---Advertisement---

Sirajuddaula Bengali Questions and Answers 2026 l সিরাজউদ্দৌলা নাটক প্রশ্ন ও উত্তর – মাধ্যমিক বাংলা ২০২৬ প্রস্তুতি

By Siksakul

Updated on:

Sirajuddaula Bengali Questions and Answers 2026
---Advertisement---

Sirajuddaula Bengali Questions and Answers: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত সিরাজউদ্দৌলা নাটকটি মাধ্যমিক বাংলা ২০২৬ পরীক্ষার্থীদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় নাট্যকৃতি হিসেবে, এই অধ্যায় থেকে প্রতি বছর পরীক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন, রচনাধর্মী প্রশ্ন, এমনকি বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (MCQ) এসে থাকে। এই ব্লগে আপনি পাবেন – Sirajuddaula Madhyamik Bengali Q&A, সিরাজউদ্দৌলা নাটক প্রশ্ন ও উত্তর, Sirajuddaula Bengali Questions and Answers, এবং Madhyamik Bengali 2026 Suggestion-এর উপর ভিত্তি করে তৈরি বিস্তৃত প্রশ্নোত্তর তালিকা।

আমরা আলোচনা করেছি সিরাজউদ্দৌলা নাটক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন, Madhyamik Bengali Long Questions, সিরাজউদ্দৌলা নাটক নাট্য বিশ্লেষণ, এবং chapter-wise Bengali drama Q&A – যা আপনার বোর্ড পরীক্ষার প্রস্তুতিতে নিশ্চিতভাবেই সহায়ক হবে।

চলুন, বিস্তারিতভাবে দেখে নিই সিরাজউদ্দৌলা নাটকের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর, Madhyamik 2026 Bengali Question Pattern, ও সাজেশন – যা আপনাকে সর্বোচ্চ নম্বর তুলতে সাহায্য করবে।

Sirajuddaula Bengali Questions and Answers l সিরাজউদ্দৌলা নাটক প্রশ্ন ও উত্তর

সিরাজদ্দৌলা নাটকের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

নবাব অলিবর্দি খাঁ-র কোনো পুত্রসন্তান ছিল না। সেইজন্য তিনি তাঁর কনিষ্ঠা কন্যা আমিনা বেগমের 23 বছরের ছেলে সিরাজদ্দৌলাকে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনীত করেন। এতে সিংহাসনের সম্ভাব্য অন্য দাবিদাররা সিরাজের প্রতি অখুশি হয়ে পড়েন। আলিবর্দির বড়ো মেয়ে মেহেরুন্নিসা, যিনি ঘসেটি বেগম নামেই বেশি পরিচিত, তাঁর বিয়ে হয় ঢাকার শাসনকর্তা নওয়াজিশ মুহম্মদ খান তথা শাহমৎ জঙ্গের সঙ্গে। তাঁদের কোনো সন্তান ছিল না। তখন তাঁরা সিরাজের ছোটো ভাই ইকরম উদ্দৌল্লাকে দত্তক নেন। কিন্তু কিছুদিন পরই ইকরম বসন্তরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সন্তান হারানোর দুঃখে মৃত্যু হয় শাহমৎ জঙ্গের। বিধবা ঘসেটি বেগম একাই মতিঝিল প্রাসাদে তাঁর স্বামীর বিপুল সম্পত্তির অধিকারী হন। তাই সিরাজ সিংহাসন লাভ করলে ঘসেটি বেগমের ঈর্ষা হয়। তিনি আলিবর্দির মেজো মেয়ের পুত্র, পূর্ণিয়ার শাসনকর্তা শওকত জঙ্গকে সিংহাসনে বসানোর পরিকল্পনা করতে থাকেন। এঁদের ষড়যন্ত্রে যোগদান করেন ঢাকার দেওয়ান রাজবল্লভ। আর ঘসেটি বেগমের প্রাসাদ মতিঝিল ছিল এই যাবতীয় ষড়যন্ত্রের মূলকেন্দ্র। এই খবর পেয়ে সিরাজ বল প্রয়োগ করে ঘসেটি বেগমের যাবতীয় ধন সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেন এবং নিজের মুরশিদাবাদ রাজপ্রাসাদে নিয়ে এসে তাঁকে নজরবন্দি করে রাখেন। এরপর শওকত জঙ্গের বিরুদ্ধে পূর্ণিয়ার উদ্দেশ্যে যুদ্ধযাত্রা করলেও ইতিমধ্যে ইংরেজ বণিকদের সঙ্গে সম্পর্কের চূড়ান্ত তিক্ততার কারণে তাঁকে মুরশিদাবাদে ফিরে আসতে হয়। শওকত জঙ্গকে হত্যা করেন সিরাজের সেনাপতি মোহনলাল। সিরাজের সিংহাসন লাভের সময় থেকেই ইংরেজদের সঙ্গে তাঁর তিক্ততা শুরু হয়। প্রথমত, সিরাজ যখন সিংহাসনে বসেন তখন চিরাচরিত প্রথা উপেক্ষা করে ইংরেজরা সিরাজকে কোনো নজরানা পাঠায়নি। এতে নবাব অত্যন্ত অপমানিত বোধ করেন। দ্বিতীয়ত, সিরাজের বিরুদ্ধে ঘসেটি বেগম ও শওকত জঙ্গের ষড়যন্ত্রের পিছনে ইংরেজদের সমর্থন আছে, এই খবর পেয়ে সিরাজ অত্যন্ত বিরক্ত হন। তৃতীয়ত, ঘসেটি বেগমের প্রিয়পাত্র, ঢাকার দেওয়ান রাজবল্লভের বিরুদ্ধে তহবিল তছরুপের অভিযোগ উঠলে সিরাজ মুরশিদাবাদে এসে তাঁকে সব হিসাব বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। রাজবল্লভের সহায়তায় ও বুদ্ধিতে তাঁর পুত্র কৃষ্ণদাস প্রচুর ধনরত্ন-সহ ঢাকা থেকে পালিয়ে কলকাতায় এসে ইংরেজদের আশ্রয়ে গা-ঢাকা দেন। কলকাতার ইংরেজ গভর্নর ড্রেকের কাছে তাঁর আশ্রয় মেলে। তবে, নবাবের বারংবার নির্দেশ সত্ত্বেও ইংরেজরা কৃষ্ণদাসকে নবাবের হাতে তুলে দিতে অস্বীকার করে। চতুর্থত, দাক্ষিণাত্যে ইঙ্গ-ফরাসি দ্বন্দ্ব শুরু হলে, তার অজুহাতে ফরাসি ও ইংরেজ উভয়পক্ষই বাংলায় দুর্গ নির্মাণ শুরু করে। সিরাজ দুর্গনির্মাণ বন্ধ করার আদেশ জারি করলে ফরাসিরা তা পালন করলেও, নবাবের মুহুর্মুহু নির্দেশ সত্ত্বেও ইংরেজরা তা অগ্রাহ্য করে। এমনকি, নবাবের দূত নারায়ণ দাসকেও ইংরেজদের লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়, যা নবাবের পক্ষে ছিল অত্যন্ত অপমানজনক। তা ছাড়া কোম্পানির কর্মীরা দিল্লির সম্রাট ফারুকশিয়ার কর্তৃক কোম্পানিকে 1717 খ্রিস্টাব্দে প্রদত্ত ‘দস্তক’ বা ছাড়পত্র তাদের ব্যক্তিগত বাণিজ্যে ব্যবহার করা শুরু করে। সবমিলিয়ে ইংরেজরা সবক্ষেত্রে সিরাজের বিরোধিতা করতে থাকে।

এমন অবস্থায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়া ছাড়া সিরাজের অন্য কোনো উপায় ছিল না। ইংরেজ দমনের উদ্দেশ্যে প্রথমেই তিনি তাদের কাশিমবাজার কুঠি দখল করেন (4 জুন) এবং পরদিন কলকাতার দিকে অগ্রসর হন। 1756 খ্রিস্টাব্দের 20 জুন ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ- সহ সিরাজ কলকাতা অধিকার করে নেন এবং নবাব আলিবর্দি খাঁ-র নামানুসারে কলকাতার নাম রাখেন ‘আলিনগর’। এরপর মানিকচাঁদকে কলকাতার শাসনকর্তা নিযুক্ত করে তিনি ফিরে আসেন। এ-খবর মাদ্রাজে পৌঁছালে, তখনই কর্নেল ক্লাইভ ও অ্যাডমিরাল ওয়াটসনের নেতৃত্বে একটি নৌবহর কলকাতার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে এবং প্রায় বিনা বাধায় তারা পুনরায় কলকাতা দখল করে (2 জানুয়ারি, 1757 খ্রিস্টাব্দে)। এ-খবর পেয়ে আবার যুদ্ধপ্রস্তুতি নিয়ে পূর্ব ভারতে বহিরাক্রমণের আশঙ্কায় সিরাজ কয়েকদিন পর যুদ্ধ বন্ধ করে আলিনগরের সন্ধি স্বাক্ষর করেন (9 ফেব্রুয়ারি)। সন্ধির শর্ত অনুযায়ী ইংরেজরা বিনাশুল্কে বাণিজ্য, দুর্গনির্মাণ এবং নিজেদের নামাঙ্কিত মুদ্রা চালু করার অনুমতি পায়। পরোক্ষে এই সন্ধি সিরাজের অধিকারই খর্ব করে এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উচ্চাকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি করে।

তবে এ সন্ধির মর্যাদা না রেখে, নবাবের প্রতিবাদ অগ্রাহ্য করেই ক্লাইভ ফরাসি ঘাঁটি চন্দননগর দখল করেন (23 মার্চ, 1757 খ্রিস্টাব্দ)। এইভাবেই ক্লাইভ ফরাসিদের প্রত্যক্ষ যুদ্ধে পরাজিত করেন। পাশাপাশি তিনি কূটনীতির সাহায্যে ফরাসি ও নবাবের মধ্যে বন্ধুত্ব স্থাপনের সম্ভাবনা দূর করেন। কিন্তু একইসাথে ফরাসিদের মুরশিদাবাদে আশ্রয়গ্রহণ এবং দাক্ষিণাত্যের ফরাসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নবাবের গোপন যোগাযোগ ক্লাইভের মনে ভয়ের জন্ম দেয় এবং তিনি সিরাজকে সিংহাসনচ্যুত করার ফিকির খুঁজতে থাকেন।

ইতিমধ্যে রাজদরবারেও জগৎশেঠ, রাজবল্লভ, রায়দুর্লভ, উমিচাঁদ, মীরজাফর, ইয়ার লতিফ প্রমুখ সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে ক্লাইভের সঙ্গে হাত মেলান। স্থির হয়, সিরাজকে অপসারিত করে মীরজাফরকে সিংহাসনে বসানো হবে, যার বিনিময়ে তিনি কোম্পানির স্বার্থ সুরক্ষিত করবেন।

