---Advertisement---

Madhyamik Bengali Pather Dabi Suggestion 2026 l পথের দাবী গল্প (শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়) মাধ্যমিক বাংলা

By Siksakul

Updated on:

Madhyamik Bengali Pather Dabi Suggestion 2026 l পথের দাবী গল্প (শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়) মাধ্যমিক বাংলা
---Advertisement---

Madhyamik Bengali Pather Dabi Suggestion l পথের দাবী গল্প (শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়) মাধ্যমিক বাংলা

পথের দাবী গল্প (শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়) মাধ্যমিক বাংলা | Madhyamik Bengali Pather Dabi Suggestion : প্রিয় বন্ধুরা, আজকের আলোচ্য বিষয় পথের দাবী গল্প (শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়) মাধ্যমিক বাংলা | Madhyamik Bengali Pather Dabi Suggestion নিচে দেওয়া হলো। এই পথের দাবী গল্প (শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়) মাধ্যমিক বাংলা – Madhyamik Bengali Pather Dabi Suggestion থেকে MCQ, SAQ, Descriptive Question and Answer, Suggestions গুলি আগামী মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 আপনার যারা পথের দাবী গল্প (শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়) মাধ্যমিক দশম শ্রেণীর বাংলা – WBBSE Madhyamik Class 10 Bengali Pather Dabi Suggestion খুঁজে চলেছেন, তারা নিচে দেওয়া প্রশ্ন ও উত্তর গুলো ভালো করে পড়তে পারেন।

পথের দাবী গল্প (শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়) মাধ্যমিক বাংলা | Madhyamik Bengali Pather Dabi Suggestion | West Bengal Class 10 Pather Dabi

Table of Contents

১. সব্যসাচীর ছদ্মনাম কী ছিল ? 

(ক) গিরীশ পাত্র , 

(খ) গিরীশ পূর্ণপাত্র ,

(গ) গিরীশ মহাপাত্র , 

(ঘ) গিরীশ তলওয়ারকর ।

উত্তরঃ (গ) গিরীশ মহাপাত্র ; 

২. ‘ গিরীশ মহাপাত্রের ট্যাকে পাওয়া গিয়েছিল – 

(ক) দুটি টাকা ও গণ্ডা ছয়েক পয়সা , 

(খ) একটি টাকা ও গণ্ডা – চারেক পয়সা , 

(গ) দুটি টাকা ও গণ্ডা – চারেক পয়সা , 

(ঘ) একটি টাকা ও গণ্ডা – ছয়েক পয়সা । 

উত্তরঃ (ঘ) একটি টাকা ও গণ্ডা ছয়েক পয়সা ; 

৩. ‘ তবে এ বস্তুটি পকেটে কেন ? ‘ বস্তুটি হল – 

(ক) একটি টাকা , 

(খ) কাঠের পেনসিল ,

(গ) গাঁজার কলিকা , 

ঘ) একটি স্কেল ।

উত্তরঃ (গ) গাঁজার কলিকা ; 

৪. “ বুড়োমানুষের কথাটা শুনো । ” ” বুড়োমানুষ’টি হলেন- 

(ক) জগদীশবাবু ,

(খ) গিরীশ মহাপাত্র ,

(গ) নিমাইবাবু ,

(ঘ) অপূর্ব । 

উত্তরঃ (গ) নিমাইবাবু : 

৫. ” দয়ার সাগর ! পরকে সেজে দি , নিজে খাইনে । ” বক্তা হলেন – 

(ক) জগদীশবাবু 

(খ) নিমাইবাবু ,

(গ) অপূর্ব , 

(ঘ) গিরীশ মহাপাত্র । 

উত্তরঃ (ক) জগদীশবাবু ;

৬. ‘ অপূর্ব রাজি হইয়াছিল । ‘ অপূর্ব রাজি হয়েছিল যার অনুরোধে – 

(ক) কাকিমা , 

(খ) বৌঠান ,

(গ) খ্রিস্টান মেয়ে , 

(ঘ) রামদাসের স্ত্রী ।

উত্তরঃ (ঘ) রামদাসের স্ত্রী ; 

৭. ‘ কিন্তু বুনো হাঁস ধরাই যে এদের কাজ ; ‘ – বক্তা হলেন – 

(ক) অপূর্ব , 

(খ) রামদাস ,

(গ) জগদীশবাবু , 

(ঘ) নিমাইবাবু ।

উত্তরঃ (খ) রামদাস ; 

৮. অপূর্বর পিতার বন্ধু হলেন- 

(ক) জগদীশবাবু ,

(খ) রামদাস , 

(গ) নিমাইবাবু ,

(ঘ) গিরীশ মহাপাত্র । 

উত্তরঃ (গ) নিমাইবাবু ;

৯. এমনি তাদের অভ্যাস হয়ে গেছে । ‘ কাদের অভ্যাস হয়ে গেছে ? 

(ক) ভারতীয়দের , 

(খ) ইংরেজদের ,

(গ) ইউরোপীয়দের , 

(ঘ) জার্মানদের । 

উত্তরঃ (ক) ভারতীয়দের ; 

১০. গিরীশ মহাপাত্রের সাথে অপূর্বর পুনরায় কোথায় দেখা হয়েছিল ? 

(ক) পুলিশ – স্টেশনে , 

(খ) জাহাজ ঘাটায় , 

(গ) রেল স্টেশনে , 

(ঘ) বিমান বন্দরে । 

উত্তরঃ (গ) রেল স্টেশনে ; 

১১. ‘ আপাতত ভামো যাচ্চি ‘ বক্তা হল – 

(ক) গিরীশ , 

(খ) রামদাস , 

(গ) অপূর্ব , 

(ঘ) নিমাইবাবু । 

উত্তরঃ (গ) অপূর্ব ;

১২. ‘ তুমিতো ইউরোপিয়ান নও । ‘ কে অপূর্বকে কথাটি বলেছিলেন ? 

(ক) বর্মার জেলাশাসক , 

(খ) বর্মার সাব – ইনস্পেক্টর , 

(গ) রেঙ্গুনের সাব – ইনস্পেক্টর , 

(ঘ) বড়োসাহেব । 

উত্তরঃ (খ) বর্মার সাব – ইনস্পেক্টর ; 

১৩. ‘ রাত্রের মেল ট্রেনটার প্রতি একটু দৃষ্টি রেখো , সে যে বর্মায় এসেছে এখবর সত্য । ‘ বক্তা – 

(ক) জগদীশবাবু , 

(খ) নিমাইবাবু ,

(গ) রামদাস তলওয়ারকর , 

(ঘ) অপূর্ব । 

উত্তরঃ (খ) নিমাইবাবু 

১৪. ‘ আমি বাবু ভারী ধর্মভীরু মানুষ ‘ কথাটি বলেছে- 

(ক) গিরীশ মহাপাত্র , 

(খ) নিমাইবাবু ,

(গ) অপূর্ব , 

(ঘ) রামদাস ।

উত্তরঃ (ক) গিরীশ মহাপাত্র ; 

১৫. পথের দাবী ‘ কাহিনিটি যে উপন্যাসের অংশবিশেষ , তা হল – 

(ক) ‘ পল্লীসমাজ ‘ , 

(খ) ‘ পথের দাবী ‘ , 

(গ) ‘ অরক্ষণীয়া ‘ , 

(ঘ) শ্রীকান্ত ।

উত্তরঃ (খ) ‘ পথের দাবী ‘ ; 

১৬. হলঘরে মোট – ঘাট নিয়ে বসেছিল ______ বাঙালি।

(ক) জন – চারেক , 

(খ) জন – পাঁচেক ,

(গ) জন – ছয়েক , 

(ঘ) জন – সাতেক ।

উত্তরঃ (গ) জন ছয়েক 

১৭. পোলিটিক্যাল সাসপেক্টের নাম – 

(ক) অপূর্ব রায় , 

(খ) সব্যসাচী চক্রবর্তী ,

(গ) সব্যসাচী মল্লিক , 

(ঘ) নিমাইবাবু ।

উত্তরঃ (গ) সব্যসাচী মল্লিক : 

১৮. পুলিশ কাকে খুঁজছিল ? 

(ক) রামদাসকে , 

(খ) অপূর্বকে ,

(গ) সব্যসাচী মল্লিককে ,

(ঘ) গিরীশ মহাপাত্রকে ।

উত্তরঃ (গ) সব্যসাচী মল্লিককে ; 

১৯. সব্যসাচী মল্লিকের চোখের দৃষ্টিতে কী প্রবেশ করতে সাহস করে না ? 

(ক) জরা , 

(খ) মৃত্যু , 

(গ) আনন্দ , 

(ঘ) দুঃখ । 

উত্তরঃ (খ) মৃত্যু ; 

২০. ‘ সহাস্যে কহিলেন , বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে , কিন্তু শখ ষোলোআনাই বজায় আছে তা স্বীকার করতে হবে । কথাটি বলেছেন – 

(ক) পুলিশ অফিসার , 

(খ) অপূর্ব ,

(গ) জগদীশবাবু 

(ঘ) নিমাইবাবু । 

উত্তরঃ (ঘ) নিমাইবাবু : 

২১. যাকে খুঁজছেন সে যে এ নয় , তার আমি জামিন হতে পারি । ‘ বক্তা হলেন- 

(ক) রামদাস , 

(খ) অপূর্ব ,

(গ) জগদীশবাবু 

(ঘ) নিমাইবাবু । 

উত্তরঃ (খ) অপূর্ব : 

পথের দাবী গল্প (শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়) মাধ্যমিক বাংলা | Madhyamik Bengali Pather Dabi (প্রশ্নমান – ১)

১. কিন্তু শখ ষোলোআনাই বজায় আছে কোন্ প্রসঙ্গে বক্তা এমন উক্তি করেছেন ? 

উত্তরঃ ‘ পথের দাবী ‘ রচনাংশ অনুসারে বর্মা পুলিশের বড়োকর্তা নিমাইবাবু পুলিশের চোখে সন্দেহভাজন হিসেবে ধৃত গিরীশ মহাপাত্রের বেশভূষার বাহার ও পরিপাট্য দেখে ; সহাস্যে অপূর্বর দৃষ্টি আকর্ষণ করে এমন মন্তব্য করেছিলেন । 

২. ” তবে এ বস্তুটি পকেটে কেন ? ‘ – কোন বস্তুটি পকেটে ছিল ? 

উত্তরঃ ‘ পথের দাবী ‘ রচনাংশ অনুসারে গিরীশ মহাপাত্রের পকেট থেকে পাওয়া গাঁজার কলকের কথা নিমাইবাবু বলেছেন । 

৩. রামদাস ও অপূর্ব কেন একসঙ্গে জলযোগ করত? 

উত্তরঃ ‘ পথের দাবী ‘ রচনাংশ অনুসারে , অপূর্বর সহকর্মী রামদাস তলওয়ারকর – এর স্ত্রী অপূর্বকে সনির্বন্ধ অনুরোধ করেছিল যতদিন না পর্যন্ত মা বা অন্য কোনো মহিলা এদেশে এসে তার বাসায় উপযুক্ত ব্যবস্থাদি করছে , ততদিন এই ছোটোবোনের কাছেই সামান্য জলযোগ গ্রহণ করতে হবে । 

৪. অপূর্ব সহাস্যে কহিল ‘ কী কহিল ? 

উত্তরঃ রেঙ্গুন রেলস্টেশনে অপূর্বর সঙ্গে গিরীশ মহাপাত্রের দ্বিতীয়বার উত্তর দেখা হয় । গিরীশের প্রশ্নের উত্তর অপূর্ব তার ভামো যাওয়ার কথা জানায় এবং গিরীশ কোথায় যাচ্ছে তা জানতে চায় । 

৫. রামদাস হাসিয়া কহিল ‘ – রামদাস কী বলেছিল? 

উত্তরঃ ‘ পথের দাবী ‘ রচনাংশ অনুসারে রামদাস হেসে অপূর্বকে বলেছিল যে , পুলিশ চোর – ডাকাত ধরার পরিবর্তে বর্তমানে ‘ বুনো হাঁস ‘ তথা দেশপ্রেমিক বিপ্লবীদের ধরতেই বেশি তৎপর । 

৬. পোলিটিক্যাল সাসপেক্টের নাম কী ছিল ? 

