনে যেমন সাম্প্রদায়িক মনোভাব ছিল তেমনি ফরাজি আন্দোলনের নেতা নোয়া মিঞার আন্দোলনের একইরকম সাম্প্রদায়িক ভাবধারা পরিলক্ষিত হয় ।
অলৌকিক ব্যক্তিত্ব আরোপ : ফরাজি ও ওয়াহাবি দুটি আন্দোলনে দুদু মিঞা ও তিতুমির উভয়ই নিজেদের অলৌকিক শক্তির অধিকারী বলে মনে করতেন ।
ব্রিটিশ – বিরোধিতা : দুটি আন্দোলনেই ব্রিটিশ – বিরোধিতা লক্ষ করা যায় । তবে ফরাজি আন্দোলনে ওয়াহাবিদের মতো তীব্র ব্রিটিশ – বিরোধিতা ছিল না । সন্ত্রাসের আশ্রয় : উভয় আন্দোলনের মধ্যেই নিজেদের মতবাদ মতাদর্শ চাপিয়ে দেওয়ার জন্য স্ব – ধর্মাবলম্বী মুসলমানদের ওপর জোরজুলুম করা হয় । বিরোধী মুসলমানদের দমন করার জন্য উভয় আন্দোলনের আন্দোলনকারীরাই সন্ত্রাসের আশ্রয় নেয় ।
নিম্নবর্গের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ : দুটি আন্দোলনেই দরিদ্র কৃষক , জোলা সম্প্রদায়ের অভূতপূর্ব অংশগ্রহণ লক্ষ করা যায় , যাদের উদ্দেশ্য ছিল শোষণের হাত থেকে মুক্তি । মূল্যায়ন : ফরাজি ও ওয়াহাবি আন্দোলনের মধ্যে যথেষ্ট সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হলেও ব্রিটিশ – শাসিত ভারতে দুটি আন্দোলনই ছিল গুরুত্বপূর্ণ ।
10. নীল বিদ্রোহ ঘটেছিল কেন ? এই বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করো ।
অথবা , নীল বিদ্রোহ কীভাবে নীলকরদের বিরুদ্ধে আঘাত হেনেছিল ?
Ans: ভূমিকা প্রথম অংশ : নীল বিদ্রোহের কারণ : ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে যেসব গণআন্দোলন জাতীয় জাগরণে সর্বাধিক সাহায্য করেছিল তাদের মধ্যে নীল বিদ্রোহ ( ১৮৫৯-৬০ খ্রি . ) অন্যতম ।
বিদ্রোহের কারণ : ইংরেজ নীলকরদের অমানুষিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংঘটিত নীল বিদ্রোহের কারণগুলি হল _ অলাভজনক নীলচাষ : ইউরোপীয় নীলকররা ধান বা পাট চাষের বদলে চাষিকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে অলাভজনক নীলচাষে বাধ্য করলে নীলচাষি – নীলকর বিরোধ তীব্র হয় । ২ দাদন প্রথা : নীলকররা নীলচাষিকে চাষের জন্য বিঘা প্রতি দু’টাকা ‘ দাদন ‘ বা অগ্রিম নিতে বাধ্য করে ও বলপূর্বক নীলচাষে বাধ্য করে । একবার দাদন গ্রহণ করলে নীলচাষিদের দুর্দশার শেষ থাকত না ।
উপযুক্ত মূল্যের অভাব : উৎপন্ন নীলের উপযুক্ত মূল্য না পাওয়ায় তারা বংশানুক্রমে আর্থিক দায়গ্রস্ত থাকত , এমনকি অনেক সময়ে নীলকরদের বেগার শ্রমদান করতেও বাধ্য হত ।
নীলকরদের অত্যাচার : নীলকুঠির লাঠিয়ালরা অবাধ্য চাষিদের ওপর হামলা , তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া , চাষির স্ত্রী – কন্যাদের অপহরণ ও লাঞ্ছনা , কৃষকদের গবাদি পশু আটকে রাখা ইত্যাদি নানা নির্যাতন চালাত । এই রকম অত্যাচার প্রায় দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর ধরে চলেছিল । দ্বিতীয় অংশ
বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য : ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দের শেষ দিকে কৃয়নগরের কাছে চৌগাছা গ্রামে কৃষক বিদ্রোহ শুরু হয় । ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাস থেকে বিদ্রোহের আগুন নদিয়া , যশোহর , বারাসত , পাবনা , রাজশাহী , মালদহ , ফরিদপুর পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে । প্রায় ৬০ লক্ষ কৃষক এই বিদ্রোহে যোগ দেয় । এই বিদ্রোহে যে বৈশিষ্ট্যগুলি লক্ষ করা যায় , সেগুলি হল—