ষড়যন্ত্রের প্রস্তুতি শেষ হলে ক্লাইভ নবাবের বিরুদ্ধে আলিনগরের সন্ধির শর্তভঙ্গের অভিযোগ এনে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন ও নবাবকে একটি চরমপত্র পাঠান। আবার চরমপত্রের উত্তরের প্রতীক্ষা না করেই ক্লাইভ সসৈন্যে মুরশিদাবাদের উদ্দেশে যুদ্ধযাত্রা করেন। 1757 খ্রিস্টাব্দের 23 জুন মুরশিদাবাদ থেকে 23 মাইল দূরে নদিয়ার পলাশিতে দুই পক্ষের যুদ্ধ হয়। বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদ্দৌলার পরাজয় হয় এক চরম বিশ্বাসঘাতকের ফাঁদে পড়ে। সেইসঙ্গে বঙ্গের রাজনীতিতে শুরু হয় এক নতুন ঔপনিবেশিক অধ্যায়। সেই থেকে পরাধীন বাংলার দুঃখদুর্দশার শুরু, যার জের চলেছিল পরবর্তী দুশো বছর ধরে।

সিরাজদ্দৌলা নাটকের উৎস

শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের সিরাজদ্দৌলা নাটকের দ্বিতীয় অঙ্কের প্রথম দৃশ্য থেকে নাট্যাংশটি গৃহীত হয়েছে। নাট্যকার নিজেই বলেছেন, “সিরাজদ্দৌলা নামটি নাকি সিরাজুদ্দৌলা হওয়া উচিত। কিন্তু সে পরিবর্তন করলাম না।” তাঁর সিদ্ধান্তকেই স্বীকৃতি দিয়ে এখানে যাবতীয় লেখাতে ‘সিরাজদ্দৌলা‘ বানানটিই অক্ষুণ্ণ রাখা হল।

সিরাজদ্দৌলা নাটকের বিষয়সংক্ষেপ

এই নাট্যাংশের শুরুতেই দেখা যায় মুরশিদাবাদে সিরাজদ্দৌলার সভাকক্ষের দৃশ্য। নাটকের প্রথমে আমরা দেখি, সিরাজ তাঁর দরবারের সদস্য, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধি ওয়াটসকে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে বহিষ্কৃত করছেন। আলিনগরের সন্ধির শর্তরক্ষা না করে ওয়াটসের প্ররোচনায় অ্যাডমিরাল ওয়াটসন যে কলকাতায় সৈন্যসমাবেশের উদ্যোগ নিচ্ছেন, তা ওয়াটসনের পাঠানো চিঠিতে জানতে পারেন বাংলার নবাব সিরাজদ্দৌলা। ফলে ওয়াটসকে বিতাড়িত হতে হয়। বাংলার ফরাসি বণিকদের পক্ষ থেকে মঁসিয়ে লা সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নবাবের সাহায্য চাইতে। তাদের অভিযোগ, নবাবের বিনা সম্মতিতেই তাঁর শাসনাধীন এলাকা চন্দননগরে ইংরেজরা ফরাসিদের হটিয়ে দিয়েছে এবং সমস্ত ফরাসি কুঠি যেন ইংরেজদের ছেড়ে দেওয়া হয়, এই দাবিও তারা জানিয়েছে। কিন্তু নবাব জানান, বিষয় সম্পর্কে তিনি অবগত হলেও এক্ষেত্রে কোনো সাহায্য তিনি করতে পারবেন না। কারণ, সদ্য কলকাতা জয়ের যুদ্ধে এবং শওকত জঙ্গের বিরুদ্ধে পূর্ণিয়ার যুদ্ধে তাঁর বহু অর্থক্ষয়, লোকক্ষয় এবং শক্তিক্ষয় হয়েছে। তাই অল্পসময়ের ব্যবধানে কোনো যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া তাঁর পক্ষে অসম্ভব। এ কথা শুনে মঁসিয়ে লা তাঁকে বলেন যে, ফরাসিদের বঙ্গভূমি হয়তো ছাড়তে হবে, কিন্তু সেইসঙ্গে ধ্বংস হবে বাংলার স্বাধীনতা। এরপর মঁসিয়ে লা রাজসভা ত্যাগ করেন। ইতিমধ্যে ওয়াটসকে বহিষ্কার করা নিয়ে সভায় শোরগোল পড়ে যায়। সে সময় সিরাজের তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। এই সমালোচকদের দলে ছিলেন রাজা রাজবল্লভ, জগৎশেঠ, রায়দুর্লভ এবং মীরজাফর। এই সময় সিরাজের পক্ষে দাঁড়িয়ে কথা বলেন মোহনলাল এবং মীরমদন। ইতিমধ্যেই সিরাজ মীরজাফরকে লেখা ওয়াটসনের একটি চিঠিও প্রমাণ হিসেবে দাখিল করেন। স্বাভাবিকভাবেই, সভায় অত্যন্ত জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয় এবং সিরাজ যাঁদের ওপরে দোষারোপ করেন, তাঁরা সভা ছেড়ে চলে যেতে উদ্যত হন। তখন সিরাজ আন্তরিকভাবে সকলের কাছে সহায়তা প্রার্থনা করেন এবং দেশের স্বাধীনতার জন্য মরণপণ করে নিজেদের উৎসর্গ করতে বলেন। এরপরে দেখা যায়, সকলেই শপথ করেন যে, তাঁরা দেশের স্বার্থে প্রাণ বলি দিতেও রাজি। সকলে সভাস্থল ত্যাগ করার পর একা সিরাজ এবং গোলাম হোসেন পড়ে থাকেন। এসময়ে সেখানে প্রবেশ করেন ঘসেটি বেগম, সিরাজের মাসি। ঘসেটি সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়ায় সিরাজ তাঁর মতিঝিলের আবাসস্থল থেকে তাঁকে সরিয়ে নিজের প্রাসাদে এনে নজরবন্দি করে রাখেন। তাঁর পালিত পুত্র (আসলে তাঁর ভগ্নিপুত্র) শওকত জঙ্গকে নবাবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণার অপরাধে হত্যা করা হয়। স্বাভাবিকভাবেই, ঘসেটি ছিলেন সিরাজবিরোধী এবং তাই তিনি যত শীঘ্র সম্ভব, সিরাজের পতন কামনা করেন। সিরাজকে হত্যা করে নিজের প্রতিহিংসা মেটানোই তাঁর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে ওঠে। ফলে, সিরাজের দুঃসময়ে তিনি খুশি হয়ে ওঠেন। সিরাজকে শাপশাপান্ত করতে করতে ঘসেটি যখন মৃত্যুর অভিশাপও দিতে বসেছেন, তখন ছুটে আসেন লুৎফা, সিরাজের বেগম। তিনি ঘসেটি বেগমকে কোনোমতে এই কাজ থেকে বিরত করেন। কিন্তু সিরাজের সঙ্গে ঘসেটির উত্তপ্ত কথাবার্তা চলতেই থাকে। লুৎফার অনুরোধে সিরাজ শেষপর্যন্ত ঘসেটিকে অন্দরমহলে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিলেও ঘসেটির অভিশাপ আর আগামী পলাশির যুদ্ধের পরিণতি ভেবে সিরাজের হাহাকার -এর মধ্য দিয়েই শেষ হয় নাটকটি।

সিরাজদ্দৌলা নাটকের নামকরণ

যে-কোনো সাহিত্যের ক্ষেত্রেই নামকরণের একটি বিশেষ ভূমিকা থাকে। নামকরণের মধ্য দিয়েই রচয়িতা তাঁর রচনাটি সম্পর্কে পাঠকের কাছে আগাম ধারণা দিয়ে থাকেন। পাঠ্য ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। এই নাট্যাংশটি গৃহীত হয়েছে যে মূল নাটকটি থেকে, তার নামও সিরাজদ্দৌলা। অর্থাৎ, পাঠ্যাংশটির এই নামকরণ মূল নাটকের নামেই। কিন্তু মূল নাটকে সিরাজই হয়ে থেকেছেন সমগ্র নাটকের কেন্দ্রশক্তি। ঠিক তেমনটাই ঘটেছে এই নাট্যাংশের ক্ষেত্রেও।

আলোচ্য নাট্যাংশের শুরুতেই তৃতীয় বন্ধনীর মধ্যে নাট্যকারের যে নির্দেশনা দেওয়া হয়, তাতে প্রথম যে মানুষটির অবস্থানের বর্ণনা দেওয়া থাকে, তিনি সিরাজ। আবার এই নাট্যাংশের সর্বপ্রথম সংলাপ উচ্চারিত হয়েছে সিরাজের মুখ থেকে। সমগ্র নাট্যাংশটিতে একটি কেন্দ্রীয় সমস্যাকে ক্রমশ নির্দেশ করেছেন সিরাজ, আবার সেই সমস্যার কোনো প্রতিকার খুঁজে না পেয়ে হাহাকারও করতে হয়েছে তাঁকে। তিনি নবাব-তাই তাঁকে ঘিরেই যাবতীয় ষড়যন্ত্র, মুরশিদাবাদের রাজসভার সামগ্রিক রাজনীতি-কূটনীতি আবর্তিত হয়েছে। আর সেই আবর্তনের মধ্যেই ঘুরপাক খেয়ে হাহাকার করে উঠেছেন স্বাধীন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদৌল্লা। এই দুর্বিপাকের মধ্যে টলে উঠেছে তাঁর সিংহাসন। এই নাট্যাংশে সবসময়ই সিরাজ চরিত্রটির উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। যবনিকা পতনের আগে তাঁর মুখে বসানো নাটকের শেষ সংলাপেও আর-এক যবনিকা পতনের আভাসই প্রতিধ্বনিত হয়। সুতরাং এই নাট্যাংশের ভরকেন্দ্রই হলেন সিরাজ। সেই কারণেই এই নাট্যাংশের নামকরণ ‘সিরাজদৌল্লা’ যথাযথ ও সার্থক হয়েছে বলা যায়।


আমরা মাধ্যমিক বাংলার ‘সিরাজদ্দৌলা’ থেকে কিছু বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি মাধ্যমিক বাংলার এই সাজেশন আপনাদের জন্য উপকারী হবে।

“কিন্তু ভদ্রতার অযোগ্য তোমরা!” – কাকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলা হয়েছে? এ কথা বলার কারণ কী?

উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে বাংলার নবাব সিরাজদ্দৌলা তাঁর রাজসভায় উপস্থিত ইংরেজদের প্রতিনিধি ওয়াটসের উদ্দেশে প্রশ্নোদ্ধৃত কথাটি বলেছেন।

আলোচ্য কথাটি বলার কারণ – ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং নবাব সিরাজের মধ্যে স্বাক্ষরিত ‘আলিনগরের সন্ধি’ অনুযায়ী, ইংরেজরা কোনোমতেই নবাবের বিরুদ্ধে কোনোরকম যুদ্ধযাত্রা বা যুদ্ধের আয়োজন করবে না। কিন্তু, সিরাজের হাতে কলকাতার অ্যাডমিরাল ওয়াটসনের একটি পত্র এসে পৌঁছোয়। এই পত্রের মাধ্যমে সিরাজ জানতে পারেন যে, অ্যাডমিরাল ওয়াটসনের নেতৃত্বে তাঁর বিরুদ্ধে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ইতিমধ্যেই সৈন্যবাহিনী পাঠিয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং আরও সৈন্য ও নৌবহরের কথা ভাবছে। তিনি এও জানতে পারেন, বহুদিন আগে থেকেই স্বয়ং লর্ড ক্লাইভ নবাবের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধযাত্রার ছক কষেছিলেন এবং পরিকল্পনামাফিকই আলিনগরের সন্ধির শর্ত ভঙ্গ করতে তাঁরা উদ্যোগী হয়েছেন। সর্বোপরি, নবাবের রাজসভায় উপস্থিত কোম্পানির প্রতিনিধি ওয়াটসও এই ষড়যন্ত্রের অংশীদার। তাই ক্রুদ্ধ ও ক্ষুদ্ধ সিরাজ ওয়াটসকে প্রকাশ্য রাজসভায় এ কথা বলতে বাধ্য হয়েছেন।

“জান এর শাস্তি কী?” – কে, কেন এ কথা বলেছেন?

বক্তা – নবাব সিরাজদ্দৌলা মন্তব্যটি করেছেন।

মন্তব্যের কারণ – অ্যাডমিরাল ওয়াটসন কর্তৃক ওয়াটসকে লেখা একটি চিঠি কোনোভাবে নবাবের হাতে এলে তিনি বুঝতে পারেন, ওয়াটস বহুদিন ধরেই সিরাজবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশীদার। লর্ড ক্লাইভের নেতৃত্বে, অ্যাডমিরাল ওয়াটসনের উদ্যোগে ইংরেজরা বাংলায় সিরাজের বিরুদ্ধে সৈন্যদল পাঠাতে চলেছে। এই যুদ্ধে ওয়াটস যে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত রয়েছে, তা-ও সিরাজ জানতে পারেন ওয়াটসের নিজের হাতে লেখা একটি চিঠি থেকে। সেই চিঠিতে ওয়াটস সরাসরি অ্যাডমিরাল ওয়াটসনকে জানিয়েছেন, সিরাজের ওপরে ভরসা করা অসম্ভব এবং অর্থহীন। ফলে ফরাসি ঘাঁটি চন্দননগর আক্রমণ করাই হবে বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত। এ ছাড়া, সিরাজ ক্রমশ বুঝতে পেরেছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে তাঁর দরবারে জায়গা পেয়ে ওয়াটস তাঁর বিরুদ্ধে সভাসদদের উত্তেজিত করেছেন। ওয়াটসই কলকাতার ইংরেজদের উপদেশ দিয়েছেন নবাবের আদেশ লঙ্ঘন করতে। তাই সিরাজ ওয়াটসকে এর যথোচিত শাস্তি দিতে চেয়ে প্রশ্নোদ্ধৃত উক্তিটি করেছেন।

“আমার এই অক্ষমতার জন্যে তোমরা আমাকে ক্ষমা করো।” – কে, কেন এই মন্তব্য করেছেন? যাঁকে উদ্দেশ্য করে এ কথা বলা তাঁর মধ্যে এই মন্তব্যের কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল?

বক্তা – সিরাজ ফরাসি প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা-কে উদ্দেশ্য করে প্রশ্নোদ্ধৃত কথাটি বলেছেন।

মন্তব্যের কারণ – ইংরেজরা ফরাসি উপনিবেশ চন্দননগর অধিকার করলে নবাবের সাহায্যের আশায় মঁসিয়ে লা সিরাজের রাজসভায় আসেন। সিরাজ ফরাসিদের প্রতি সহানুভূতিশীল হলেও জানান যে, কলকাতা জয় করতে গিয়ে এবং পূর্ণিয়ায় শওকত জঙ্গের সঙ্গে লড়াইয়ের কারণে তাঁর বহু লোকক্ষয় ও অর্থব্যয় হয়েছে। তাই তাঁর মন্ত্রীমণ্ডলও আর নতুন যুদ্ধের পক্ষপাতী নন। এই অবস্থায় ফরাসিদের প্রতি সহানুভূতি থাকলেও তাদের সাহায্য করা অসম্ভব জানিয়ে সিরাজ মন্তব্যটি করেন।

উদ্দিষ্ট ব্যক্তির প্রতিক্রিয়া – উদ্ধৃত মন্তব্যটির উত্তরে মঁসিয়ে লা বলেছিলেন যে, সিরাজের সমস্যার কথা বুঝতে পেরেছেন এবং নবাবের জন্য তিনি আন্তরিকভাবেই দুঃখিত। একইসঙ্গে নিজেদের অবস্থাও তাঁকে কষ্ট দিচ্ছে। ভালোবাসার এই দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া ছাড়া তাঁদের আর কোনো উপায় নেই। একইসঙ্গে তিনি নবাবকে তাঁর ভাবী বিপদ সম্পর্কেও সচেতন করে দেন। তিনি জানান, তাঁরা বাংলা ছেড়ে চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্তিমিত আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠবে, আর তাতেই নবাবের সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়ে যাবে।

“তোমার কথা আমার চিরদিনই মনে থাকবে।” — কার কথা বলা হয়েছে? কেন তাঁর কথা মনে থাকবে?

উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশের প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে নবাব সিরাজের দরবারে উপস্থিত ফরাসি প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা-র কথা বলা হয়েছে।

উদ্দিষ্ট ব্যক্তির কথা মনে থাকার কারণ – ফরাসিদের প্রতি নবাব সিরাজের বিশেষ দুর্বলতা ছিল। মঁসিয়ে লা-র কাছে শ্রদ্ধার সঙ্গে সিরাজ তা স্বীকারও করেছেন। ফরাসিদের সঙ্গে বাংলা দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের কথা তিনি স্মরণ করেছেন। তিনি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে উল্লেখ করেছেন যে, ফরাসিরা কখনোই নবাবের সঙ্গে অসদ্ব্যবহার করেননি। ইংরেজরা চন্দননগর দখল করে নেওয়ার পরে ফরাসিরা নবাবের কাছে নিরাপত্তা চাইলেও অসহায় নবাব তাদের ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হন। কিন্তু এরজন্যে নবাবের মনে গ্লানি তৈরি হয়। মঁসিয়ে লা-র কাছে তিনি ক্ষমাপ্রার্থনাও করেন। মঁসিয়ে লা-ও এই বন্ধুত্বের খাতিরেই এ-দেশ ছেড়ে তাঁদের চলে যাওয়া অনিবার্য জানিয়ে নবাবকে তাঁর বিপদ সম্পর্কে সচেতন করে দেন। সিরাজ এর মধ্যে মঁসিয়ে লা-র ‘অন্তরের প্রীতি’-র পরিচয় দেখতে পান। তাই চিরবিচ্ছেদের মুহূর্তে দাঁড়িয়েও, ফরাসিদের প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা-কে সিরাজ জানিয়েছেন যে, তাঁর কথা নবাবের চিরকাল মনে থাকবে।

“I know we shall never meet” – কে, কাকে এ কথা বলেছেন? এই বক্তব্যের পূর্বপ্রসঙ্গ কী ছিল?

বক্তা এবং উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে ফরাসি প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা বাংলার নবাব সিরাজদ্দৌলার উদ্দেশে আলোচ্য মন্তব্যটি করেছিলেন।

পূর্ব প্রসঙ্গ – ইংরেজরা বাংলায় ফরাসিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রার আয়োজন শুরু করলে ফরাসিদের পক্ষে তা ঠেকানো মুশকিল হয়ে পড়ে। কারণ, এর আগে ফরাসিরা ইংরেজ আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য দুর্গনির্মাণের চেষ্টা করলে নবাবই তাতে আপত্তি জানান। নবাবের আদেশ ফরাসিরা শিরোধার্য করলেও ইংরেজরা তা মানেনি। তারা ফরাসিদের চন্দননগর কুঠি অধিকার করে নেয় এবং সমস্ত বাণিজ্যকুঠির অধিকার দাবি করে। বিপন্ন ফরাসিদের পক্ষ থেকে মঁসিয়ে লা সামরিক সাহায্যের আশায় নবাবের কাছে আসেন। কিন্তু সিরাজের পক্ষে সেই মুহূর্তে এই প্রত্যাশা পূরণ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। কারণ, কলকাতা জয়ে এবং পূর্ণিয়ার যুদ্ধে তাঁর লোকবল ও অর্থবল যথেষ্ট কমে যায়। ফলে নবাবের কাছ থেকে সাহায্য না পেয়ে ফরাসিদের বাংলা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। তাই বিদায়গ্রহণের মুহূর্তে ব্যথিত মঁসিয়ে লা এ কথা বলেন।

“এই মুহূর্তে তুমি আমার দরবার ত্যাগ করো।” – বক্তা কাকে, কেন দরবার ত্যাগ করার আদেশ দিয়েছিলেন?

উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – সিরাজদ্দৌলা তাঁর দরবারে উপস্থিত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধি ওয়াটসকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্নে উদ্ধৃত আদেশটি দিয়েছিলেন।

দরবার ত্যাগ করার আদেশ – একাধিক ঘটনায় ইংরেজদের অপরাধ যে সভ্যতা এবং শিষ্টাচারের সীমা অতিক্রম করেছে, তা স্পষ্ট করে দেন সিরাজদ্দৌলা। অ্যাডমিরাল ওয়াটসনের পত্রটিকে সামনে এনে তিনি দেখান যে, সেখানে কর্নেল ক্লাইভের কথামতো কলকাতায় সৈন্যসমাবেশের কথা আছে। চিঠির শেষে লেখা ছিল – “বাংলায় আমি এমন আগুন জ্বালাইব, যাহা গঙ্গার সমস্ত জল দিয়াও নিভানো যাইবে না।” ওয়াটস এই চিঠির দায় নিতে অস্বীকার করলে নবাব ওয়াটসের লেখা চিঠিটিও বের করেন। সেই চিঠিতে লেখা ছিল যে, নবাবের ওপর নির্ভর করা অসম্ভব এবং অর্থহীন। তাই, চন্দননগর আক্রমণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ। সিরাজ ওয়াটসের বিরুদ্ধে নবাবের সভাসদদের উত্তেজিত করার এবং কলকাতার ইংরেজ প্রশাসনকে নবাবের আদেশ লঙ্ঘনে প্ররোচিত করার অভিযোগও আনেন। আর এসবেরই শাস্তি হিসেবে নবাব সিরাজ ওয়াটসকে দরবার ত্যাগ করার নির্দেশ দেন।

“তোমাদের কাছে আমি লজ্জিত।” – বক্তা কাদের কাছে কেন লজ্জিত?