উত্তরঃ ‘ পথের দাবী ‘ রচনাংশ অনুসারে পোলিটিক্যাল সাসপেক্টের নাম ছিল সব্যসাচী মল্লিক ।

৭. ‘ পুলিশ – স্টেশনে প্রবেশ করিয়া দেখা গেল ‘ কী দেখা গেল ? 

উত্তরঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘ পথের দাবী পাঠ্যাংশের আলোচ্য অংশে দেখা গেল , পুলিশ স্টেশনের সামনের হলঘরে জনা ছয়েক বাঙালি বসে আছে আর পুলিশ তাদের মালপত্র তল্লাশি করছে । 

৮. লোকটি কাশিতে কাশিতে আসিল ।’— লোকটির পরিচয় দাও । 

উত্তরঃ ‘ পথের দাবী – তে লোকটি বলতে গিরীশ মহাপাত্রের ছদ্মবেশধারী রাজবিদ্রোহী সব্যসাচীর কথা বলা হয়েছে । সন্দেহবশত পুলিশ তাকে আটক করলেও পরে আচার – আচরণ ও বেশভূষা দেখে পুলিশ গিরীশকে ছেড়ে দেয় । 

৯. ‘ ভয় হয় এখানে খেলা চলিবে না , ‘ উক্তিটি পরিস্ফুট করো । 

উত্তরঃ ‘ পথের দাবী রচনাংশে সব্যসাচী বিচিত্র পোশাকের ও অসুস্থতার আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে রাখলেও তার বুদ্ধিদীপ্ত চোখ দুটিকে সে লুকোতে পারেনি । সে চোখের সামনে কপটতার চেয়ে সরে দাঁড়ানো ভালো । 

১০. ‘ দেখি তোমার ট্যাঁকে এবং পকেটে কী আছে ? ” – গিরীশ মহাপাত্রের ট্যাঁকে ও পকেটে কী কী পাওয়া গিয়েছিল ? 

উত্তরঃ গিরীশ মহাপাত্রের ট্যাঁক থেকে পাওয়া যায় একটি টাকা ও গণ্ডার ছয়েক পয়সা । পকেট থেকে পাওয়া যায় একটা লোহার কম্পাস ও ফুটরুল । এ ছাড়া বিড়ি – দেশলাই ও গাঁজার কলকেও পাওয়া যায়। 

১১. ‘ বুড়োমানুষের কথাটা শুনো । বুড়ো মানুষ কোন্ কথা বলেছিলেন ? 

উত্তরঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘ পথের দাবী পাঠ্যাংশে আলোচ্য অংশে বুড়ো মানুষ অর্থাৎ প্রৌঢ় নিমাইবাবু , গিরীশ মহাপাত্রকে তার স্বাস্থ্যের কথা মনে রেখে গাঁজা না – খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন । 

১২. ‘ বাবুজি , এসব কথা বলার দুঃখ আছে । ‘ – কোন্‌ সব কথা বললে দুঃখ হতে পারে বলা হয়েছে? 

উত্তরঃ উদ্ধৃতিটির বক্তা অপূর্বর সহকর্মী তলওয়ারকার । দুঃখ ঘটার মতো কথাগুলি হল ইংরেজ পুলিশ নিমাইবাবু অপূর্বর আত্মীয় হলেও স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মনিয়োগকারী সব্যসাচীই তার বেশি আপন । 

১৩. ‘ মনে হলে দুঃখে লজ্জায় ঘৃণায় নিজেই যেন মাটির সঙ্গে মিশিয়ে যাই । – কোন্ কথা মনে করে অপূর্বের এই মনোবেদনা ? 

উত্তরঃ অপূর্ব বিনাদোষে ফিরিঙ্গি যুবকদের হাতে মার খাওয়া সত্ত্বেও উপস্থিত ভারতীয়রা অভ্যেসবশত এর কোনো প্রতিবাদ করেনি । এই কথা মনে করেই অপূর্বর এই মনোকষ্ট । 

১৪. আমার ইচ্ছা তুমি একবার সবগুলো দেখে আস । ‘ কী দেখে আসার কথা হয়েছে ? 

উত্তরঃ ‘ পথের দাবী পাঠ্যাংশে অপূর্বর বড়োবাবু তাদের ভামো , ম্যান্ডালে , শোএবো , মিকথিলা এবং প্রোমে – এর অফিসগুলির বিশৃঙ্খলা ও গোলযোগের কথা বলেছেন । সেগুলি অপূর্বকে দেখে আসার কথা বলেছেন । 

১৫. ‘ ইহা যে কত বড়ো ভ্রম তাহা কয়েকটা স্টেশন পরেই সে অনুভব করিল ।’- ‘ ভ্রম ‘ টি বলা হয়েছে ? 

উত্তরঃ ভামো যাত্রাকালে ট্রেনে প্রথম শ্রেণির টিকিট থাকায় অপূর্ব রাত্রের ঘুমটা ভালোই হবে ভাবলেও পুলিশি তদন্ত ও ভারতীয় বলে তাকে অসম্মানিত হতে হয় । তার ধারণা ভ্রমে ‘ পরিণত হয় । 

১৬. গিরিশ মহাপাত্রের গায়ে কোন্ ধরনের পোশাক ছিল ? 

উত্তরঃ ‘ পথের দাবী রচনাংশ অনুসারে গিরীশ মহাপাত্রের গায়ে ছিল জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের চুড়িদার পাঞ্জাবি আর তার বুকপকেট থেকে একটি বাঘ আঁকা রুমালের কিছুটা দেখা যাচ্ছিল । তবে কাঁধে উত্তরীয়ের কোনো বালাই ছিল না । 

১৭. “ পরকে সেজে দি , নিজে খাইনে কখন এমন উক্তি করা হয়েছে ? 

উত্তরঃ ‘ পথের দাবী ‘ রচনাংশ অনুসারে খানাতল্লাশির সময় গিরীশ মহাপাত্রের কাছে একটি গাঁজার কলকে পাওয়া যায় । গিরীশ জানায় যে , সে বন্ধুবান্ধবদের গাঁজা দিলেও নিজে খায় না । তার এ কথায় চটে গিয়ে জগদীশবাবু প্রশ্নোদ্‌ধৃত উক্তিটি করেছিলেন । 

১৮. ‘ জগদীশবাবু চটিয়া উঠিয়া কহিলেন ‘ – জগদীশবাবুর চটে ওঠার কারণ কী ছিল ? 

উত্তরঃ ‘ পথের দাবী রচনাংশ অনুসারে গাঁজা খাওয়ার সমস্ত লক্ষণ গিরীশ মহাপাত্রের আচার – আচরণে বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও সে গাঁজা খাওয়ার কথা অস্বীকার করেছিল । এ জন্যেই জগদীশবাবু চটে গিয়েছিলেন ।

সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : পথের দাবী গল্প (শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়) মাধ্যমিক বাংলা | Madhyamik Bengali Pather Dabi (প্রশ্নমান – ৩)

১. কিন্তু পুলিশের দল এমন কাণ্ড করলে , এমন তামাশা দেখালে যে ও – কথা আর মনেই হল না ।’- ‘ ও – কথা ‘ বলতে কোন্ কথার উল্লেখ করা হয়েছে ? পুলিশের দল কী কাণ্ড করেছিল ? 

উত্তরঃ শরৎচন্দ্রের ‘ পথের দাবী উপন্যাস থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশে – ‘ ও – কথা ‘ বলতে অপূর্বর ঘরের চুরির অভিযোগের কথা বলা হয়েছে । – রাজদ্রোহী সব্যসাচীর বর্মায় আসার খবরে সরকারি পুলিশ বর্মা ও । রেঙ্গুনে কর্মরত ও কর্মপ্রার্থী বাঙালিদের আটক করে তল্লাশি চালাতে শুরু করেন । এই সময় গিরীশ মহাপাত্ররূপী সব্যসাচী ধরা পড়লেও তাঁর অদ্ভুত পোশাক ও চেহারা দেখে খানিকটা তাচ্ছিল্যের সঙ্গেই পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয় । একজন বিপ্লবীকে ধরতে পুলিশের কাণ্ডকারখানা দেখে অপূর্ব তার অভিযোগটি জানাতেই ভুলে গিয়েছিলেন । 

২. ‘ আমি ভীরু , কিন্তু তাই বলে অবিচারের দণ্ডভোগ করার অপমান আমাকে কম বাজে না । বক্তা কাকে এ কথা বলেছিলেন ? কোন্ অবিচারের দণ্ডভোগ তাঁকে ব্যথিত করেছিল ? 

উত্তরঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘ পথের দাবী ‘ রচনাংশের কেন্দ্রীয় চরিত্র অপূর্ব তার সহকর্মী রামদাস তলওয়ারকরকে এ কথা বলেছিলেন । 

   ফিরিঙ্গি ছোঁড়ারা বিনাদোষে অপূর্বকে তার নিজের দেশে লাথি মেরে প্ল্যাটফর্ম থেকে বার করে দিয়েছিল । অপূর্ব এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে ইংরেজ স্টেশনমাস্টার শুধুমাত্র ভারতীয় হওয়ার অপরাধে তাকে স্টেশন থেকে তাড়িয়ে দেয় । এই অকারণ লাঞ্ছনাই অপূর্বকে মনে মনে ব্যথিত করেছিল । 

৩. ‘ এমন তো নিত্যনিয়তই ঘটছে । — কোন্ ঘটনার কথা বলা হয়েছে ? 

উত্তরঃ “ পথের দাবী ‘ রচনাংশ অনুসারে উদ্ধৃতাংশে অপূর্বর জীবনের এক অপমানজনক ঘটনার কথা বলা হয়েছে । অকারণে কয়েকজন ফিরিঙ্গি যুবক অপূর্বকে লাথি মেরে রেলওয়ে প্ল্যাটফর্ম থেকে বের করে দিয়েছিল । এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেলে সাহেব স্টেশনমাস্টার অপূর্বকে স্টেশন থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল । যদিও স্টেশনটি ছিল ভারতবর্ষেরই এবং সেখানে যদিও বহু ভারতীয় উপস্থিত ছিল , তবু অপমানিত হওয়া অভ্যাস হয়ে যাওয়ায় তারা এর কোনো প্রতিবাদ করেনি । এই ঘটনা পরাধীন ভারতের অত্যাচার ও অপমানের দৈনন্দিন চিত্র । 

৪. নিমাইবাবু চুপ করিয়া রহিলেন । – নিমাইবাবু কে ? তার চুপ করে থাকার কারণ ব্যাখ্যা করো । 

উত্তরঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘ পথের দাবী ‘ রচনাংশে নিমাইবাবু হলেন পুলিশের বড়োকর্তা বা দারোগাবাবু ।

পুলিশের প্রধান লক্ষ্য ছিল বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিককে গ্রেপ্তার করা । তিনি ছিলেন চিকিৎসাবিদ্যায় সুপণ্ডিত বহুভাষাবিদ ও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রিপ্রাপ্ত এক অসামান্য ব্যক্তিত্ব । কিন্তু সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে আটক গিরীশ মহাপাত্রের বেশভূষা , আচার – আচরণ ও কালচার – এসব কোনো কিছুই সব্যসাচীর সঙ্গে মেলে না । তা দেখে থানায় উপস্থিত অপূর্ব আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলে ; এই ব্যক্তি যে সব্যসাচী মল্লিক নয় তার সে জামিন হতে পারে । অপূর্বর এ কথায় খানিক দ্বিধাগ্রস্ত নিমাইবাবু চুপ করে ছিলেন । ৫. ‘ রামদাস চুপ করিয়া রহিল , কিন্তু তাহার দুই চোখ ছলছল করিয়া আসিল ।’- রামদাস কে ? তার এমন অবস্থা হয়েছিল কেন ? 