কৃষকদের সংঘবদ্ধ প্রতিরোধ : অন্যান্য কৃষক আন্দোলনের তুলনায় নীলবিদ্রোহের তীব্রতা ছিল ব্যাপকতর । এই স্বতঃস্ফূর্ত বিদ্রোহ প্রসঙ্গে ‘ ক্যালকাটা রিভিউ ‘ পত্রিকা মন্তব্য করেছিল ‘ এটা একটা বিদ্রোহ — সমস্ত দেশই এতে যোগ দিয়েছে ।
জমিদারদের অংশগ্রহণ : অন্যান্য কৃষক বিদ্রোহের মতো নীলবিদ্রোহ জমিদার বা মহাজন – বিরোধী আন্দোলন ছিল না , বরং রানাঘাটের শ্রীগোপাল পাল , সাধুহাটির মথুরানাথ আচার্য প্রমুখ বেশ কিছু জমিদার এই বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করেন । ত শিক্ষিত মধ্যবিত্তদের সমর্থন : শিশিরকুমার ঘোষ , গিরিশ ঘোষ , মনমোহন ঘোষ , কিশোরীচাঁদ মিত্র প্রমুখ শিক্ষিত মধ্যবিত্ত ব্যক্তিরা নীলবিদ্রোহকে সমর্থন করেন । হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় , দীনবন্ধু মিত্র , মাইকেল মধুসূদন দত্ত প্রমুখ একদিকে যেমন নীল চাষিদের মামলা – মোকদ্দমার খরচ বহন করতেন , অন্যদিকে তাঁদের পত্রপত্রিকার মাধ্যমে নীলকরদের অত্যাচারের কাহিনি জনসাধারণের কাছে তুলে ধরেন ।
হিন্দু – মুসলিম ঐক্য : নীলবিদ্রোহ কোনোভাবেই সাম্প্রদায়িক আন্দোলন ছিল না । নিপীড়িত হিন্দু – মুসলমান কৃষক একযোগে নীলকরদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় ।
সংবাদপত্রের ইতিবাচক ভূমিকা : ‘ গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা ‘ , ‘ হিন্দু প্যাট্রিয়ট ’ , ‘ সোমপ্রকাশ ’ প্রভৃতি পত্রপত্রিকা নীলকরদের অত্যাচারের কাহিনি প্রকাশ করে নীল বিদ্রোহের ইতিবাচক জনমত গঠনে সহযোগিতা করে ।
অন্যান্য বৈশিষ্ট্য : নীল বিদ্রোহের অন্যান্য বৈশিষ্ট্য হল ( ১ ) এটি শুরুতেই হিংসাত্মক বিদ্রোহ ছিল না ; ( ২ ) নীল বিদ্রোহ শুরুর পরেও বাংলার গভর্নর পিটার গ্রান্টের সরকারি সমর্থন লাভ করেছিল ; ( ৩ ) এই বিদ্রোহ জমিদার ও মহাজনবিরোধী ছিল না বরং তা ছিল নীলকর বিরোধী বিদ্রোহ ।
Madhyamik Suggestion 2026 | মাধ্যমিক সাজেশন ২০২৬
Keywords:
Madhyamik History Protirodh o Bidroho Question and Answer,মাধ্যমিক ইতিহাস ২০২৬, ইতিহাস অধ্যায় ৩ প্রশ্নোত্তর, প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ প্রশ্ন ও উত্তর, Madhyamik History Chapter 3, Protirodh o Bidroho Bengali, Madhyamik History 2026 suggestion, মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর, ইতিহাস ২০২৬ প্রশ্নোত্তর, Madhyamik history MCQ Bengali, Chapter 3 History Madhyamik, ইতিহাস প্রশ্নোত্তর বাংলা মাধ্যমিক, Madhyamik 2026 History Protirodh o Bidroho, Class 10 History Bengali Q&A, মাধ্যমিক ইতিহাস অধ্যায় ৩ সাজেশন, Madhyamik History SAQ LAQ MCQ, প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ বহুনির্বাচনি প্রশ্ন, Madhyamik 2026 history notes Bengali, Madhyamik History Chapter wise preparation, মাধ্যমিক ইতিহাস ২০২৬ অধ্যায় ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর, ইতিহাস প্রস্তুতি মাধ্যমিক পরীক্ষা, Madhyamik History Protirodh o Bidroho Question and Answer,