লজ্জিত যাদের কাছে – ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে নবাব সিরাজদ্দৌলা ফরাসি প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা-কে জানিয়েছেন যে তিনি ফরাসিদের কাছে লজ্জিত।

লজ্জার কারণ – মঁসিয়ে লা সিরাজের দরবারে এসেছিলেন ইংরেজদের কাছ থেকে চন্দননগর রক্ষার জন্য নবাবের সাহায্য প্রার্থনা করতে। নবাব ফরাসিদের সঙ্গে বাংলার দীর্ঘদিনের বাণিজ্যিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। নবাবের সঙ্গে তারা যে কখনও অসদ্ব্যবহার করেননি সে-কথাও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্বীকার করেন। আলোচনায় সিরাজ তাঁকে জানান ইংরেজরা যে তাঁর সম্মতি না নিয়ে চন্দননগর অধিকার করেছে, ফরাসিদের সমস্ত বাণিজ্যকুঠি ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে — তিনি এসব বিষয়ে অবহিত। কিন্তু কলকাতা জয় করতে গিয়ে এবং পূর্ণিয়ায় শওকত জঙ্গের সঙ্গে লড়াইয়ে তাঁর প্রচুর লোকক্ষয় এবং অর্থব্যয় হয়েছে। তা ছাড়া নবাবের মন্ত্রীমণ্ডলও নতুন করে কোনো যুদ্ধে আগ্রহী নন। সেই কারণে ফরাসিদের প্রতি পূর্ণ সহানুভূতি থাকলেও তাঁর পক্ষে যে ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। এই অক্ষমতার জন্য মঁসিয়ে লা-র কাছে নবাব সিরাজদ্দৌলা ক্ষমাপ্রার্থনা ও লজ্জা প্রকাশ করেছেন।

“মুন্সিজি, এই পত্রের মর্ম সভাসদদের বুঝিয়ে দিন।” — কে, কাকে পত্র লিখেছিলেন? এই পত্রে কী লেখা ছিল?

বক্তা এবং উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশ থেকে নেওয়া আলোচ্য উক্তিটিতে অ্যাডমিরাল ওয়াটসনের পত্রের কথা বলা হয়েছে। ওয়াটসন সিরাজদ্দৌলার দরবারে ইংরেজ প্রতিনিধি ওয়াটসকে এই পত্রটি লিখেছিলেন।

পত্রের বিষয় – ইংরেজদের অপরাধ যে সভ্যতা এবং শিষ্টাচারের সীমা অতিক্রম করেছে, তা উল্লেখ করতে গিয়ে নবাব সিরাজদ্দৌলা ওয়াটসনের পত্রটির কথা উত্থাপন করেন। তিনি মুনশিকে পত্রটি বের করতে বলেন এবং মুনশি পত্রটি ওয়াটসকে দেন। ওয়াটসকে দিয়ে প্রথমে পত্রটির শেষ অংশ পড়ান, তারপরে সভাসদদের বোঝানোর জন্য মুনশিকে তার তরজমা করতে বলেন। সেই অনুবাদের বক্তব্য হল — কর্নেল ক্লাইভের প্রত্যাশামতো সৈন্যদল শীঘ্রই কলকাতায় এসে পৌঁছোবে। তিনি অতি দ্রুত আর-একটি জাহাজ মাদ্রাজে পাঠিয়ে সংবাদ দেবেন যে, আরও সৈন্য এবং জাহাজ বাংলায় আবশ্যক। সবশেষে প্রায় হুমকির সুরে ওয়াটসন বলেন যে বাংলায় তিনি এমন আগুন জ্বালাবেন যা গঙ্গার সমস্ত জল দিয়েও নেভানো যাবে না।

“আমার এই অক্ষমতার জন্য তোমরা আমাকে ক্ষমা করো” – বক্তা কাদের কাছে কোন্ অক্ষমতা প্রকাশ করেছেন?

বক্তা ও উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের লেখা ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে সিরাজ ফরাসি প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা-কে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলেছেন।

অক্ষমতার প্রকাশ – ইংরেজরা ফরাসি উপনিবেশ চন্দননগর অধিকার করে নিলে নবাবের সাহায্য পাওয়ার আশায় মঁসিয়ে লা সিরাজের রাজসভায় আসেন। ফরাসিদের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্কের কথা সিরাজ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন – “তোমরা, ফরাসিরা, বহুদিন থেকেই বাংলা দেশে বাণিজ্য করচ। আমার সঙ্গে কখনো তোমরা অসদ্ব্যবহার করনি।” তিনি বলেন, ইউরোপে ইংরেজ আর ফরাসিদের লড়াইয়ের প্রভাবে এখানেও ইংরেজরা চন্দননগর অধিকার করে ফরাসিদের কুঠি ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। এরপর নবাব সিরাজ ফরাসি প্রতিনিধিকে তাঁর অক্ষমতার কথা জানিয়ে বলেন যে, কলকাতা জয় করতে গিয়ে এবং পূর্ণিয়ায় শওকত জঙ্গের সঙ্গে লড়াইয়ে তাঁর বহু লোকক্ষয় ও অর্থব্যয় হয়েছে। তাঁর মন্ত্রীমণ্ডলও এই সময় নতুন কোনো যুদ্ধের পক্ষপাতী নন। এই অবস্থায় সহানুভূতি থাকলেও ফরাসিদের সাহায্য করা বা ইংরেজদের সঙ্গে বিবাদ করা সম্ভব নয়।

“আর কত হেয় আমাকে করতে চান আপনারা?” – কারা কাকে কীভাবে হেয় করেছিল?

সিরাজকে হেয় করা – অশচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে নবাব সিরাজ মীরজাফর, জগৎশেঠ, রাজবল্লভ প্রমুখ তাঁর সভাসদ এবং অভিজাতদের উদ্দেশে তাঁকে হেয় করার অভিযোগ করেছিলেন।

  • নবাব বিরোধিতা – বাংলার সিংহাসনে আরোহণের পর থেকেই নবাব সিরাজ তাঁর বিরুদ্ধে প্রধান সিপাহসালার থেকে অভিজাত-সকলের বিরোধিতা উপলব্ধি করেছিলেন।
  • অভিজাতদের স্বার্থসিদ্ধি – নবাব যখন তাঁর সভার ইংরেজ প্রতিনিধি ওয়াটসকে বহিষ্কার করেন তখন রাজবল্লভ ইংরেজদের নবাববিরোধী ভূমিকার কথা জেনেও তাতে আপত্তি জানান। জগৎশেঠ নবাবের বিরুদ্ধে অবিবেচনার অভিযোগ আনেন। সিরাজ স্পষ্ট বুঝতে পারেন যে, নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্যই এই অভিজাতরা তৎপর।
  • অভিমান প্রকাশ – এই ঘটনায় সিরাজের অভিমান তীব্রভাবে প্রকাশিত হয়। অভিমান করেই নিজের অপরাধ তিনি স্বীকার করেছেন, সমস্ত অভিযোগ মাথা নীচু করে গ্রহণ করেছেন। তিনি কোনো কটূক্তির প্রতিবাদও করেননি।
  • হেয় করার চেষ্টা – অথচ এইসব অভিজাতরা সমস্ত দেশে তাঁর দুর্নাম রটিয়েছেন, কর্মচারীদের মনে তাঁর প্রতি অশ্রদ্ধার ভাব এনে দিয়েছেন, আত্মীয়স্বজনের মন বিষিয়ে দিয়েছেন এবং এভাবে সবসময়ে সবক্ষেত্রে তাঁকে হেয় করার চেষ্টা চলেছে বলে নবাব মনে করেছেন।

“আমার উপদ্রব নয় শেঠজি, আমার সহিষ্ণুতাই আপনাদের স্পর্ধা বাড়িয়ে দিয়েছে!” – কোন্ প্রসঙ্গে এ কথা বলা হয়েছে? সহিষ্ণুতা কার স্পর্ধা বাড়িয়েছে এবং কীভাবে?

প্রসঙ্গ – শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে নিজের দরবারে নবাব সিরাজ মুখোমুখি হয়েছিলেন তাঁর রাজ্যের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে। সেখানে রাজা রাজবল্লভ স্পষ্টই জানিয়েছিলেন যে ইংরেজ প্রতিনিধি ওয়াটসকে নবাব অপমান করে না তাড়ালেই পারতেন। জগৎশেঠ নবাবের বিরুদ্ধে অবিবেচনার অভিযোগ আনেন। পালটা হিসেবে সিরাজ তাঁদের বিরুদ্ধে স্বার্থসিদ্ধির অভিযোগ আনলে জগৎশেঠ বলেন যে, স্বার্থসিদ্ধি করতে চাইলে “বাংলার সিংহাসনে এতদিনে অন্য নবাব বসতেন।” সিরাজ এই মন্তব্যে দুঃসাহস দেখলে জগৎশেঠ বলেন – “আপনার উপদ্রবই আমাদের মনে এই সাহস এনে দিয়েছে।” এর উত্তর দিতে গিয়েই সিরাজ প্রশ্নে উদ্ধৃত মন্তব্যটি করেন।

সহিষ্ণুতা যার যেভাবে স্পর্ধা বাড়িয়েছিল – সিরাজের মতে তাঁর সহিষ্ণুতা রাজবল্লভ, রায়দুর্লভ, জগৎশেঠ, মীরজাফর প্রমুখের স্পর্ধা বাড়িয়েছে। এই সহিষ্ণুতাই তাদের নবাবের মুখের সামনে এভাবে কথা বলার সাহস জুগিয়েছে, ইংরেজদের হয়ে কথা বলার স্পর্ধা দিয়েছে। এমনকি নবাববিরোধী চক্রান্তে শামিল হতেও তাদের পিছপা করেনি।

“দুর্দিন না সুদিন” – বক্তা কে? এখানে দুর্দিন ও সুদিন বলতে কী বোঝানো হয়েছে? অথবা, “সিরাজের নবাবির এই পরিণাম” – বক্তা কে? প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করো।

সিরাজদ্দৌলা নাটকে উল্লিখিত উক্তির বক্তা হলেন বাংলার নবাব সিরাজদ্দৌলার জ্যেষ্ঠা মাসি, ঘসেটি বেগম।

নবাব আলিবর্দীর মৃত্যুর পর, তার কনিষ্ঠ কন্যা আমিনা বেগমের পুত্র সিরাজদ্দৌলা বাংলার নবাব হন। তবে ঘসেটি বেগম, যিনি সিরাজের মা’র বোন, তার পালিত পুত্র সৌকত জঙ্গকে নবাব বানাতে চেয়েছিলেন। এই কারণে, মীরজাফর, জগৎ শেঠ, রায় দুর্লভসহ অন্যান্য সিরাজ বিরোধী ব্যক্তিরা মিলিত হয়ে একটি শক্তি তৈরি করেন। সিরাজ ঘসেটি বেগমকে তার প্রাসাদে বন্দী করেন। কিন্তু ঘসেটি বেগম ইংরেজদের সাহায্য চেয়েছিলেন যাতে তারা সিরাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। তখন ইংরেজ বাহিনী মুর্শিদাবাদ আক্রমণ করে।

এই সময় সিরাজের জন্য ছিল দুর্দিন, যা ঘসেটি বেগম তার উক্তিতে বলেছেন। অন্যদিকে, ঘসেটি বেগমের কাছে এটি ছিল সুদিন, কারণ তিনি সিরাজের পতন চেয়েছিলেন। তাই তার জন্য এটি সুদিন ছিল, এবং শেষে তিনি বলেন, “সিরাজের নবাবির এই পরিণাম।”

“আমরা নবাবের নিমক বৃথাই খাই না, এ কথা তাঁদের মনে রাখা উচিত।” – কে এ কথা বলেছেন? তাদের এ কথা বলার কারণ কী?