উত্তরঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘ পথের দাবী ‘ রচনাংশ অনুসারে অপূর্বর রেঙ্গুনের অফিসের সহকর্মী ছিল রামদাস তলওয়ারকর । 

  অপূর্ব তাঁর জীবনের একটি বেদনাদায়ক ঘটনার কথা রামদাসকে বলে । একদিন অকারণে কয়েকজন ফিরিঙ্গি ছোঁড়া অপূর্বকে লাথি মেরে রেলওয়ে প্ল্যাটফর্মের বাইরে বের করে দেয় । অথচ এর প্রতিবাদ করতে যাওয়ায় সাহেব স্টেশন মাস্টারও তাকে তাড়িয়ে দেয় । ভারতের একটি রেল – স্টেশনে আরেক ভারতীয় এমন অসহ্য অপমানে উপস্থিত কেউই এগিয়ে আসে না । এ ঘটনার কথা শুনে দুঃখে ও লজ্জায় এক অব্যক্ত অপমানে সহমর্মী রামদাসের দুচোখ ছলছল করে উঠেছিল ।

৬. গিরীশ মহাপাত্রের চেহারার বর্ণনা দাও । 

উত্তরঃ শরৎচন্দ্রের ‘ পথের দাবী’র মূল চরিত্র বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক গিরীশ মহাপাত্রের ছদ্মবেশে বর্মা আসেন । পোলিটিক্যাল সাসপেক্ট হিসেবে তাকে আটক করলেও বেশভূষা ও চেহারার বিভ্রান্তিতে পুলিশ তাঁকে ছেড়ে দেয় । বছর বত্রিশের সব্যসাচীর গায়ের ফর্সা রং রোদে পুড়ে তামাটে হয়েছে । রোগা চেহারার মানুষটি সামান্য পরিশ্রমেই হাঁপাতে ও কাশতে থাকেন । দেখে আশঙ্কা হয় সংসারের মেয়াদ বুঝি তার ফুরিয়ে এসেছে । তাকে আলাদাভাবে চোখে পড়ে তার রোগামুখের দুটি চোখের অদ্ভুত দৃষ্টির জন্য । 

৭. কেবল আশ্চর্য সেই রোগা মুখের অদ্ভুত দুটি চোখের দৃষ্টি । কার চোখের কথা বলা হয়েছে ? চোখদুটির বর্ণনা দাও । 

উত্তরঃ উদ্‌ধৃতাংশে শরৎচন্দ্রের ‘ পথের দাবী’র কেন্দ্রীয় চরিত্র সব্যসাচী ওরফে গিরীশ মহাপাত্রের চোখের কথা বলা হয়েছে । অদ্ভুত বেশভূষাধারী ও রুগ্ গিরীশ মহাপাত্রের চেহারার সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল তার চোখ দুটি । সে চোখ ছোটো কী বড়ো , টানা কী গোল , দীপ্ত কী প্রভাহীন সে বিচার করতে যাওয়া বৃথা । অত্যন্ত গভীর জলাশয়ের মতো চোখ দুটিতে এমন কিছু আছে যেখানে কোনো খেলা } চলবে না , যেখান থেকে সাবধানে দুরে দাঁড়ানোই শ্রেয় । আসলে গিরীশ মহাপাত্রের চোখ ছদ্মবেশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা অসাধারণ সব্যসাচী মল্লিককেই প্রকাশ করে । 

৮. ‘ বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে , কিন্তু শখ ষোলো আনাই বজায় আছে তা স্বীকার করতে হবে।— ‘ বাবুটি ‘ কে ? তার শখ যে বজায় আছে , তা কীভাবে বোঝা গেল ? 

উত্তরঃ শরৎচন্দ্রের ‘ পথের দাবী’র আলোচ্য অংশে নিমাইবাবুর কথায় বাবুটি হল ছদ্মবেশী গিরীশ মহাপাত্র । গিরীশ মহাপাত্রের মাথার বাহারি ছাঁট , চুলে সুগন্ধি তেল , পরনে রামধনু রঙের জাপানি সিল্কের পাঞ্জাবি ও বিলিতি মখমল পাড়ের সূক্ষ্ম কালো শাড়ি , পকেটে বাঘ আঁকা রুমাল , পায়ে হাঁটু পর্যন্ত লাল ফিতে দিয়ে বাঁধা সবুজ মোজা ও বার্নিশ করা পাম্প শু , হাতে হরিণের শিঙের হাতল দেওয়া বেতের ছড়ি তার ‘ শখ ‘ বজায়ের পরিচয় দেয় ।

৯. তবে এ বস্তুটি পকেটে কেন ? ‘ – কোন্ বস্তুর কথা বলা হয়েছে ? তা পকেটে থাকার সপক্ষে যে যুক্তিটি দেওয়া হয়েছিল , তা কতখানি সন্তোষজনক ?

উত্তরঃ শরৎচন্দ্রের ‘ পথের দাবী ‘ উপন্যাস থেকে গৃহীত উদ্‌ধৃতাংশে যে বস্তুর কথা বলা হয়েছে তা হল একটি গাঁজার কলকে । পুলিশ – স্টেশনে তল্লাশির সময় গিরীশ মহাপাত্রের পকেটে গাঁজার কলকেটি পাওয়া যায় । দারোগা নিমাইবাবু কলকেটির সম্পর্কে জানতে চাইলে । মহাপাত্র জানায় সে গাঁজা খায় না , কিন্তু পথে কুড়িয়ে পেয়ে সেটি বন্ধুদের প্রয়োজনার্থেই পকেটে রেখেছে । অভিজ্ঞ দারোগা নিমাইবাবুর কাছে এই বক্তব্য যুক্তিগ্রাহ্য লাগেনি । কেননা গিরীশ মহাপাত্রের চেহারার মধ্যে গাঁজা সেবনের লক্ষণ স্পষ্ট ছিল । 

১০. বুড়োমানুষের কথাটা শুনো।— ‘ বুড়োমানুষ ‘ কে ? তাঁর কোন্ কথা শুনতে বলা হচ্ছে ? 

উত্তরঃ ‘ পথের দাবী’র উদ্ধৃতাংশে ‘ বুড়োমানুষ ‘ বলতে দারোগা নিমাইবাবু নিজেকে বুঝিয়েছেন । ] গিরীশ মহাপাত্রের ছদ্মবেশে বিপ্লবী সব্যসাচী বর্মায় আসেন । সন্দেহভাজন সেবে পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে । তল্লাশিতে তাঁর কটে গাঁজার কলকে পাওয়া গেলেও তিনি গাঁজা খাওয়ার কথা অস্বীকার বন । দারোগা নিমাইবাবু তাঁর অভিজ্ঞতার জোরে মহাপাত্রের চেহারার গাঁজা খাওয়ার সুস্পষ্ট লক্ষণ প্রত্যক্ষ করেন । তাই ভগ্ন স্বাস্থ্যের পাত্রকে নিমাইবাবু গাঁজা না খাওয়ার পরামর্শ দেন । – 

১১. অপূর্ব কিছু আশ্চর্য হইয়া কহিল – অপূর্ব কেন আশ্চর্য হল । তার আশ্চর্য হওয়ার প্রকৃত কারণটি কী ছিল ? 

উত্তরঃ ‘ পথের দাবী’তে অপূর্বর সহকর্মী রামদাস তলওয়ারকর অপূর্বকে অন্যমনস্ক ভাবে বসে থাকতে দেখে সে বাড়ির চিঠি পেয়েছে কিনা এবং বাড়ির সবাই ভালো আছে কি না — এমন প্রশ্ন করে বসে । হঠাৎ এমন প্রশ্ন শুনে অপূর্ব আশ্চর্য হয় । রাজদ্রোহী সব্যসাচীর বর্মায় আসার খবর পেয়ে পুলিশ খানাতল্লাশি বাড়িয়েও তাকে ধরতে ব্যর্থ হন । সব্যসাচীর ধরা না পড়া বা কোনো দুর্ঘটনা না ঘটার মতো সৌভাগ্যকে অপূর্বর অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল । তাই দৈনন্দিন কাজের মাঝে অপূর্ব কোথাও যেন অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল । 

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর : পথের দাবী গল্প (শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়) মাধ্যমিক বাংলা | Madhyamik Bengali Pather Dabi (প্রশ্নমান – ৫)

১. নিমাইবাবু’র চরিত্রটি আলোচনা করো । 

উত্তরঃ অপরাজেয় কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা কালজয়ী রাজনৈতিক উপন্যাস ‘ পথের দাবী ‘ থেকে গৃহীত দশম শ্রেণির পাঠ্য অংশে নিমাইবাবু সম্পর্কে যা জানা যায় , তা হল – নিমাইবাবু হলেন কাহিনির কেন্দ্রীয় চরিত্র অপূর্বর পিতৃবন্ধু , সেই সূত্রে আত্মীয় । অপূর্বর পিতা কোনো এক সময়ে তাঁকে চাকরিতে ঢুকিয়েছিলেন । এই সূত্রে যে সম্বন্ধ স্থাপিত হয়েছে , তা দুই পক্ষই বহন করে নিয়ে চলেছে । রেঙ্গুনের পুলিশ – স্টেশনে বাংলা পুলিশের দারোগা নিমাইবাবুকে ছদ্মবেশী বিপ্লবী সব্যসাচী ওরফে গিরীশ মহাপাত্রকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা যায় । তবে অভিজ্ঞ ও বর্ষীয়ান নিমাইবাবুও সব্যসাচীকে চিনতে ভুল করে ফেলেন । তাকে সাধারণ গঞ্জিকাসেবক বলে ছেড়েও দেন । তবে তাঁর স্নেহপ্রবণ মন বোঝা যায় , যখন গিরীশ মহাপাত্ররূপী সব্যসাচীর রুগ্ণ দেহ দেখে তিনি কোমল স্বরে তাকে গাঁজা না খাওয়ার পরামর্শ দেন এবং বলেন ” বুড়োমানুষের কথাটা শুনো । ” এক্ষেত্রে এক প্রৌঢ় স্নেহশীল পিতার প্রতিচ্ছবি নিমাইবাবুর মধ্যে ফুটে ওঠে । 

২. অপূর্ব হঠাৎ চকিত হইয়া বলিয়া উঠিল , ওই যে ।– প্রসঙ্গ কী ? চকিত হয়ে উদ্দিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে যে কথাবার্তা হয়েছিল তা আলোচনা করো । 

উত্তরঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘ পথের দাবী ‘ রচনাংশ অনুসারে , অপূর্বকে অফিসের কাজে রেঙ্গুন থেকে ভামোয় রওনা হতে হয় । বড়োসাহেবের নির্দেশ পেয়ে সে পরদিন বিকেলে ভামোর উদ্দেশে ট্রেনে চেপে বসে । ট্রেন ছাড়তে যখন মিনিট পাঁচেক বাকি তখন সে আচমকা গিরীশ মহাপাত্রকে প্ল্যাটফর্মে দেখতে পায় । এর আগে গিরীশকে সে পুলিশ স্টেশনে সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে আটক অবস্থায় দেখেছিল । অদ্‌ভুত বেশভূষার গিরীশ মহাপাত্রের সঙ্গে এই নিয়ে অপূর্বর দ্বিতীয়বার দেখা যায় । – অপূর্ব এবং গিরীশ মহাপাত্র পরস্পরের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে । অপূর্ব জানায় , সে ভামোর পথে চলেছে আর গিরীশ এনাঙ্গাং থেকে আগত দুই বন্ধুর সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্যে নিয়ে এসেছে । এই সময়েই গিরীশ জানায় পুলিশ তার মতো সাধারণ ধর্মভীরু মানুষকে অনর্থক হয়রান করছে । সে কোনোরকম কুকর্মের সঙ্গে জড়িত নয় । তখন প্রত্যুত্তরে অপূর্ব জানায় , সে কোনোভাবেই পুলিশের লোক নয় ঘটনাচক্রে কেবল ওখানে উপস্থিত ছিল । এমন পরিস্থিতিতে রামদাস গিরীশকে কোথাও দেখার কথা বললে , গিরীশ আশ্চর্য হয় না । শুধু বারবার অনুরোধ করতে থাকে ল যে তার ওপর যেন কেউ মিথ্যে সন্দেহ না রাখে । কারণ সে ব্রাহ্মণ বংশীয় , ২ ) লেখাপড়া – শাস্ত্রজ্ঞান — কিছুটা সেও জানে । কপালের দোষে আজ তার প্রে । এই অবস্থা । কিন্তু অপূর্বর মতো বড়োমানুষদের বিষনজরে পড়লে আর হয়তো একটা চাকরিও জুটবে না । এইসব বলতে বলতেই গিরীশ পুনরায় ‘ নমস্কার’- ‘ রাম রাম’ইত্যাদি জানিয়ে কাশির বেগ সামলিয়ে বিদায় নিয়েছিল । 

৩. ‘ কিন্তু এই জানোয়ারটাকে ওয়াচ করবার দরকারনেই বড়োবাবু ।— ‘ জানোয়ারটা ‘ বলতে কাকে ইঙ্গিত করা হয়েছে ? তাকে ওয়াচ করার দরকার নেই কেন ? 

উত্তরঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘ পথের দাবী ‘ রচনাংশ থেকে উদ্ধৃত উক্তিটিতে ‘ জানোয়ারটা বলতে পুলিশ – স্টেশনে আটক গিরীশ মহাপাত্রকে বলা হয়েছে । বক্তা পুলিশের কর্মচারী জগদীশবাবু ।

    বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে পুলিশ গিরীশ মহাপাত্রকে আটক করে । কিন্তু তার রোদে পড়া তামাটে রং , হাঁফ ধরা কাশির দমক ও অকাল বার্ধক্যের ভগ্ন – স্বাস্থ্য দেখে পুলিশের সন্দেহ হয় । বিশেষত তার বেশভূষার বাহার আর পরিপাট্য দেখে পুলিশ নিশ্চিত হয় এই ব্যক্তিটি সব্যসাচী নয় । কারণ বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিপ্রাপ্ত চিকিৎসকের সঙ্গে সন্দেহভাজন ; কারখানার মিস্ত্রি গিরীশের কোনো মিল থাকাই সম্ভব নয় । খানাতল্লাশির সময় তার ট্যাক ও পকেট থেকে বিভিন্ন মামুলি সামগ্রীর সঙ্গে একটি গাঁজার কলকেও পাওয়া যায় । গিরীশ গাঁজা খাওয়ার কথা বারবার অস্বীকার করলেও , গাঁজা খাওয়ার সমস্ত লক্ষণই তার বিদ্যমান দেখে পুলিশ নিঃসংশয় হয় । নিমাইবাবু মহাপাত্রকে ছেড়ে দিলেও , এ শহরে নজর রাখার কথা বলেন । কারণ বর্মায় সব্যসাচী এসেছে । এ খবর নির্ভুল । এ কথায় জগদীশবাবু বলেন , তবে গিরীশ মহাপাত্রকে রাখার কোনো প্রয়োজন নেই ।

৪. গিরীশ মহাপাত্রের চেহারা ও পোশাক – আশাকের বিস্তারিত বিবরণ দাও । 

উত্তরঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘ পথের দাবী ‘ রচনাংশের কেন্দ্রীয় চরিত্র সব্যসাচী মল্লিকের ছদ্মবেশী রূপই হল গিরীশ মহাপাত্র । ছদ্মবেশী সব্যসাচী এই উপন্যাসে যেন সম্পূর্ণ একটি আলাদা চরিত্র রূপে আমাদের কাছে ধরা দেয় । পুলিশ – স্টেশনের মধ্যে কাশতে কাশতে তার আবির্ভাব । রোদে পুড়ে তার গায়ের অত্যন্ত ফর্সা রং প্রায় তামাটে হয়ে গেছে । বয়স ত্রিশ – বত্রিশের মধ্যে হলেও , অত্যধিক রুগ্‌ণতার জন্য তাকে দেখে মনে হয় যেন আয়ুর শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে । তবে এমন শারীরিক গড়ন ও চেহারার মধ্যেও উল্লেখযোগ্য তার রোগা মুখের অদ্‌ভুত দুটি চোখের দৃষ্টি । আসলে মহাপাত্ররূপী সব্যসাচী সবকিছু লুকোলেও , অতলস্পর্শী চোখ দুটিকে তার পক্ষে লুকোনো সম্ভব ছিল না । তার মাথার সামনের চুল লম্বা । যদিও ঘাড় ও কানের কাছে প্রায় নেই । তার চোরা সিঁথি করা তেল জবজবে মাথা থেকে উগ্র নেবুর তেলের গন্ধ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে । গিরীশের পরনে ছিল জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের চুড়িদার পাঞ্জাবি , যার বুকপকেট থেকে বাঘ আঁকা একটা রুমালের কিছুটা দেখা যাচ্ছিল । যদিও তার কাঁধে উত্তরীয়ের কোনো বালাই ছিল না । সে পরনে বিলাতি মিলের কালো মকমলের সূক্ষ্ম শাড়ি পরেছিল । তার পায়ে ছিল লাল ফিতে বাঁধা সবুজ ফুল মোজা ও তলায় আগাগোড়া নাল বাঁধানো বার্নিশ করা পাম্প শু । আর তার হাতে ধরা একগাছি হরিণের শিং দিয়ে হাতল বাঁধানো বেতের ছড়ি । তবে এত শখশৌখিনতা – পরিপাট্য এ সবই জাহাজ যাত্রার ধকলে নোংরা ও মলিন এবং তার শরীরে গাঁজা খাওয়ার লক্ষণ আর ক্লান্তির ছাপ বেশ স্পষ্টভাবে প্রতিভাত হচ্ছিল । 

৫. ‘ কই এ ঘটনা তো আমাকে বলেননি । — কোন্ ঘটনার কথা বলা হয়েছে ? এ ঘটনা বক্তাকে না বলার কারণ কী ছিল? 

উত্তরঃ শরৎচন্দ্রের ‘ পথের দাবী ‘ উপন্যাসের অংশবিশেষ থেকে গৃহীত উদ্ধৃতিটির বক্তা হল অপূর্বর সহকর্মী রামদাস তলওয়ারকর । ঘটনাটি হল , উপন্যাসের অন্যতম চরিত্র অপূর্ব ফিরিঙ্গি যুবকদের হাতে কোনো এক প্ল্যাটফর্মে অপমানিত ও শারীরিকভাবে নিগৃহীত হন । সেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন অপূর্ব । কিন্তু তিনি ভারতীয় বলে স্টেশনমাস্টার তাঁকে অপমান করে তাড়িয়ে দেন । 

  অপূর্ব তার অপমানের কাহিনি তার সহকর্মী রামদাসকে আগে বলেনি । এই জন্য রামদাস অভিমানের সাথে অভিযোগ জানালে অপূর্ব বলে যে , নিজস্ব অপমান ব্যক্ত করা সহজ নয় । বিশেষত যেখানে শুধু নিজে নয় , সমগ্র জাতি জড়িত , তা প্রকাশ করা আরও বেশি অপমানের । ফিরিঙ্গি যুবকদের অপমান অপূর্বর কাছে বেদনার ছিল । কিন্তু তার চেয়ে বেশি বেদনার ছিল সেদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ভারতীয়রা তার সেই অপমানকে মেনে নিয়েছিল । এই ঘটনায় শোষিত , পীড়িত , অসম্মানে অভ্যস্ত এক পরাধীন জাতির পঙ্গু ও ক্লীব ছবিটি ফুটে ওঠে । যে ছবি তরুণ দেশপ্রেমিক অপূর্বর কাছে গভীর যন্ত্রণা ও লজ্জার । পিতৃবন্ধু দারাগো নিমাইবাবুর চেয়ে বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক কেন তার কাছে বেশি আপন তা বোঝাতে গিয়েই অপূর্ব মনের মধ্যে লুকানো বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতার কথাগুলো বলে ফেলে ।

৬. ‘ বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে , কিন্তু শখ ষোলো আনাই বজায় আছে – বক্তা কার সম্পর্কে এ কথা বলেছেন ? তার স্বাস্থ্য ও শখের পরিচয় দাও । 

উত্তরঃ শরৎচন্দ্রের ‘ পথের দাবী উপন্যাস থেকে গৃহীত উদ্ধৃতিটির বক্তা হলেন পরাধীন ভারতে ব্রিটিশ অধীনস্থ এক বাঙালি পুলিশকর্তা নিমাইবাবু । তিনি পোলিটিক্যাল সাসপেক্ট হিসেবে চিহ্নিত ছদ্মবেশী গিরীশ মহাপাত্র সম্পর্কে এমন মন্তব্য করেছেন । বছর ত্রিশ – বত্রিশের ছদ্মবেশী গিরীশ মহাপাত্রের ফরসা রং রোদে পুড়ে তামাটে হয়ে গেছে । রোগা চেহারার মানুষটি যখন কাশতে কাশতে থানায় প্রবেশ করল তখন তার দেহের সামগ্রিক অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল সেটি । দ্রুত বেগে ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে । কিন্তু তার রোগামুখের দুটি চোখের দৃষ্টি ভারী অদ্ভুত । জলাশয়ের মতো গভীর সে চোখের সাথে খেলা চলবে না । দূরে থাকতে হবে । সেই ক্ষীণ চোখের অতলে কোথাও যেন প্রাণশক্তি লুকিয়ে আছে আর সে জন্যই সে বেঁচে আছে। 

  গিরীশ মহাপাত্র যে অত্যন্ত সৌখিন মানুষ তা তার বেশভূষাতেই প্রমাণিত । চুলে বাহারি ছাঁট । তাতে সুগন্ধি নেবু তেল গায়ে জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের চুড়িদার পাঞ্জাবি । পকেটে বাঘ – আঁকা রুমাল । পরনে বিলেতি মখমল পাড়ের কালো শাড়ি । হাঁটু পর্যন্ত মোজা লাল রিবন দিয়ে বাঁধা এবং পায়ে নাল লাগানো বার্নিশ করা পাম্প শু । হাতে হরিণের শিং দিয়ে বাঁধানো বেতের শৌখিন ছড়ি । এসব দেখেই নিমাইবাবু রসিকতার ছলে কথাগুলি বলেছিলেন । 

৭. রামদাস তলওয়ারকর চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো । 

উত্তরঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘ পথের দাবী ” উপন্যাসের এবং পার্শ্বচরিত্র হল রামদাস তলওয়ারকর । অপূর্বর সহকর্মী তলওয়ারকর খুব গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র না হয়েও যথেষ্ট গুরুদায়িত্ব পালন করেছে । তাকে অবলম্বন করেই পাঠ্য অংশে অপূর্ব নিজের ভাবনাচিন্তা ব্যক্ত করেছে । রামদাস তলওয়ারকর সহকর্মীর চেয়েও অনেক বেশি সহমর্মী ও বন্ধু । ছদ্মবেশী সব্যসাচীকে দেখে আনমনা অপূর্বের বাড়ির পরিস্থিতি কুশল কিনা , তা সে জানার চেষ্টা করেছে । তার স্ত্রী প্রতিদিন অপূর্বর জলযোগ সরবরাহ করেছে । তলওয়ারকর অপূর্বর সমস্ত কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছে — তা সে অপূর্বর ঘরে চুরি ও উপরতলার ক্রিশ্চান মেয়ের দ্বারা সম্পদ রক্ষার গল্পই হোক বা ইংরেজ কর্তৃক অপূর্বর অপমানের কাহিনিই হোক । রেঙ্গুন পুলিশ স্টেশনে দেখা অদ্ভুত দর্শন গিরীশ মহাপাত্রের বর্ণনা দিতে গিয়ে তার সঙ্গে প্রচণ্ড হাসিতে ফেটে পড়েছে অপূর্ব । কিন্তু সঙ্গ দিতে গিয়ে তলওয়ারকর কখনোই অপূর্বর ছায়াতে পরিণত হয়নি । অপূর্বকে ট্রেনে তুলতে গিয়ে গিরীশ মহাপাত্রকে দেখে তার মনে সন্দেহ জেগেছে । প্রখর বুদ্ধিমান ছদ্মবেশী বিপ্লবী সব্যসাচীও তার মন থেকে সন্দেহ দূর করতে পারেনি । রামদাস মনে মনে গিরীশের প্রকৃত পরিচয় হাতড়ে বেরিয়েছে । এভাবেই বুদ্ধিতে , বন্ধুত্বে , সাহচর্যে এবং সমবেদনায় রামদাস স্বল্প পরিসরেও তার স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করে । 