বক্তা – প্রশ্নোদ্ধৃত কথাটি বলেছেন নবাবের বিশ্বস্ত সেনাপতি মীরমদন।

এ কথা বলার কারণ – নবাব সিরাজদ্দৌলা বিশ্বাসভঙ্গের জন্য ইংরেজ প্রতিনিধি ওয়াটসকে তাঁর দরবার ত্যাগ করতে নির্দেশ দেন। কিন্তু ইতিমধ্যে সিরাজের যেসব উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারীদের সঙ্গে ইংরেজদের গোপন সমঝোতা হয়েছিল তারা এর বিরোধিতা করে। সিরাজের আচরণে জগৎশেঠ ক্ষোভ প্রকাশ করেন, মীরজাফর সিরাজের বিরুদ্ধে ‘মানী-লোকের মানহানি’ করার অভিযোগ আনেন। এমনকি সিপাহসালার মীরজাফর জানিয়ে দেন যে, সিরাজ এভাবে চললে তাঁর হয়ে অস্ত্রধারণ করা মীরজাফরের পক্ষে সম্ভব হবে না। এই সমবেত আক্রমণের সময়ে সিরাজের পাশে দাঁড়ান তাঁর বিশ্বস্ত দুই সেনাপতি মীরমদন ও মোহনলাল। মীরমদন মীরজাফরের বিরুদ্ধে কখনোই কোনো যুদ্ধে সক্রিয় না হওয়ার অভিযোগ আনেন। মীরজাফর অধস্তনের এই ঔদ্ধত্য মানতে না পারার কথা বললে মোহনলাল তাকে মনে করিয়ে দেন, “নবাবের কাজের সমালোচনাও সব সময়ে শোভন নয়।” এই প্রেক্ষাপটেই মীরমদন প্রশ্নে উদ্ধৃত উক্তিটির মধ্য দিয়ে সভায় উপস্থিত সবাইকে নবাবের প্রতি দায়বদ্ধতা পালনের কথা মনে করিয়ে দেন।

“শেঠজি, জাফর আলি খাঁ, আপনাদের শ্রদ্ধেয় বন্ধুর মুখের দিকে একবার চেয়ে দেখুন!” – কেন সিরাজ এরকম মন্তব্য করেছেন?

  • শুরুর কথা – সিরাজদ্দৌলা এবং তাঁর বিরোধিতায় নিয়োজিত কিছু সভাসদের মধ্যে উত্তপ্ত কথাবার্তার একটি খণ্ড মুহূর্ত ধরা পড়ে এই উদ্ধৃতির মধ্যে।
  • বক্তব্য খণ্ডন – রাজবল্লভ, জগৎশেঠ, মীরজাফর প্রমুখ নবাবের বিরুদ্ধে উপদ্রব ও অনাচারের যে অভিযোগগুলি আনেন তাতে ক্রুদ্ধ, ব্যথিত এবং হতাশ সিরাজ একে একে প্রত্যেকের বক্তব্য খণ্ডনে উদ্যত হন।
  • হোসেনকুলীর প্রসঙ্গ – রাজবল্লভ, যাঁকে এখানে ‘বন্ধু’ বলে অভিহিত করা হয়েছে তিনি সিরাজের পাপকর্ম নিয়ে প্রশ্ন তুললে নবাব হোসেনকুলীর প্রসঙ্গ টেনে আনেন। হোসেনকুলী, যিনি পাপপূর্ণ কাজে লিপ্ত ছিলেন, তিনি সিরাজের কথামতো ‘প্রাণ দিয়ে তা বুঝিয়ে দিয়ে’ যান।
  • উদ্দিষ্ট মন্তব্য – নবাব জানতে চান, রাজবল্লভও হোসেনের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে চান কি না। এমন ক্রুদ্ধ, হুমকি-মেশানো জিজ্ঞাসায় ভীত, সংকোচিত ও অপমানিত রাজবল্লভ নিজের মাথা নীচু করেন। তখনই সিরাজ জগৎশেঠ, মীরজাফরকে উদ্দেশ্য করে রাজবল্লভের প্রতি তীব্র ব্যঙ্গ প্রকাশ করে মন্তব্যটি করেন।

“গোলামহোসেন, মোহনলাল আর মীরমদন যখন রয়েচে, তখন আর ভাবনা কী? চলুন।” – উদ্ধৃতাংশের বক্তা কে? তিনি কাদের, কেন সঙ্গে নিয়ে চলে যেতে চান? 

বক্তা – শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের লেখা ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে উদ্ধৃত উক্তিটির বক্তা নবাব সিরাজের সিপাহসালার মীরজাফর।

বক্তার লক্ষ্য – বাংলার নবাবি রাজত্বের গৃহবিবাদের একটি স্পষ্ট মুহূর্ত ধরা পড়েছে নাট্যাংশের এই অংশে। সিরাজকে সমর্থন ও সহযোগিতা জুগিয়ে যেতে চান যাঁরা, সেই মোহনলাল, মীরমদন এবং গোলাম হোসেনদের পদ, তাঁদের ক্ষমতা এবং নবাবের বিচক্ষণতাকে মীরজাফর কটাক্ষ করেছেন। এই মন্তব্যে মীরজাফরের সিরাজের শিবির ত্যাগ করে বিরোধী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পক্ষে যোগদানের ইচ্ছে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মীরমদন এবং অন্যরা মীরজাফরের নিষ্ক্রিয়তা, নবাবের সপক্ষে অস্ত্রধারণে অনীহার সমালোচনা করেন। এইসময় অনিবার্যভাবেই উভয়পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে দোষারোপ ও পালটা দোষারোপ করতে থাকেন। তখন মীরমদন নবাবকে পূর্ণ সাহায্যদানের কথা ঘোষণা করলে ক্ষিপ্ত সিপাহসালার তাঁর অনুগামী-জগৎশেঠ, রায়বল্লভদের নিয়ে দরবার ত্যাগ করতে উদ্যত হন।

বস্তুতপক্ষে মীরজাফরের এমন কটাক্ষ এবং অভিযোগ আসলে অজুহাত মাত্র। তাঁদের নবাবের সঙ্গত্যাগ গোপন চক্রান্তেরই অংশ ছিল।

“আজ বিচারের দিন নয়, সৌহার্দ্য স্থাপনের দিন!” – কে কার উদ্দেশে এই উক্তি করেছেন? বক্তার এমন উত্তির কারণ কী?

বক্তা ও উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – নবাব সিরাজদ্দৌলা মীরজাফরকে উদ্দেশ্য করে আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।

আলোচ্য উক্তির কারণ – সিরাজ বুঝেছিলেন তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বহুদূর বিস্তৃত। ইংরেজদের সঙ্গে গোপন ষড়যন্ত্রে যুক্ত হয়েছেন মীরজাফর, রাজবল্লভ-সহ তাঁর রাজসভার কিছু কর্মচারী। এই অবস্থায় বিবেচক নবাব বুঝেছিলেন, ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে গেলে হিতে বিপরীতই হবে। তার বদলে মীরজাফরকে বুঝিয়ে ঠিক পথে আনা গেলে বাংলার স্বাধীনতা রক্ষা করা সহজ হবে। তাই মীরজাফর নবাবের উদ্দেশে যখন বলেছেন – “নবাব কি প্রকাশ্য দরবারেই আমার বিচার করতে চান?” তখন নবাব নিজে সংযত হয়ে বিচারের প্রসঙ্গটিকে দূরে রাখতে চেয়েছেন। তিনি মনে করেছেন, বাংলা যখন বিপন্ন, নবাবের সিংহাসন যখন টলমল করছে, তখন ক্রোধ সংবরণ করাই শ্রেয়। তাই সিরাজ আন্তরিক ভঙ্গিতে নিজের এবং বাংলার দুর্দশার কথা শুনিয়ে মীরজাফরের মনে দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন।

“আপনাদের কাছে এই ভিক্ষা যে, আমাকে শুধু এই আশ্বাস দিন” – কাদের কাছে বক্তা ভিক্ষা চান? তিনি কী আশ্বাস প্রত্যাশা করেন?

বক্তা ও উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের লেখা ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশের অন্যতম চরিত্র সিরাজ তাঁর বিরুদ্ধপক্ষের মীরজাফর, রাজবল্লভ, রায়দুর্লভ প্রমুখের কাছে ‘ভিক্ষা’ চেয়েছেন।

বক্তার প্রত্যাশিত আশ্বাস – কোম্পানির ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি ধীরে ধীরে সমগ্র বাংলা দখলের উদ্দেশ্যে বিস্তৃত হয়েছিল। নবাব সিরাজদ্দৌলা এই সত্যটি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন এবং বুঝেছিলেন তাঁরই অধীনস্থ ক্ষমতাদখলে উদ্‌গ্রীব কিছু কর্মচারী ও সভাসদ এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। কিন্তু নবাব মনেপ্রাণে চাইতেন বাংলার স্বাধীনতা যেন অটুট থাকে। আর সেজন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। মীরজাফর ও বাকি কিছু সভাসদ তাঁকে ত্যাগ করলে এই সংহতি বিনষ্ট হবে বলে সিরাজ মনে করেছিলেন। তাই সমস্ত বিচার বন্ধ রেখে, সমস্ত ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নিয়ে, সভায় ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন সিরাজ। এজন্য তিনি নিজের সমস্ত দোষের জন্য ক্ষমা চান এবং মীরজাফর ও অন্যান্যদের রাজদরবার থেকে চলে না যেতে অনুরোধ করেন। তাঁদের কাছে প্রার্থনা জানান, “বাংলার এই দুর্দিনে আমাকে ত্যাগ করবেন না।” তিনি তাঁদের মুখে তাঁকে ছেড়ে না যাওয়ার আশ্বাসটুকু শুনতে চান।

“বাংলার এই দুর্দিনে আমাকে ত্যাগ করবেন না।” — কে, কাদের উদ্দেশে এ কথা বলেছেন? এই উক্তির মধ্য দিয়ে বক্তার কোন্ মানসিকতা প্রকাশ পেয়েছে, লেখো।

বক্তা এবং উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – বিশিষ্ট নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদ্দৌলা সিপাহসালার মীরজাফর ও তাঁর অনুগামীদের উদ্দেশ্য করে এ কথা বলেছেন।

বক্তার মানসিকতা –

  • প্রাককথন – ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ক্রমশ তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে চলেছে। কলকাতা এবং কাশিমবাজারে তাঁদের দুর্গনির্মাণ অব্যাহত। এর মধ্যে সিরাজের বিরুদ্ধে স্বয়ং মীরজাফর ও ঘসেটি বেগম ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন।
  • সৌহার্দ্য স্থাপন – বিচক্ষণ সিরাজ বুঝেছেন, এই পরিস্থিতিতে নিজেকে সংযত রেখে সমস্ত মনোমালিন্য মিটিয়ে নিতে হবে। তাই মীরজাফর ও তাঁর অনুগামীদের যাবতীয় অভিযোগ নিজে মাথা পেতে নিয়ে তিনি সৌহার্দ্য স্থাপনে প্রয়াসী হয়েছেন।
  • দেশপ্রেম – নিজের অপরাধ স্বীকার করে নিয়ে মীরজাফরকে বাংলার ঘোর দুর্দিনে সঙ্গ ত্যাগ না করার আবেদন জানিয়েছেন। এই উক্তির মধ্যে সিরাজের বিনয়ী স্বভাবের পরিচয় পাওয়া গেলেও তার আড়ালে বড়ো হয়ে উঠেছে তাঁর দেশপ্রেমিক স্বভাব। শুধু বাংলার স্বাধীনতারক্ষার জন্য সিরাজ শত্রুর কাছেও মাথা নত করতে প্রস্তুত ছিলেন।

“আছে শুধু প্রতিহিংসা” – মন্তব্যটি কার? কী কারণে তিনি প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়েছেন?