আরো পড়ুনঃ Madhyamik Bengali Bahurupi Suggestion Question Answer

আরো কিছু রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

“পলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিককে নিমাইবাবুর সম্মুখে হাজির করা হইল” – ‘পলিটিক্যাল সাসপেক্ট’ কথাটির অর্থ কী? এরপরে পুলিশ স্টেশনে কী পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তা পাঠ্যাংশ অনুসরণে আলোচনা করো।

পলিটিক্যাল সাসপেক্ট কথাটির অর্থ – পলিটিক্যাল সাসপেক্ট কথাটির অর্থ রাজনৈতিকভাবে সন্দেহভাজন।

পরিস্থিতির বর্ণনা –

  • পুলিশ স্টেশনে হাজির করা – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ উপন্যাসে পলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিককে পুলিশ স্টেশনে পুলিশের বড়কর্তার সামনে হাজির করা হয়েছিল।
  • চেহারার বিবরণ – তাকে দেখে মনে হচ্ছিল তার আয়ু আর বেশিদিন নেই। তার ফরসা রং রোদে পুড়ে তামাটে হয়ে গিয়েছিল। অল্প কাশির পরিশ্রমেই সে হাঁপাতে শুরু করেছিল। পরিচয় জিজ্ঞাসা করা হলে সে নিজের নাম গিরীশ মহাপাত্র বলেছিল। সে তেলের খনিতে কাজ করত বলে জানায়। বর্মা থেকে সে রেঙ্গুনে এসেছিল।
  • সাজসরঞ্জাম – তার ট্যাঁক থেকে একটা টাকা, লোহার কম্পাস, মাপ করার জন্য কাঠের ফুটবুল, কয়েকটা বিড়ি, একটা দেশলাই আর-একটা গাঁজার কলকে বার করা হয়।
  • নিমাইবাবুর প্রশ্ন – পুলিশের কর্তা নিমাইবাবু তাকে জিজ্ঞাসা করেন যে, সে গাঁজা খায় কি না। তার উত্তরে গিরীশ মহাপাত্র বলে, গাঁজার কলকেটা সে রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছে। কারোর যদি কাজে লাগে সে দিয়ে দেবে।
  • পরিণতি – গিরীশ মহাপাত্রের কথাবার্তা শুনে, তার সাজপোশাক, আচার-ব্যবহার দেখে সকলেই নিশ্চিত হয় যে, এই গিরীশ মহাপাত্র কখনোই সব্যসাচী মল্লিক হতে পারে না। তাই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে, খানিকক্ষণ তার সঙ্গে তামাশা করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।

“কাকাবাবু এ লোকটিকে আপনি কোনো কথা জিজ্ঞেস না করেই ছেড়ে দিন, যাকে খুঁজছেন সে যে এ নয়, তার আমি জামিন হতে পারি।” – বক্তা কে? তার সম্পর্কে এ কথা কেন বলা হয়েছে?

বক্তা – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ গল্পাংশে উল্লিখিত মন্তব্যটির বক্তা অপূর্ব।

এ কথা বলার কারণ –

  • আটক করা ব্যক্তি – রেঙ্গুন পুলিশ স্টেশনে বর্মা অয়েল কোম্পানির তেলের খনির কারখানার কয়েকজন মিস্ত্রিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ আটক করেছিল। তাদের মধ্যে বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে একটি লোককে রেখে অন্যদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
  • চেহারার বিবরণ – তিরিশ-বত্রিশ বছর বয়সি লোকটি কাশতে কাশতে আসে। কিন্তু লোকটি ছিল ভীষণ রোগা। একটু কাশির পরিশ্রমেই সে হাঁপিয়ে উঠছিল। দেখে মনে হচ্ছিল, সংসারে তার মেয়াদ বোধহয় আর বেশি নেই। কোনো দুরারোগ্য অসুখ তার শরীরে যেন বাসা বেঁধেছে।
  • বেশভূষা – এ ছাড়াও তার পোশাক-পরিচ্ছদ ছিল অদ্ভুত ধরনের। গায়ে জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের চুড়িদার-পাঞ্জাবি, তার বুক-পকেট থেকে একটা রুমালের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছিল। তার পরনে বিলিতি মিলের কালো মখমল পাড়ের সূক্ষ্ম শাড়ি, পায়ে সবুজ রঙের ফুল মোজা, হাঁটুর ওপরে লাল ফিতা বাঁধা।
  • অপূর্বর মানসিকতা – হয়তো সব্যসাচী বলে সন্দেহ হলেও অপূর্ব মন থেকে চাইছিল ওই লোকটি যেন পুলিশের হাতে ধরা না পড়ে।
  • শেষের কথা – এই কারণেই অপূর্ব নিমাইবাবুকে তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিল।

“বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে, কিন্তু শখ ষোলোআনাই বজায় গছে।” — বাবুটি কে? তার সাজসজ্জার পরিচয় দাও।

অথবা, “বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে, কিন্তু শখ ষোলো আনাই বজায় আছে।” – বাবুটি কে? তাঁর স্বাস্থ্য ও শখের পরিচয় দাও।

বাবুটির পরিচয় – এখানে বাবুটি বলতে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশের অন্যতম চরিত্র গিরীশ মহাপাত্রের কথা বলা হয়েছে।

স্বাস্থ্য ও শখের পরিচয় – গিরীশ মহাপাত্রের বয়স ত্রিশ-বত্রিশের বেশি নয়। বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে তাকে থানায় ধরে আনা হয়। রোদে পুড়ে তামাটে হয়ে যাওয়া লোকটি কাশতে কাশতে ভিতরে প্রবেশ করে। কাশির দমক দেখে মনে হয়েছিল তার আয়ু আর বেশিদিন নেই। মাথার সামনে বড় বড় চুল থাকলেও ঘাড় ও কানের কাছে চুল প্রায় ছিল না। চুল থেকে বেরোচ্ছিল লেবুর তেলের উগ্র গন্ধ। এর সঙ্গে মানানসই ছিল তার পোশাকও। গায়ে ছিল জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের চুড়িদার পাঞ্জাবি। তার বুকপকেট থেকে বাঘ-আঁকা একটি রুমালের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছিল। পরনে ছিল বিলাতি মিলের কালো মখমল পাড়ের সূক্ষ্ম ধুতি। পায়ে সবুজ রঙের ফুলমোজা, যা হাঁটুর ওপরে লাল ফিতে দিয়ে বাঁধা। পায়ে ছিল বার্নিশ করা পাম্পশু, যার তলাটা আগাগোড়া লোহার নাল বাঁধানো। আর হাতে ছিল হরিণের শিঙের হাতল দেওয়া একগাছি বেতের ছড়ি।

“মহা হুঁশিয়ার পুলিশের দলকে আজকের মতো নির্বোধ আহম্মক হতে বোধ করি কেউ কখনো দেখেনি।” – পুলিশের দলকে ‘নির্বোধ আহম্মক’ বলা হয়েছে কেন? পুলিশ সম্পর্কে বক্তার এমন উক্তির পিছনে তার কোন্ মানসিকতা সক্রিয় লেখো।

পুলিশের দলকে ‘নির্বোধ আহম্মক’ বলার কারণ – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ গল্পাংশে গিরীশ মহাপাত্র নামে এক ব্যক্তিকে বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক ভেবে পুলিশ নানাভাবে জিজ্ঞাসা ও তল্লাশি চালায়। শেষপর্যন্ত তার চেহারা, পোশাক-পরিচ্ছদ ও কথাবার্তায় বিভ্রান্ত হয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাংলা দেশের অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসার নিমাইবাবুও ব্যর্থ হন সব্যসাচীকে খুঁজে বের করতে। কিন্তু অপূর্ব বুঝেছিল গিরীশ মহাপাত্রই ছদ্মবেশী সব্যসাচী। এই কারণেই সে পুলিশের দলকে ‘নির্বোধ আহম্মক’ বলেছে।

বক্তার মানসিকতা – পুলিশের দল সম্পর্কে অপূর্বর এই মন্তব্যের পিছনে তার সুপ্ত দেশপ্রেম সক্রিয় ছিল। কেন-না, সে মনেপ্রাণে চাইছিল সব্যসাচী যেন ধরা না পড়েন। তার এমনও বিশ্বাস ছিল যে, সব্যসাচী এত সাধারণ রাজবিদ্রোহী নন। তাঁর ছদ্মবেশ, এতই অকৃত্রিম ছিল যে, বোঝাই মুশকিল হত তিনি কোন্ দেশের মানুষ। দশ-বারোটা ভাষায় তিনি অনর্গল কথা বলতে পারতেন। সুতরাং তাঁকে ধরা সহজ কাজ নয়। অপূর্ব নিজেই বিস্মিত হয়েছিল সব্যসাচীর পোশাক ও চেহারা দেখে। পুলিশকে ‘নির্বোধ আহম্মক’ বলার মধ্য দিয়ে অপূর্ব একদিকে যেমন পুলিশের প্রতি তাচ্ছিল্য প্রকাশ করেছে, অন্যদিকে তেমনই পরোক্ষে সব্যসাচীর দক্ষতা আর কৌশলকে নীরবে শ্রদ্ধা জানিয়েছে।

“পৃথিবীর যে-কোনো দেশে, যে-কোনো যুগে যে-কেউ জন্মভূমিকে তার স্বাধীন করবার চেষ্টা করেচে, তাকে আপনার নয় বলবার সাধ্য আর যার থাক, আমার নেই।” – এই উক্তির আলোকে বক্তার মনোভাব ব্যক্ত করো।

  • কথামুখ – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ গল্পাংশে অপূর্বই মন্তব্যটি করেছে। অপূর্ব বাংলা দেশের ছেলে।
  • স্বদেশি ভাবধারা – সে স্বদেশি ভাবধারায় বিশ্বাস করত। তাই সব্যসাচীর মতো দেশভক্তরা তার কাছে পূজনীয় ব্যক্তিত্ব। শুধু দেশ ও দেশের মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে এঁরা নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। জীবনমৃত্যু এঁদের কাছে পায়ের ভৃত্য। দেশের মুক্তিপথের অগ্রদূত এই বীর নায়কদের প্রতি ব্রিটিশ সরকারের ছিল দমনমূলক মনোভাব। যে-কোনো উপায়ে এঁদের গ্রেফতার করাই ছিল ব্রিটিশ পুলিশের লক্ষ্য। সেই উদ্দেশ্যেই পুলিশ অফিসার নিমাইবাবু রেঙ্গুনে এসেছেন। তাঁরই শিকার হলেন সব্যসাচী মল্লিক। অপূর্ব নিমাইবাবুকে কাকা বলে ডাকে। কিন্তু নিমাইবাবুর কার্যকলাপকে অপূর্ব সমর্থন করে না।
  • স্বদেশপ্রেম – স্বদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীকে গ্রেফতার করা মানেই দেশদ্রোহ করা। অপূর্ব চায় না যে, সব্যসাচী মল্লিক গ্রেফতার হোক। এই মনোভাব অপূর্বর দেশপ্রেমকেই তুলে ধরে। নিমাইবাবু তাঁর কর্তব্য পালন করতে এলেও অপূর্বর কাছে কর্তব্যের চেয়ে স্বদেশ বড়ো। পরের দাসত্ব করে আপন জন্মভূমির স্বাধীনতা অর্জনে বাধাদানকে অপূর্ব সমর্থন করতে পারে না। তাই যত বিপদই আসুক, অপূর্ব সব্যসাচীকে একান্ত নিজের জন বলে স্বীকার করতে পিছপা হয় না।
  • শেষের কথা – আলোচ্য উক্তির মধ্য দিয়ে অপূর্বর এই স্বদেশপ্রেমই বড়ো হয়ে উঠেছে।

“… তিনি ঢের বেশি আমার আপনার” – অপূর্ব কেন এ কথা বলেছিল?