অথবা, “আমার রাজ্য নাই, তাই আমার কাছে রাজনীতিও নাই-আছে শুধু প্রতিহিংসা।” – কে কাকে এ কথা বলেছে? এই উক্তিতে বক্তার কোন্ মানসিকতা ধরা পড়েছে?

মন্তব্যটির বক্তা – ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে প্রশ্নোদ্ধৃত মন্তব্যটি করেছেন ঘসেটি বেগম।

বক্তার মানসিকতা – নবাব আলিবর্দি খাঁর জ্যেষ্ঠা কন্যা ঘসেটি বেগম তাঁর রাজনৈতিক উচ্চাশার কারণে বাংলার সিংহাসনের উত্তরাধিকার প্রত্যাশা করেছিলেন। কিন্তু আলিবর্দি মনোনীত সিরাজদ্দৌলা বাংলার নবাব হলে ঘসেটি তা মেনে নিতে পারেননি। তিনি আলিবর্দির আর-এক দৌহিত্র শওকত জঙ্গকে সিরাজের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। ফলস্বরূপ ঘসেটির মতিঝিল প্রাসাদ হয়ে ওঠে সিরাজবিরোধী চক্রান্তের কেন্দ্রস্থল। নবাব সিরাজ পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে মতিঝিল প্রাসাদের দখল নেন এবং ঘসেটিকে নিজের মুরশিদাবাদের প্রাসাদে নজরবন্দি করে রাখেন। ঘসেটি পরিণত হন সিরাজের প্রত্যক্ষ বিরোধীতে। ইংরেজদের কাশিমবাজারের দিকে আসার খবর পেয়ে তিনি প্রত্যাশা করেন মুরশিদাবাদেও তারা আসবে এবং বাংলার সুদিন ফিরবে – “ঘসেটির বন্ধন মোচন হবে, সিরাজের পতন হবে…।” সিরাজ তাঁকে গৃহহারা করেছে, তাঁর সর্বস্ব লুঠ করেছে, তাঁকে দাসী করে রেখেছে। তাঁর এই অভিযোগ অস্বীকার করতে চেয়ে সিরাজ বলেন যে রাজনীতির কারণে মতিঝিল প্রাসাদে তাঁকে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতেই ঘসেটি প্রশ্নে উদ্ধৃত উক্তিটি করেন।

“বেগমকে আজীবন আমারই মতো কেঁদে কাটাতে হবে।” – ‘বেগম’ কে? ‘আমার মতো’ বলতে কার কথা বলা হয়েছে? তার কেঁদে কাটানোর কারণ কী?

বেগমের পরিচয় – শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশের উল্লিখিত অংশে ‘বেগম’ বলতে নবাব সিরাজদ্দৌলার পত্নী লুৎফা-র কথা বলা হয়েছে।

যার কথা বলা হয়েছে – ‘আমার মতো’ বলতে এখানে ঘসেটির কথা বলা হয়েছে।

প্রতিক্রিয়ার কারণ – নবাব আলিবর্দি খাঁর জ্যেষ্ঠা কন্যা ঘসেটি বেগমের রাজনৈতিক উচ্চাশা ছিল যে, আলিবর্দির পরে তিনি বাংলার শাসনক্ষমতার অধিকারী হবেন। তাই সিরাজকে বাংলার শাসনকর্তা হিসেবে তিনি কখনোই মেনে নিতে পারেননি। পূর্ণিয়ার নবাব শওকত জঙ্গকে সিরাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্ররোচিত করেন তিনি। যদিও নবাব সিরাজদ্দৌলা তাঁকে পরাজিত ও নিহত করেন। ঘসেটির মতিঝিল প্রাসাদ একসময় হয়ে ওঠে নবাববিরোধী ষড়যন্ত্রের কেন্দ্র। সিরাজ এসব বুঝতে পেরে ঘসেটিকে মতিঝিল থেকে উৎখাত করেন এবং মুরশিদাবাদে নিজের প্রাসাদে গৃহবন্দি করে রাখেন। তাঁর ওপর ঘটে-চলা ঘটনার প্রতিকার করার মতো কোনো ক্ষমতা তাঁর না থাকায় নিজের কান্নাতেই ঘসেটি সান্ত্বনা পেতেন। তবে এই কান্নাই সিরাজ ও লুৎফার প্রতি প্রতিহিংসা হয়ে আত্মপ্রকাশ করে।

“মনে হয়, ওর নিশ্বাসে বিষ, ওর দৃষ্টিতে আগুন, ওর অঙ্গ-সঞ্চালনে ভূমিকম্প।” – কে, কার সম্পর্কে এই মন্তব্য করেছে? তার সম্পর্কে বক্তার এরূপ মন্তব্যের কারণ কী?

বক্তা এবং উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে, নবাব সিরাজদ্দৌলার পত্নী লুৎফাউন্নিসা ঘসেটি বেগম সম্পর্কে এ কথা বলেছেন।

এরূপ মন্তব্যের কারণ – ঘরে-বাইরে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে সিরাজ যখন বিচলিত, সেই সময় নবাবের মাসি ঘসেটি রাজদরবারে প্রবেশ করেন। তারপর একের পর এক তীব্র বাক্যবাণে তিনি সিরাজকে জর্জরিত করতে থাকেন। ঘসেটির প্রতিটি বাক্যই বিষ-মাখানো তিরের মতো যেমন সিরাজের হৃদয়ে বিঁধে যায়, তেমনই সেখানে উপস্থিত সিরাজের পত্নী লুৎফার অন্তরকেও ক্ষতবিক্ষত করে। তিনি বুঝতে পারেন ঘসেটি সাক্ষাৎ প্রতিহিংসার প্রতিমূর্তি, যিনি লুৎফার স্বামী সিরাজেরও শওকত জঙ্গের মতোই নির্মম পরিণতি চান। ঘসেটি বলেন, “চোখের জলে নবাব পথ দেখতে পাবেন না। বেগমকে আজীবন আমারই মতো কেঁদে কাটাতে হবে।” লুৎফা উপলব্ধি করেন ঘসেটির সর্বাঙ্গে অতৃপ্তির জ্বালা, নিশ্বাসে বিষ, দৃষ্টিতে আগুন আর অঙ্গসঞ্চালনে ভূমিকম্পের অনুরণন। ঘসেটিকে সহ্য করতে না পেরে লুৎফাউন্নিসা তাঁকে অবিলম্বে মতিঝিলে পাঠিয়ে দিতে বলেছেন। উক্তিটির মধ্যে ঘসেটি সম্পর্কে লুৎফার ভীতি এবং আশঙ্কাই প্রকাশ পেয়েছে।

“তাই আজও তার বুকে রক্তের তৃষা।” – কার বুকে, কেন রক্তের তৃষা বলে বক্তা মনে করেছেন? এই উক্তির আলোকে বক্তার মানসিকতার পরিচয় দাও।

প্রেক্ষাপট – শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে বাংলার নবাব সিরাজ পলাশির প্রান্তরের রক্তপিপাসাকে দেখেছেন। তাঁর ভাবনায় পলাশি নামের একটি তাৎপর্য ধরা পড়েছে। সিরাজ আশঙ্কার সঙ্গে বলেছেন যে, একসময় হয়তো লাখে লাখে পলাশ ফুল ফুটে প্রান্তর রাঙা হয়ে থাকত, সেই কারণেই স্থানটির নাম হয় পলাশি। আর আজ সেই প্রান্তর যেন ব্রিটিশের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বাংলার মানুষের বুকের রক্তপানের জন্য মুখিয়ে রয়েছে।

এই উক্তির আলোকে বক্তার মানসিকতা – ঘরে-বাইরে ষড়যন্ত্রের শিকার হন সিরাজদ্দৌলা। একদিকে সেনাপতি মীরজাফর ও অন্য অভিজাতরা অন্যদিকে সিরাজের নিজের মাসি ঘসেটি বেগম সিরাজের পতনের জন্য চক্রান্তে লিপ্ত। বিচক্ষণ সিরাজ বুঝতে পেরেছেন এর ফলস্বরূপ ইংরেজ কোম্পানি আরও মরিয়া হয়ে উঠবে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করতে। তাই পলাশির যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী জেনে তিনি গভীরভাবে হতাশ হয়েছেন। কারণ এই যুদ্ধে জয়লাভের কোনো আশা তিনি দেখতে পাচ্ছেন না। তাঁর মনে হয়েছে, একসময় পলাশ ফুলে লাল হয়ে থাকা পলাশি যেন রক্তের তৃষায় আকুল হয়ে আছে।

“জানি না, আজ কার রক্ত সে চায়। পলাশি, রাক্ষসী পলাশি” – বক্তা কে? উক্তিটির মধ্য দিয়ে বক্তার চরিত্র বিশ্লেষণ করো।

বক্তা – নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের লেখা ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে আলোচ্য উক্তিটির বক্তা হলেন স্বয়ং নবাব সিরাজদৌল্লা।

বক্তার চরিত্র – কখনোই কোনো যুদ্ধের আগাম পরিণাম জানানো যায় না। পলাশির যুদ্ধের মতো যুদ্ধের ক্ষেত্রে তো নয়-ই। কারণ এই যুদ্ধে লিপ্ত ছিল একাধিক পক্ষ এবং প্রত্যেকেরই উদ্দেশ্য আলাদা আলাদা রকমের। ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি, পারিবারিক প্রতিহিংসা, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের বাসনা ইত্যাদি নানাবিধ জটিলতা এরসঙ্গে মিশে ছিল। তাই লড়াইটা যে নিছক সিরাজ বনাম কোম্পানি ছিল না-সেটা নবাব নিজেও বুঝেছিলেন। তাঁর সপক্ষে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েও মীরজাফর, রাজবল্লভ যে চূড়ান্ত যুদ্ধে তাঁর পাশে নাও থাকতে পারেন-এই সত্যটি বুঝতে সিরাজের কোনো অসুবিধেই হয়নি। এই যুদ্ধ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, যার ঘটনাস্থল পলাশি। চূড়ান্ত ক্ষয় ও বিনষ্টের ছবিটি আগাম দেখতে পেয়ে তাই সংবেদনশীল নবাবের হৃদয় হাহাকার করে উঠেছে, যার প্রকাশ ঘটেছে প্রশ্নে উদ্ধৃত মন্তব্যের মাধ্যমে।

‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশ অবলম্বনে সিরাজদ্দৌলার চরিত্র বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।

কথামুখ — ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাটকে সিরাজের চরিত্রে একাধিক বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। যেমন —

  • জাতীয়তাবাদী ও দেশপ্রেমী — নবাব সিরাজ বাংলার স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। বাংলার দুর্দিনে তাঁর চরম শত্রু মীরজাফর প্রমুখের প্রতি তিনি একত্রে থাকার অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
  • অসাম্প্রদায়িক — সিরাজের দেশাত্মবোধ ছিল অসাম্প্রদায়িক। “বাংলা শুধু হিন্দুর নয়, বাংলা শুধু মুসলমানদের নয়,-মিলিত হিন্দু-মুসলমানদের মাতৃভূমি গুলবাগ এই বাংলা।” এই অসাম্প্রদায়িকতা ছিল তাঁর দেশপ্রেমের স্বরূপ।
  • জাতীয়তাবাদী — সিরাজদ্দৌলা বাংলার মর্যাদা ও সম্মান রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী ছিলেন। তাঁর সাম্প্রদায়িকতামুক্ত জাতীয়তাবোধ তাঁকে ইতিহাসের এক বীর নায়ক করে তুলেছে।
  • উদার ও আদর্শবাদী — উদার ও আদর্শবাদী: সিরাজের চরিত্রের মধ্যে উদারতা ও আদর্শের এক অদ্ভুত সমন্বয় ছিল। মাতৃভূমির স্বাধীনতারক্ষার জন্য ব্যক্তিগত শত্রুতাকে তিনি ভুলে যেতে পেরেছিলেন। এমনকি ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধে জয়লাভের পরে নিজে বিচারের মুখোমুখি হতে বা সিংহাসন ছেড়ে দিতেও তিনি রাজি ছিলেন।
  • যন্ত্রণাদীর্ণ ও হতাশাগ্রস্ত — আদর্শের আড়ালে অবশ্য আর-এক সিরাজকে পাওয়া যায়, যিনি সমালোচনায় ক্ষতবিক্ষত, রক্তাক্ত। সিরাজ বেগম লুৎফাকে বলেছেন – “… মানুষের এমনি নির্মমতার পরিচয় আমি পেয়েছি যে, কোনো মানুষকে শ্রদ্ধাও করতে পারি না, ভালোও বাসতে পারি না।” আদর্শের বলিষ্ঠতা আর ব্যক্তিগত যন্ত্রণার দ্বন্দ্বে হতাশায় এভাবেই দীর্ণ হয়েছেন সিরাজদ্দৌলা।

‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যদৃশ্য অবলম্বনে মীরজাফরের চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।

  • কথামুখ – নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত তাঁর ‘সিরাজদ্দৌলা’ নামক নাট্যদৃশ্যে ইতিহাসকে অনুসরণ করেই মীরজাফরের স্বার্থপর চরিত্রটি তুলে ধরেছেন।
  • অসহিষ্ণু ও উগ্র – সিরাজ দরবারকক্ষে হোসেনকুলি খাঁর প্রাণদানের প্রসঙ্গ তুললে মীরজাফর মুখ খুলেন। নবাবের বিশ্বস্ত কর্মচারী মীরমদন তাঁকে নবাবের প্রতি বিশ্বস্ততার কথা মনে করালে, তিনি তাঁর পক্ষের সভাসদদের সঙ্গে নিয়ে দরবার ত্যাগ করতে উদ্যত হন। এই আচরণের মধ্যে মীরজাফরের অসহিষ্ণুতা এবং উগ্রতা ধরা পড়েছে।
  • আত্মকেন্দ্রিক ও অহংকারী – মোহনলালকে মীরজাফর বলেছেন — “নীচপদস্থ কর্মচারীদের উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের কাজের সমালোচনা করা উচিত নয়।” এই উক্তিতে নিজের পদমর্যাদা নিয়ে মীরজাফরের অহংকার প্রকাশিত হয়েছে।
  • ষড়যন্ত্রকারী – বাংলার ঘোর সংকটের সময়ে মীরজাফর নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। ওয়াটস তাঁকে যে পত্র লিখেছেন, তার প্রসঙ্গ যখন নবাব তোলেন, তখন মীরজাফরকে লজ্জিত হতে দেখা যায় না। এ থেকে বোঝা যায় মীরজাফরই নবাবের বিরুদ্ধে প্রধান ষড়যন্ত্রকারী এবং বিরূপ মনোভাবাপন্ন।
  • ইতিকথা – নাট্যকার এখানে মীরজাফর চরিত্রটিকে প্রচলিত ইতিহাসের ধারা মেনেই জীবন্ত করে তুলেছেন।

‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যদৃশ্য অবলম্বনে ঘসেটি বেগমের চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।

  • কথামুখ – সিরাজদ্দৌলা নাটকে ঘসেটি বেগম চরিত্র অনেকটাই ইতিহাসের যথাযথ রূপায়ণ।
  • ষড়যন্ত্রকারী – ঘসেটি বেগম সিরাজের মাসি। তিনি চেয়েছিলেন পিতা আলীবর্দির মৃত্যুর পর তাঁর স্বামী বাংলার মসনদে বসুন। কিন্তু তাঁর স্বামীর আকস্মিক মৃত্যু হলে সিরাজের সিংহাসনলাভ নিশ্চিত হয়ে ওঠে। নিজের মনোবাসনা পূর্ণ না হওয়ায় ঘসেটি সিরাজের প্রতি ঈর্ষা থেকেই ইংরেজদের সঙ্গে মিলিত হয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন।
  • প্রতিহিংসাপরায়ণা – ঘসেটি বেগমের প্রথম সংলাপ – “ওখানে কী দেখছ মূর্খ, বিবেকের দিকে চেয়ে দ্যাখো!” সন্তানসম সিরাজের প্রতি ঘসেটির এই উক্তি কখনোই যথাযথ বলে মনে হয় না। ঘসেটির উক্তিতে প্রতিহিংসাপরায়ণতা স্পষ্ট – “আমার রাজ্য নাই, তাই আমার কাছে রাজনীতিও নাই–আছে শুধু প্রতিহিংসা।” নিরীহ বেগম লুৎফাকেও দুর্বিনীত ঘসেটি অকারণে শ্লেষপূর্ণ বাক্য শুনিয়েছেন।
  • ইতিকথা – তাঁর সম্পর্কে লুৎফার মূল্যায়ন – “ওর নিশ্বাসে বিষ, ওর দৃষ্টিতে আগুন, ওর অঙ্গ-সঞ্চালনে ভূমিকম্প!” – বুঝিয়ে দেয় নেতিবাচক চরিত্র হিসেবে ঘসেটি সার্থক।

‘সিরাজদ্দৌলা’ নাটকে সংলাপসৃষ্টিতে নাট্যকারের কৃতিত্বের পরিচয় দাও।

ভূমিকা – অ্যারিস্টটল নাটকের যে ছয়টি উপাদানের কথা বলেছেন, তার মধ্যে চতুর্থ উপাদান হল সংলাপ। নাট্যকাহিনির সার্থক রূপায়ণে সংলাপের বিশেষ ভূমিকা আছে।

সংলাপ রচনার যথার্থতা – শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের কালজয়ী নাটক সিরাজদ্দৌলা-র এই পাঠ্যাংশে সংকলিত অংশে সিরাজ ও ওয়াটসের সংলাপ দিয়ে নাট্যদৃশ্যের সূচনা হয়েছে। ওয়াটস ইংরেজ চরিত্র। তাই তাঁর সংলাপ ইংরেজি ভাষায় রচিত হয়েছে। তিনি যে বাংলা ভাষা ব্যবহার করেছেন, তা অন্বয়গত দিক থেকে ত্রুটিযুক্ত। এই ত্রুটিযুক্ত ভাষা একজন ইংরেজ চরিত্রের পক্ষে উপযুক্ত হয়েছে বলা যায়। অন্যদিকে, মঁসিয়ে লা পুরোপুরি ইংরেজিতে কথা বলেছেন। নাহলে তাঁর চরিত্রটি বাস্তবতা হারাত। নাট্যদৃশ্যে সিরাজের সংলাপগুলি সম্রাটসুলভ গাম্ভীর্য এবং ব্যক্তিত্বের পরিচয় বহন করে। আবার মীরজাফর ও ঘসেটি বেগমের সঙ্গে কথোপকথনে সিরাজ চরিত্রের অন্তর্দ্বন্দ্ব ও ক্ষোভ ধরা পড়েছে। অপ্রধান চরিত্রগুলিও উপযুক্ত সংলাপের গুণে স্বমহিমায় ফুটে উঠেছে। বলা যায়, ঐতিহাসিক নাটকের গাম্ভীর্য বজায় রাখতে নাট্যকার সংলাপ রচনার ক্ষেত্রে বিশেষ শিল্পকৌশলের পরিচয় দিয়েছেন।

শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের মূল নাটকটির নাম সিরাজদ্দৌলা। তাঁর দ্বিতীয় অঙ্কের প্রথম দৃশ্যটিও ‘সিরাজদ্দৌলা’ নামে সংকলিত। বিশেষ দৃশ্যের এরূপ নামকরণ সার্থক হয়েছে কি না বিচার করো।

ভূমিকা – শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের সিরাজদ্দৌলা নাটকের দ্বিতীয় অঙ্কের প্রথম দৃশ্যটি পাঠ্যাংশে সংকলিত হয়েছে। সংকলকগণ মূল নাটকের শিরোনামটিই এখানে বজায় রেখেছেন। দৃশ্যটির ঘটনাক্রম বিশ্লেষণ করলে নামকরণটিকে অপরিবর্তিত রাখার যৌক্তিকতা ও সার্থকতা বোঝা যাবে।

নামকরণের যৌক্তিকতা ও সার্থকতা – নাট্যদৃশ্যটিতে উপস্থাপনার মূল বিষয় হল নবাব সিরাজদ্দৌলার বিরুদ্ধে সংগঠিত ষড়যন্ত্র এবং তার জন্য নবাবের মানসিক উদ্বেগ। বাইরে ইংরেজ আর ঘরে প্রধান সেনাপতি মীরজাফর এবং নিজের মাসি ঘসেটি বেগমের যৌথ ষড়যন্ত্র সিরাজকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। নিজের যাবতীয় অপরাধ স্বীকার করে নিয়ে বাংলাকে রক্ষার জন্য কর্মচারীদের কাছে তিনি নতজানু হয়েছেন। মাত্র পনেরো মাসের রাজত্বকালে দরবারি ষড়যন্ত্রে, মানুষের নির্মমতায়, আপনজনদের প্রতিহিংসায় সিরাজ মর্মপীড়া অনুভব করেছেন। নাট্যদৃশ্যের উপসংহারে তার উক্তির মধ্যে ধরা পড়েছে অন্তহীন ব্যর্থতা – “পলাশি! লাখে লাখে পলাশ-ফুলের অগ্নি-বরণে কোনোদিন হয়তো পলাশির প্রান্তর রাঙা হয়ে থাকত, তাই আজও তার বুকে রক্তের তৃষা।” সিরাজের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, হতাশা, দেশপ্রেম নাট্যাংশটির মুখ্য অবলম্বন বলেই সিরাজদ্দৌলা নামকরণটিই যথাযথ বলে মনে হয়েছে।

সিরাজউদ্দৌলা নাটক রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর – মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Bengali Sirajuddaula Question and Answer l Sirajuddaula Bengali Questions and Answers

1. ‘ আমি জানিলাম না আমাদের অপরাধ ।’— ‘ আমি ’ ও ‘ আমাদের ’ বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে ? এখানে কোন অপরাধের কথা বলা হয়েছে ?