  • প্রেক্ষাপট – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পথের দাবী উপন্যাসটি মূলত স্বদেশি আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে লেখা হয়েছিল।
  • দেশপ্রাণ – পরাধীন ভারতবর্ষকে স্বাধীন করার জন্য, ইংরেজদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য অনেকেই লড়াই করছিলেন, সব্যসাচী তাঁদেরই একজন। দেশের জন্য নিজের প্রাণ বিসর্জন দিতে তিনি সদা প্রস্তুত ছিলেন। ‘পথের দাবী’ পাঠ্যাংশে দেখা যায় সব্যসাচী গিরীশ মহাপাত্রের ছদ্মবেশ ধারণ করে পুলিশের চোখে ফাঁকি দিয়ে পালাতে সক্ষম হয়েছিলেন।
  • স্বদেশি ভাবধারায় বিশ্বাস – সব্যসাচী এমন ছদ্মবেশ ধারণ করতেন যাতে পুলিশ তাঁকে ধরতে না পারে। স্বদেশি ভাবধারায় বিশ্বাসী অপূর্ব সব্যসাচীকে মনেপ্রাণে সমর্থন করত। অপূর্ব জানত যে সব্যসাচী দেশকে ভালোবাসেন, আর সেই দেশকে স্বাধীন করার জন্যই তিনি লড়াই করছেন।
  • সব্যসাচীর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা – পুলিশরা সব্যসাচীকে ধরার জন্য অনেক চেষ্টা করছিল। দেশের টাকায় দেশের লোক দিয়েই শিকারের মতো তারা সব্যসাচীকে তাড়া করে বেড়াচ্ছিল। আবার, পুলিশকর্তা নিমাইবাবু ছিলেন অপূর্বর আত্মীয়; অপূর্ব তাঁকে কাকা বলে ডাকত। অপূর্ব এই কারণে নিজেও যথেষ্ট লজ্জিত ছিল। তাই সে বলেছে, দেশকে তথা দেশবাসীকে এই লজ্জা, অপমান, লাঞ্ছনা থেকে যে মুক্তি দিতে চায়, সেই সব্যসাচী অপূর্বর কাছে আত্মীয় পুলিশকর্তার থেকেও অনেক বেশি আপনার এবং নিকটজন।

“আমি ভীরু, কিন্তু তাই বলে অবিচারে দণ্ডভোগ করার অপমান আমাকে কম বাজে না, রামদাস।” – প্রসঙ্গ উল্লেখ করে উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

প্রসঙ্গ – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশ থেকে উদ্ধৃতিটি গৃহীত। বাংলা দেশের ছেলে অপূর্ব রেঙ্গুনে থাকার সময় ফিরিঙ্গি ও অন্যদের দ্বারা অত্যাচারিত ও অপমানিত হয়েছিল। সেই লাঞ্ছনার কথা বলতে গিয়েই আলোচ্য উক্তিটি করা হয়েছে।

তাৎপর্য বিশ্লেষণ – সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের বাঙালি সন্তান অপূর্ব চাকরির সূত্রে রেঙ্গুনে এসেছিল। কিন্তু রেল স্টেশনে একদিন বিনা দোষে কিছু ফিরিঙ্গি ছেলে তাকে লাথি মেরে প্ল্যাটফর্ম থেকে বের করে দেয়। স্টেশনে থাকা কোনো ভারতীয়ই এই ঘটনার প্রতিবাদ করেনি; বরং অপূর্বর হাড়-পাঁজরা খুব একটা ভাঙেনি জেনে তারা খুশি হয়েছে। এর প্রতিবাদ জানাতে গেলে স্টেশনমাস্টার তাকে ভারতীয় বলে কুকুরের মতো বের করে দিয়েছিল। বিনা দোষে এই অত্যাচার সহ্য করায় এক না-বলা কষ্ট তার বুকের মধ্যে গুমরে ওঠে। তাই রামদাসের কাছে সে বলেছে, “তার লাঞ্ছনা এই কালো চামড়ার নীচে কম জ্বলে না তলওয়ারকর।” অপূর্ব শিক্ষিত, সভ্য, বিচক্ষণ যুবক। শাসকের এই অকারণ অত্যাচারকে সে সমর্থন করতে পারে না। ইংরেজদের এই বর্বরের মতো আচরণ সমস্ত স্তরের দেশবাসীকেই সহ্য করতে হচ্ছে বুঝে অপূর্ব যন্ত্রণা অনুভব করেছে। আলোচ্য উক্তিটি তার সেই বেদনাকেই প্রকাশ করেছে।

“বাস্তবিক, এমন তৎপর, এতবড়ো কার্যকুশলা মেয়ে আর যে কেহ আছে মনে হয় না, হে তলওয়ারকর! তা-ছাড়া এত বড়ো বন্ধু!” – মেয়েটির সম্পর্কে অপূর্বর এই মন্তব্যের কারণ বিশ্লেষণ করো।

  • কথামুখ – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ গল্পাংশে অপূর্ব এই মন্তব্যটি করেছে। অপূর্বর বাড়ির ওপরের তলায় যে ক্রিশ্চান মেয়েটি থাকত, তার সম্পর্কে এই কথাটি বলা হয়েছে।
  • দায়িত্ববোধ – অপূর্বর অনুপস্থিতিতে তার ঘরে একদিন চুরি হয়ে গিয়েছিল। ক্রিশ্চান মেয়েটির জন্যই টাকাকড়ি ছাড়া বাকি সমস্ত কিছু চুরি হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল। ক্রিশ্চান মেয়েটি নিজেই চোরকে তাড়িয়ে অপূর্বর ঘর তালাবদ্ধ করে দেয়। অপূর্বর না-ফেরা পর্যন্ত সে অপেক্ষা করে। অপূর্বর ফেরার পর সে নিজেই চাবি দিয়ে সেই ঘর খুলে যা কিছু ছড়ানো জিনিসপত্র ছিল, সেগুলো সব নিজের হাতে গুছিয়ে দেয়। যা চুরি গেছে আর যা যা চুরি যায়নি, তার একটি নিখুঁত হিসাব সে বানিয়েছিল। সেই হিসাব দেখে অপূর্বর মনে হয়েছিল, একজন পাস করা অ্যাকাউন্ট্যান্টের পক্ষেও এমনটা করা সম্ভব নয়।
  • প্রকৃত বন্ধুভাবাপন্ন – অন্যের জন্য নিজের সবটুকু দিয়ে কীভাবে সাহায্য করা যায়, তা এই মেয়েটিকে না দেখলে অপূর্বর বুঝতে পারত না। সবকিছু দেখে অপূর্বর তাকে একজন প্রকৃত বন্ধু বলেই মনে হয়েছিল।
  • বুদ্ধিমত্তা – মেয়েটির প্রখর বুদ্ধি আর সবদিকে অদ্ভুত তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেখে অপূর্ব আশ্চর্য হয়ে আলোচ্য মন্তব্যটি করেছিল।

“আমার মা, আমার ভাই-বোনকে যারা এই-সব সহস্র কোটি অত্যাচার থেকে উদ্ধার করতে চায় তাদের আপনার বলে ডাকবার যে দুঃখই থাক আমি আজ থেকে মাথায় তুলে নিলাম।” – কে, কোন্ প্রসঙ্গে এই উক্তি করেছেন? এর মধ্যে বক্তার কোন্ মানসিকতা প্রকাশ পেয়েছে?

উৎস ও প্রসঙ্গ – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ গল্পাংশ থেকে উদ্ধৃত এই উক্তিটি করেছিল অপূর্ব। ফিরিঙ্গিদের হাতে একদিন অপূর্ব নিজে কীভাবে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হয়েছিল সেই যন্ত্রণার কথা বর্মা অফিসের সহকর্মী রামদাস তলওয়ারকরের কাছে বলতে গিয়ে সে উদ্ধৃত কথাগুলি বলেছিল।

বক্তার মানসিকতা – অপূর্বকে বিনা দোষেই ফিরিঙ্গি যুবকেরা লাথি মেরে প্ল্যাটফর্ম থেকে বের করে দিয়েছিল। অপূর্ব এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেলে সাহেব স্টেশনমাস্টার তাকে কেবল ‘দেশি লোক’ এই অজুহাতে কুকুরের মতো দূর করে দিয়েছিল। এ অপমান পরাধীন দেশে প্রতিদিনই ঘটছে। অপূর্ব এই ঘটনায় খুব কষ্ট পায়; তার খুব রাগও হয়। সেই সঙ্গে সে স্থির সিদ্ধান্তে আসে যে, দেশের মা-ভাই-বোনকে যারা সমস্ত অত্যাচার থেকে উদ্ধার করতে চায়, তারাই তার সত্যকার আপনার লোক। আর সেই মানুষগুলোকে কাছের মানুষ হিসেবে গ্রহণ করার সমস্ত দুঃখই সে মাথা পেতে নিতে চায়।

এ কথায় অপূর্বর দেশপ্রেমিক সত্তাটি যেমন প্রকাশ পেয়েছে, তেমনই সাহস এবং সহমর্মিতার প্রকাশ ঘটেছে। সে কেবল নিজের সুখের জন্য ব্যস্ত নয়। বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার এক প্রবল ইচ্ছে ধরা পড়েছে তার কথায়। পাশাপাশি এক অনিশ্চিত জীবনকে গ্রহণ করার কঠিন প্রতিজ্ঞাও অপূর্বর কথায় ফুটে উঠেছে।

“আমাদের তিনি আত্মীয়, শুভাকাঙ্ক্ষী, কিন্তু তাই বলে আমার দেশের চেয়ে তো তিনি আপনার নন।” – কে, কার সম্পর্কে এই মন্তব্য করেছে? এই উক্তির আলোকে বক্তার মনোভাবটি ব্যক্ত করো।

বক্তা ও উদ্দেশ্য ব্যক্তি – অপূর্ব, নিমাইবাবু সম্পর্কে এই মন্তব্যটি করেছে।

বক্তার মনোভাব – নিমাইবাবুর সঙ্গে অপূর্ব যখন পুলিশ স্টেশনে যায়, তখন তার দেখা হয় রাজনৈতিক সন্দেহভাজন সব্যসাচী মল্লিক ওরফে গিরীশ মহাপাত্রের সঙ্গে। পুলিশ গিরীশ মহাপাত্র এবং তার সাথে থাকা জিনিসপত্র তদন্ত করতে গেলে একটি হাস্যকর ঘটনার সৃষ্টি হয়। এই সময়ে তলওয়ারকরের সঙ্গে কথোপকথনে অপূর্বর মনোভাবের কয়েকটি দিক স্পষ্ট হয়ে ওঠে –

  • দেশপ্রেমিক – অপূর্ব সাধারণ চাকুরিজীবী হলেও পরাধীন দেশকে বিদেশি শাসনমুক্ত দেখতে চায়। দেশের কল্যাণের জন্যই আন্তরিকভালে সে চায়, সব্যসাচী মল্লিক যেন পুলিশের হাতে ধরা না পড়েন। নিমাইবান অপূর্বর বাবার বন্ধু, পরম আত্মীয়। কিন্তু তিনি সুদূর বাংলা দেশ থেকে বর্মায় এসেছেন যে সব্যসাচী মল্লিককে হাজতে পুরতে, তিনি আসলে দেশপ্রেমিক, মুক্তিযোদ্ধা। তাই নিমাইবাবুর চেয়ে সব্যসাচী মল্লিকশ অপূর্বর আত্মার আত্মীয়।
  • স্পষ্টবক্তা – রামদাস অফিসের সহকর্মীমাত্র হলেও তার কাছে অপূ নিজের আত্মীয় সম্পর্কে যে ভাবনা মেলে ধরেছে-তাতে সহজেই অপূর্বকে স্পষ্টবক্তা বলা যায়।
  • আবেগপ্রবণ – এ কথাও ঠিক, অপূর্ব আবেগপ্রবণ। তাই রামদাস যখন নিমাইবাবুর কৃতকর্মের প্রায়শ্চিত্তের জন্য অপূর্বর প্রতি দিনির্দেশ করেন তখনই অপূর্ব জোর করে অনেকটা আবেগের বশে, প্রশ্নে উল্লিখিত কথাগুলো বলেছিল।

ভামো নগরের উদ্দেশে যাত্রাকালে অপূর্বর কী অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বর্ণনা করো।

  • শুরুর কথা – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ গল্পাংশে অপূর্ব রেঙ্গুন থেকে ভামো নগরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল।
  • নিয়মমাফিক কাজ – অপূর্ব প্রথম শ্রেণির যাত্রী ছিল। সন্ধ্যা হলে সে প্রতিদিনের মতো নিয়মমাফিক যা করে, সেই সবই করেছিল।
  • ভ্রান্ত ধারণা – রাতের খাবারের পর অপূর্ব যখন শুতে যায়, তখন সে ভেবেছিল প্রথম শ্রেণির যাত্রী হওয়ায় নিশ্চিন্ত মনে বাকি পথটা পাড়ি দিতে পারবে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই সে বুঝতে পারে এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল।
  • অপূর্বর বিরক্তি – সেই রাতে পুলিশের লোক এসে বার তিনেক তার ঘুম ভাঙিয়ে নাম, ঠিকানা লিখে নেয়। এতে অপূর্বর বিরক্তি চরমে পৌঁছে।
  • সাব-ইনস্পেকটরের সঙ্গে বচসা – অপূর্ব এই ঘটনার প্রতিবাদ করলে বর্মার সাব-ইনস্পেকটর কটুকণ্ঠে তাকে জানায় যে, সে ইউরোপীয় নয়, তাই এটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। অপূর্ব তাকে জানায়, সে প্রথম শ্রেণির যাত্রী, তাই তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটানো অন্যায়। সাব-ইনস্পেকটর হাসতে হাসতে জবাব দেয়, এইসব নিয়ম শুধু রেলওয়ে কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য। পুলিশ ইচ্ছে করলে তাকে ট্রেন থেকে নামিয়ে দিতে পারে, এবং তার কোনো প্রতিবাদ করার অধিকার নেই।
  • ইতিকথা – এভাবে অপূর্বর অভিজ্ঞতায় পরাধীন ভারতবর্ষে ইংরেজদের হাতে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হওয়ার আরেকটি ঘটনা যুক্ত হয়।

“কিন্তু ইহা যে কত বড়ো ভ্রম তা কয়েকটা স্টেশন পরেই সে অনুভব করিল।” – ‘সে’ কে? উদ্ধৃত অংশটির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

‘সে’ – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ গল্পাংশের উল্লিখিত অংশে ‘সে’ বলতে অপূর্বর কথা বলা হয়েছে।

প্রসঙ্গ – অফিসের গোলমাল থামানোর জন্য বড় সাহেব অপূর্বকে নির্দেশ দিয়েছিলেন রেঙ্গুন থেকে ভামোর অফিসে যাওয়ার জন্য। এই ট্রেন যাত্রায় অপূর্বর যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল, তা তার কল্পনায় ছিল না। সেখানে সে যে বিরক্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়, তা উল্লেখ করতে গিয়েই এই মন্তব্যটি করেছে।

তাৎপর্য বিশ্লেষণ – অপূর্ব ছিল ট্রেনের প্রথম শ্রেণির যাত্রী। তার কামরায় অন্য কোনো লোক ছিল না। সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হলে অপূর্ব ঈশ্বর উপাসনা শেষ করে। তারপর সে রাতের খাওয়াদাওয়া সেরে হাত-মুখ ধুয়ে সুস্থমনে শয্যাগ্রহণ করে। অপূর্ব আশা করেছিল যে প্রথম শ্রেণির যাত্রী হওয়ায় সকাল পর্যন্ত কেউ তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাবে না। কিন্তু পুলিশের লোকরা রাত্রে বার-তিনেক ঘুম ভাঙিয়ে তার নাম-ঠিকানা লিখে নেয়। এইভাবে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটানোয় অপূর্ব প্রতিবাদ করে। তখন সাব-ইনস্পেকটরের কাছে শুনতে হয় আবার অপূর্ব যখন নিজেকে প্রথম শ্রেণির যাত্রী বলে এবং তাই তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটানো যায় না বলে মন্তব্য করে তখন পুলিশ অফিসারটি তাকে বলেন যে ইচ্ছা করলে সে তাকে নামিয়েও দিতে পারে। ভারতীয়দের অপমানের আরও একটা দৃষ্টান্ত অপূর্বর অভিজ্ঞতায় যুক্ত হয়।

‘পথের দাবী’ রচনাংশ অবলম্বনে অপূর্বর চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।

  • কথামুখ – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ উপন্যাসে অপূর্বর অনুভূতিই হয়ে উঠেছে কাহিনির মূল বিষয়। তার চরিত্রের যে বৈশিষ্ট্যগুলি লক্ষ করা যায়, তা হল –
  • দেশপ্রেম – অপূর্ব বাংলা দেশের ছেলে এবং সে স্বদেশি ভাবধারায় বিশ্বাসী। নিমাইবাবুর মুখে সব্যসাচীর বর্ণনা শুনে অপূর্বর মনে এই মহান দেশপ্রেমিক সম্পর্কে শ্রদ্ধা ও ভক্তি জেগে ওঠে। তবে রাগ হয় নিমাইবাবুর ওপর। কারণ বাঙালি হয়েও তিনি নিজের দেশের এত বড়ো একজন মুক্তিযোদ্ধাকে গ্রেফতার করতে তৎপর। সব্যসাচী সন্দেহে আটক গিরীশ মহাপাত্রই যে আসলে সব্যসাচী তা অনুমান করতে অপূর্বর দেরি হয়নি। তাই সে নিমাইবাবুকে বলেছে – “এ লোকটিকে কোনো কথা জিজ্ঞেস না করেই ছেড়ে দিন, যাকে খুঁজছেন সে যে এ নয়, তার আমি জামিন হতে পারি।” পুলিশের কাছে এরকম উক্তি অপূর্বর চরিত্রের দৃঢ়তা এবং দেশপ্রেমকেই তুলে ধরে।
  • সাহসী ও প্রতিবাদী স্বভাব – শান্তশিষ্ট হলেও অপূর্ব প্রতিবাদী। সে রামদাসের কাছে পুলিশের সমালোচনা করেছে। এতে অপূর্ব রাজদ্রোহিতার অপরাধে শাস্তি পেতে পারে। বর্মা সাব-ইনস্পেকটরের আচরণের প্রতিবাদ করার ক্ষেত্রে তাই সে এতটুকুও দ্বিধা করেনি।
  • ইতিকথা – সবদিক দিয়ে বিচার করে বলা যায়, ‘Doing and Suffering’ -এর ভিত্তিতে অপূর্ব আলোচ্য কাহিনি অংশের মুখ্য চরিত্র।

‘পথের দাবী’ রচনাংশ অবলম্বনে নিমাইবাবুর চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।

  • কথামুখ – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘পথের দাবী’ শীর্ষক গল্পাংশে সব্যসাচীকে আশ্রয় করে কাহিনি বিস্তার লাভ করলেও নিমাইবাবুর চরিত্রটি সেখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ।
  • পেশাগত দায়বদ্ধতা – নিমাইবাবু পেশায় পুলিশ অফিসার। তিনি নিজে বাঙালি এবং একইসঙ্গে ভারতীয়। কিন্তু কর্তব্যের খাতিরে ভারতের মুক্তিসংগ্রামের অগ্রদূত সব্যসাচী মল্লিককে ধরতে তিনি সুদূর রেঙ্গুনে এসেছেন। কোনো মোহ বা আবেগই তাঁকে সেই কর্তব্য থেকে সরিয়ে রাখতে পারেনি।
  • মানবিকতা – পুলিশের বড়োকর্তা হলেও নিমাইবাবু কঠোর বা নিষ্ঠুর নন। সব্যসাচী সন্দেহে ধৃত গিরীশ মহাপাত্রকে নিয়ে তিনি যে রসিকতা করেছেন তা নিছক রঙ্গতামাশা নয়, এর মধ্য দিয়ে তাঁর চরিত্রের মানবিক গুণও ফুটে উঠেছে। গিরীশ মহাপাত্রের শরীরের প্রতি লক্ষ রেখে তিনি তাকে গাঁজা না খেতে অনুরোধ করেছেন – “কিন্তু ক’দিনই বা বাঁচবে,-এই তো তোমার দেহ, – আর খেয়ো না। বুড়োমানুষটার কথা শুনো।” অন্যদিকে নিমাইবাবুর ভদ্র, শান্ত, অল্পভাষী স্বভাব তাঁকে শ্রদ্ধেয় করে তুলেছে। এই সমস্ত বিশেষত্বগুলিই কাহিনিতে নিমাইবাবুকে স্বতন্ত্র মর্যাদা দান করেছে।
  • ইতিকথা – অপূর্ব তার নিকটাত্মীয় এই মানুষটিকে শ্রদ্ধা না করলেও নিজস্ব চরিত্র বৈশিষ্ট্যে নিমাইবাবু উজ্জ্বল।

স্বল্প পরিসরে হলেও ‘পথের দাবী’ রচনাংশে রামদাস তলওয়ারকর চরিত্রটি কীভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে লেখো।

  • কথামুখ – রামদাসের চরিত্রটি ‘পথের দাবী’ রচনাংশে অতি অল্প পরিসর জুড়ে থাকলেও, চরিত্রবৈশিষ্ট্যে সে উল্লেখযোগ্য ও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।
  • বিচক্ষণতা ও বন্ধুপ্রীতি – রামদাস তলওয়ারকর একজন শিক্ষিত মারাঠি যুবক। অপূর্বর অন্যমনস্কতা তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। সে ভেবেছিল, বাড়ি থেকে কোনো দুঃসংবাদের চিঠি পেয়েছে সে। পরে অবশ্য তার ভুল ভেঙে যায়। সে বুঝতে পারে সব্যসাচীর প্রতি অগাধ ভক্তিই অপূর্বকে অন্যমনস্ক করে তুলেছে। তবে সেই ভক্তির প্রত্যক্ষ প্রকাশ বিপদ ডেকে আনতে পারে, ভেবে সে অপূর্বকে সাবধান করে দিয়েছিল।
  • সহমর্মিতা – গল্পে রামদাস ছিল অপূর্বর সহমর্মী। ফিরিঙ্গি ছেলেদের অত্যাচার, স্টেশনমাস্টারের অমানবিক আচরণের কথা যখন অপূর্ব বলছিল, তখন সমবেদনায় রামদাসের ফরসা মুখ লাল হয়ে উঠেছিল। তারও দু-চোখ ছলছল করে উঠেছিল।
  • স্বদেশিকতা – গাড়ি ছাড়ার মুহূর্তে, অপূর্ব যখন গিরীশ মহাপাত্ররূপী সব্যসাচীর পিছনে পুলিশের ঘুরে বেড়ানোর কথা বলে, তখন রামদাসকে শঙ্কিত হয়ে উঠতে দেখা যায়। লেখকের বর্ণনায় সেই ছবি ধরা পড়েছে এইভাবে – “এই মুহূর্তকালের মধ্যে রামদাসের প্রশস্ত উজ্জ্বল ললাটের উপরে যেন কোন এক অদৃশ্য মেঘের ছায়া আসিয়া পড়িয়াছে এবং সেই সুদূর দুর্নিরীক্ষ্য লোকেই তাহার সমস্ত মনশ্চক্ষু একেবারে উধাও হইয়া গিয়াছে।”
  • ইতিকথা – ‘পথের দাবী’ রচনাংশে খুব স্বল্প পরিসরেও মার্জিত, মানবিক চরিত্রের আলোয় রামদাস ভাস্বর হয়ে উঠেছে।

তোমাদের পাঠ্যাংশ ‘পথের দাবী’-তে গিরীশ মহাপাত্র যদি সত্যিই সব্যসাচী হন, তবে তাঁর সম্পর্কে তোমার মনোভাব ব্যক্ত করো।

  • প্রাককথন – ‘পথের দাবী’ রচনায় উল্লিখিত গিরীশ মহাপাত্রই সব্যসাচী কি না, তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। সমগ্র উপন্যাসের কাহিনি অনুযায়ী গিরীশ মহাপাত্রই সব্যসাচী। তবে আলোচ্য আংশিক কাহিনিতে বোঝার কোনো উপায় নেই যে উক্ত ব্যক্তিই সব্যসাচী। এমনকি, অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসার নিমাইবাবু বা জগদীশবাবুও তা বুঝতে পারেননি। গিরীশ মহাপাত্রকে ‘পলিটিক্যাল সাসপেক্ট’ সব্যসাচী মল্লিক হিসেবে আটক করা হলেও, তিনি বুদ্ধিবলে নিজেকে মুক্ত করে নিতে পেরেছিলেন। অবশ্য অপূর্ব তার দূরদৃষ্টির সাহায্যে বুঝেছিল যে গিরীশ মহাপাত্রই সব্যসাচী। ইংরেজ পুলিশ তাকে ধরতে না পারায় অপূর্ব উল্লসিত হয়েছিল।
  • গিরীশ মহাপাত্ররূপী সব্যসাচী – গিরীশ মহাপাত্রের বেশভূষা নিমাইবাবু-সহ সমগ্র পুলিশ দলকে বিভ্রান্ত করেছিল। সদা সতর্ক ইংরেজ পুলিশের চোখে ধুলো দেওয়ার এমন কৌশল ছদ্মবেশ ধারণ তাঁর দক্ষতারই পরিচয় দেয়। সেই কারণেই তিনি মাথার চুল অদ্ভুতভাবে ছেঁটেছিলেন। কালচার বা আচার-ব্যবহার পরিবর্তন করলে পুলিশ তাঁকে চিনতে পারবে না — এই ধারণা থেকেই সব্যসাচী তাঁর সমগ্র কালচারটাই পাল্টে ফেলেছিলেন। তাঁর রোগা, জীর্ণ শরীর তাঁকে সাহায্য করেছে। স্বদেশের মুক্তির জন্য দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়ানোর কারণে শরীরের দিকে নজর দেওয়ার কোনো অবকাশ তাঁর ছিল না। তবে অমর প্রাণশক্তির কারণে সব্যসাচীকে মৃত্যু অথবা ইংরেজ পুলিশের স্পর্শ করতে পারে না।

‘পথের দাবী’ রচনাংশটির নামকরণ কতদূর সার্থক হয়েছে বিচার করো।

নামকরণের মাধ্যমেই যে কোনো সাহিত্যের অন্তর্নিহিত বিষয় বা ভাব তার পাঠকের কাছে ফুটে ওঠে। সাহিত্যকর্মের নামকরণ সাধারণত বিষয়বস্তু, চরিত্র বা ভাব অনুযায়ী হয়, আবার কখনও-বা তা ব্যঞ্জনাধর্মীও হয়ে থাকে।

এখানে শরৎচন্দ্রের লেখা “পথের দাবী” উপন্যাসের একটি নির্বাচিত অংশ আমাদের পাঠ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। পাঠ্যাংশে আমরা গিরীশ মহাপাত্র চরিত্রটি পাই, যিনি আসলে একজন বিপ্লবী এবং স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছেন। তার আসল নাম সব্যসাচী মল্লিক, যিনি বিভিন্ন ছদ্মবেশে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে চলাফেরা করেন। দেশকে স্বাধীন করাই সব্যসাচীর জীবনের মূল লক্ষ্য। মূল উপন্যাসে সব্যসাচী মল্লিকের একটি সংগঠন ছিল, যার নাম ছিল “পথের দাবী”। এই সংগঠনে সব্যসাচী ছাড়াও আরও কয়েকজন সদস্য ছিলেন, যারা একত্রিত হয়ে দেশকে কীভাবে স্বাধীন করা যায় এবং এই স্বাধীনতা লাভের জন্য কোন পথে আন্দোলন করা যায়, সেইসব বিষয়ে আলোচনা করতেন। এই সংগঠনের মূল লক্ষ্যই ছিল দেশকে পরাধীনতার হাত থেকে মুক্ত করা এবং স্বাধীনতার জন্য একজোট হয়ে আন্দোলন করা। এই সংগঠনের কার্যকলাপকে কেন্দ্র করেই উপন্যাসটি এগিয়েছে। আর এই সংগঠনের মূল কাণ্ডারি ছিলেন সব্যসাচী মল্লিক। সংগঠনটির নাম অনুযায়ী মূল উপন্যাসের নামকরণ করা হয়েছে, এবং আমাদের পাঠ্যাংশটি মূল উপন্যাসেরই একটি নির্বাচিত অংশ। মূল উপন্যাসটিতেও স্বাধীনতা এবং বিদেশি শাসকের অত্যাচার থেকে মুক্তির দাবি প্রাধান্য পেয়েছে। তাই মূল উপন্যাসের নাম অনুযায়ী আমাদের পাঠ্যাংশের এই নির্বাচিত অংশটির নামও “পথের দাবী” রাখা হয়েছে। সেদিক থেকে “পথের দাবী” নামকরণটি সার্থক ও যথাযথ হয়েছে বলা যায়।

‘পথের দাবী’ রচনাংশে অপূর্বর স্বদেশপ্রেমের যে পরিচয় লিপিবদ্ধ হয়েছে, তা নিজের ভাষায় লেখো।

অথবা, “আমার মা, আমার ভাই-বোনকে যারা এই – সব সহস্র কোটি অত্যাচার থেকে উদ্ধার করতে চায় তাদের আপনার বলে ডাকবার যে দুঃখই থাক আমি আজ থেকে মাথায় তুলে নিলাম।” – এই উক্তির আলোকে বক্তার দেশপ্রেমের পরিচয় দাও।

  • শুরুর কথা – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে অপূর্বর হৃদয়ে স্বদেশ ও স্বজনের প্রতি অনুরাগ থেকেই বোঝা যায় তার স্বদেশপ্রেম কতখানি অকৃত্রিম।
  • স্বদেশ ও স্বজনের প্রতি অনুরাগ – নিজের বাড়িতে চুরির সংবাদ জানাতে থানায় এসে অপূর্ব দেখেছিল সব্যসাচী সন্দেহে ধৃত গিরীশ মহাপাত্রের খানাতল্লাশির ঘটনা। ‘সব্যসাচী’ নামটি শুনেই অপূর্বর মন বিচলিত হয়েছিল। গিরীশ মহাপাত্রকে সব্যসাচী ভেবেই সে মনে মনে প্রার্থনা করেছিল, পুলিশ যেন ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার না করে। তাই তাকে বলতে শুনি – “কাকাবাবু, এ লোকটিকে আপনি কোনো কথা জিজ্ঞেস না করেই ছেড়ে দিন, যাকে খুঁজছেন সে যে এ নয়, তার আমি জামিন হতে পারি।” আবার, নিমাইবাবুর কার্যকলাপকেও সে সমর্থন করেনি। “আমার বড়ো লজ্জা এই যে, এদের যিনি কর্তা, তিনি আমার আত্মীয়, আমার পিতার বন্ধু।”
  • দেশপ্রেম – অপূর্বর দেশপ্রেমের যথার্থ পরিচয় পাওয়া যায় রামদাসের সঙ্গে কথোপকথনের মধ্যে। সব্যসাচী সম্পর্কে তার শ্রদ্ধা-ভক্তি চেপে রাখতে না পেরে সে বলেছিল – “যাঁকে তিনি দেশের টাকায়, দেশের লোক দিয়ে শিকারের মতো তাড়া করে বেড়াচ্ছেন, তিনি ঢের বেশি আমার আপনার।”
  • আবেগপ্রবণতা – কোনো কোনো সময় অপূর্ব খুব আবেগময় হয়ে পড়েছে। রাজরোষে পড়তে হবে জেনেও সে মনের ক্ষোভ ও বেদনাকে চেপে রাখতে পারেনি।

বিদেশি সাহেবের কাছে অপূর্বর অপমানিত ও লাঞ্ছিত হওয়ার যে দুটি ঘটনার বর্ণনা রয়েছে, তা লেখো।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ গল্পাংশে দুটি ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়, যেখানে ইংরেজরা অপূর্বকে অপমান করেছে।

  • প্রথম ঘটনা – একবার অপূর্বর বিনা দোষে শাস্তি ভোগ করতে হয়েছিল। স্টেশনে কিছু ফিরিঙ্গি ছেলে কোনো কারণ ছাড়াই তাকে লাথি মেরে প্ল্যাটফর্ম থেকে বার করে দেয়। অপূর্ব যখন সেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে যায়, তখন সাহেব স্টেশনমাস্টার তাকে ভারতীয় বলে অপমান করে এবং কুকুরের মতো দূর করে দেয়। নিজের দেশে এভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার যন্ত্রণা অপূর্ব কোনোদিন ভুলতে পারেনি।
  • দ্বিতীয় ঘটনা – আরেকবার রেলপথে অপূর্ব রেঙ্গুন থেকে ভামো নগরের উদ্দেশে প্রথম শ্রেণির যাত্রী হিসেবে যাত্রা করছিল। সারাদিনের কাজকর্ম শেষ করে অপূর্ব ভেবেছিল, সে শান্তিতে ঘুমাবে। কিন্তু বারবার পুলিশের লোক এসে তার ঘুম ভেঙে নাম-ঠিকানা লিখে নিয়ে যায়। একবার বিরক্ত হয়ে সে প্রতিবাদ করলে সাব-ইনস্পেকটর কটুকণ্ঠে বলে যে, এসব তাকে সহ্য করতে হবে কারণ সে ইউরোপীয় নয়। অপূর্ব যখন বলে সে প্রথম শ্রেণির যাত্রী, তার সঙ্গে এইরকম আচরণ করা অনুচিত, তখন ইনস্পেকটর উত্তর দেয়, এই নিয়ম রেলের কর্মচারীদের জন্য, 

পথের দাবী গল্প (শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়) মাধ্যমিক বাংলা | Madhyamik Bengali Pather Dabi Suggestion 

  এই “পথের দাবী গল্প (শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়) মাধ্যমিক বাংলা | Madhyamik Bengali Pather Dabi Suggestion” পোস্টটি থেকে যদি আপনার লাভ হয় তাহলে আমাদের পরিশ্রম সফল হবে। এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ বোর্ডের সিলেবাস অনুযায়ী সমস্ত শ্রেণীর প্রতিটি অধ্যায় অনুশীলন, বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার গাইডেন্স ও চারীর খবর বা শিক্ষামূলক খবর জানতে  আমাদের এই  siksakul.com ওয়েবসাইটি দেখুন, ধন্যবাদ।

---Advertisement---

Related Post

SSC CHSL, SLST, WBCS History Special: 100 Questions on German Nazism with Answers | জার্মান নাৎসিবাদ সম্পর্কে ১০০টি প্রশ্ন ও উত্তর

Questions on German Nazism with Answers: সরকারি চাকরির প্রস্তুতিতে ইতিহাস একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, বিশেষ করে SSC CHSL, SLST ও WBCS-এর মতো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য। ইতিহাসের মধ্যে জার্মানির নাৎসিবাদ ...

SSC CHSL 2025 Practice Set 3 – Solve Important Questions in GK, English & Reasoning each part 20 questions

SSC CHSL 2025 Practice Set 3: Preparing for the SSC CHSL 2025 exam? Then you’ve landed at the right place! This blog presents a carefully curated SSC CHSL Practice Set ...

📘 SSC CHSL 2025 Practice Set 2 – Solve Important Questions in GK, English & Reasoning

SSC CHSL 2025 Practice Set 2: Preparing for the SSC CHSL 2025 exam? Then you’ve landed at the right place! This blog presents a carefully curated SSC CHSL Practice Set ...

✳️ SSC CHSL, SLST, WBCS History Special: 50 MCQs on World War II and United Nations l দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ (UN) – ৫০টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

50 MCQs on World War II and United Nations: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ (UN) সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর যে কোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে SSC CHSL, ...

Leave a Comment