Ans: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘ সিরাজদ্দৌলা ‘ নাট্যাংশে উদ্ধৃতিটির ‘ আমি ‘ ও ‘ আমাদের বক্তা হলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধি ওয়াটস । সিরাজের অভিযোগ সন্ধির শর্ত উপেক্ষা করে ওয়াস তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন । এর একমাত্র শাস্তি ওয়াটসের প্রাণদণ্ড । এই উক্তির প্রেক্ষিতেই ওয়াটসের এই মন্তব্য । এখানে বক্তা ‘ আমি ’ বলতে নিজেকে এবং ‘ আমাদের ’ বলতে কোম্পানিকে বোঝাতে চেয়েছেন । 

  ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও নবাব সিরাজদ্দৌলার মধ্যে আলিনগরের সন্ধি স্থাপিত হয়েছিল । কোম্পানি যাতে সন্ধির সকল শর্ত পূরণ ও রক্ষা করে , তা দেখার জন্য কোম্পানির প্রতিনিধিরূপে ওয়াটসকে মুরশিদাবাদে রাখা হয়েছিল । ওয়াটসকে লেখা অ্যাডমিরাল প্রশ্নোস্তৃত যে অপরাধ ওয়াটসনের চিঠি নবাবের হস্তগত হওয়ায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যে নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তা প্রমাণিত হয়ে যায় । অন্যদিকে , ওয়াটসের লেখা একটি চিঠি নবাব পেয়েছিলেন যা থেকে ষড়যন্ত্রে ওয়াটসের ভূমিকাটিও স্পষ্ট হয় । এইভাবে নবাব যখন কোম্পানির যাবতীয় ষড়যন্ত্রের বিষয়টি দরবারে স্পষ্ট করে তুলেছিলেন তখন ওয়াটস না – জানার ভান করে উক্তিটি করেছেন । 

2. ‘ তোমাকে আমরা তোপের মুখে উড়িয়ে দিতে পারি , জান ? ‘ — ‘ তোমাকে ’ ও ‘ আমরা ’ বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে ? উদ্দিষ্ট ব্যক্তির প্রতি এমন আচরণের কারণ কী ? 

Ans: উদ্ধৃত অংশে ‘ তোমাকে ’ বলতে মুরশিদাবাদের রাজদরবারে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রেরিত প্রতিনিধি ওয়ার্টসের কথা বলা হয়েছে । অপরদিকে ‘ আমরা ’ বলতে বক্তা সিরাজদ্দৌলা স্বয়ং এবং তাঁর সৈন্যবাহিনীসহ অন্যান্য রাজকর্মচারীকে বুঝিয়েছেন । ‘ তোমাকে ’ ও ‘ আমরা 

  মুর্শিদকুলি খাঁর মৃত্যুর পর বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদ্দৌলা বাংলার মসনদে বসেন । সিংহাসনে বসার পর থেকেই ইংরেজ কোম্পানি তাঁকে উপেক্ষা ও অসহযোগিতা করতে থাকেন । ফলস্বরূপ সিরাজ কলকাতা আক্রমণ করেন এবং কলকাতার নতুন নামকরণ করেন আলিনগর । অল্প সময়ের ব্যবধানে ওয়াটসন ও ক্লাইভ কলকাতাকে প্রশ্নোহ্ত যে অপরাধ পুনরুদ্ধার করে আলিনগরের সন্ধি স্বাক্ষর করেন । সন্ধির শর্ত সঠিকভাবে রূপায়ণের জন্য মুরশিদাবাদে রাজদরবারে ওয়ার্টস ইংরেজ প্রতিনিধি নিযুক্ত হন । ইংরেজ প্রতিনিধি ওয়াস যে নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তা প্রমাণিত হয় নৌসেনাপতি ওয়াটসনের ওয়াটসকে লেখা চিঠি থেকে । অন্যদিকে , ওয়াটসনকে লেখা ওয়াটসের চিঠি থেকে ষড়যন্ত্রে তাঁর সক্রিয় ভূমিকা প্রমাণিত হয় । ষড়যন্ত্রকারীর একমাত্র শাস্তি যে মৃত্যু – এ কথা বোঝাতেই নবাব এমন আচরণ করেছেন ।

3. ‘ মুন্সির্জি , এই পত্রের মর্ম সভাসদদের বুঝিয়ে দিন । কে , কারে পত্র লিখেছিলেন ? এই পত্রে কী লেখা ছিল ?

অথবা , ‘ এই পত্র সম্বন্ধে তুমি কিছু জান ? – কে , কার উদ্দেশ্যে এই প্রশ্ন করেছেন । পত্রটি সম্বন্ধে যা জান লেখো । 

Ans: রবীন্দ্র – পরবর্তী যুগের অন্যতম নাট্যকার ও নাট্যসংস্কারক শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের লেখা ‘ সিরাজদ্দৌলা ‘ নাট্যাংশে অ্যাডমিরাল ওয়ার্টসন ল ) সিরাজের উদ্দেশ্যে যে – পত্র লিখেছিলেন , সেই পত্র কে , কাকে পত্রও দেখার পর ‘ স্বয়ং সিরাজ তাঁর রাজদরবারে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রেরিত প্রতিনিধি ওয়ার্টসের উদ্দেশ্যে এই প্রশ্ন করেছেন ।

  শত্রু পরিবেষ্টিত হয়েই বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবের সিংহাসন লাভ । সিংহাসন লাভের সময় থেকেই নবাবের চারপাশে একদিকে নিজ আত্মীয় ও রাজকর্মচারীরা আর অন্যদিকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রতিনিয়ত স্বার্থসিদ্ধির জন্য চক্রান্তের জাল বুনে চলেছিল । আলিনগরের সন্ধির শর্ত রক্ষার্থে তাঁর দরবারে নিয়োজিত ওয়াটস ও কোম্পানির নৌসেনাপতি ওয়াটসনের মধ্যে চক্রান্তপূর্ণ যে – দুটি চিঠির আদানপ্রদান হয়েছিল তা নবাবের হস্তগত হয় । উদ্ধৃত অংশে ওয়াটসনের চিঠিটির কথা বলা হয়েছে । সেখানে চিঠির শেষের দিকের কয়েকটি ছত্রে চক্রান্তের স্পষ্ট বার্তা পাওয়া যায় । নবাবের আদেশে মুনশি অনুবাদ করে যা শোনায় তার সারমর্ম হল , ক্লাইভের পাঠানো সৈন্য শীঘ্রই কলকাতায় পৌঁছোবে । সেনাপতি ওয়াটসন খুব শীঘ্রই মাদ্রাজে জাহাজ পাঠাবেন এবং কলকাতায় আরও সৈন্য ও জাহাজ পাঠানোর কথা জানাবেন । তাঁর উদ্যোগে বাংলায় আগুন জ্বলে উঠবে । অতএব এই চিঠির মূল উদ্দেশ্য সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়ে বাংলা দখল ।

4. ‘ বুঝিয়ে আমি দিচ্ছি।— কী বোঝানোর কথা বলা হয়েছে ? কীভাবে বক্তা তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন ?

Ans: নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত ‘ সিরাজদ্দৌলা ‘ নাট্যাংশ থেকে গৃহীত উক্তিটির বক্তা হলেন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদ্দৌলা । ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে নবাবের আলিনগরের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়েছিল । কোম্পানি যাতে সকল শর্ত পালন করে , তা দেখার জন্য মুরশিদাবাদে কোম্পানির প্রতিনিধিরূপে ওয়াটসকে রাখা হয়েছিল । কিন্তু গোপনে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল । এই ষড়যন্ত্রের প্রমাণ হিসেবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অ্যাডমিরাল ওয়াটসনের একখানি চিঠি নবাব সিরাজদ্দৌলার হস্তগত হয় । যেখানে সিরাজের বিরুদ্ধে গোপনে সৈন্য সমাবেশ ঘটানোর প্রসঙ্গ আলোচিত হয় । এই চিঠি সম্পর্কে ওয়াটসকে প্রশ্ন করলে সে এ ব্যাপারে কোনো কিছু জানার কথা অস্বীকার করে । তখন নবাব উদ্ধৃত উক্তিটি করেন । বস্তা কীভাবে বুঝিয়েছেন নবাব সিরাজদ্দৌলা তাঁর বিরুদ্ধে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ষড়যন্ত্রে ওয়াটসের সক্রিয় ভূমিকার বিষয়টিকে প্রমাণ করার জন্য ওয়াটসের লেখা একখানি চিঠিও উপস্থিত করেন , যেখানে ওয়াটস জানিয়েছেন , নবাবের ওপর নির্ভর না করে চন্দননগর আক্রমণ করা উচিত । নবাব যে সবই জানেন , তা তিনি এইভাবে ওয়াটসকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন ।

5. ‘ এই মুহূর্তে তুমি আমার দরবার ত্যাগ করো । বক্তা কাকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলি বলেছেন ? এরুপ উক্তির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো । 

Ans: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের নাট্যাংশ ‘ সিরাজদ্দৌলা ‘ – র কেন্দ্রীয় চরিত্র নবাব সিরাজ তাঁর রাজদরবারে কোম্পানির নিয়োজিত ইংরেজ রাজকর্মচারী ওয়াটসকে উদ্দেশ্য বক্তার বক্তব্যের লক্ষা করে কথাগুলি বলেছিলেন । → বাংলার মসনদে তরুণ নবাব সিরাজ আসীন হওয়া থেকেই ইংরেজরা নবাবের অন্য শত্রুদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাঁকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলছিল । সহ্যের সীমা ছাড়ালে সিরাজ কলকাতা আক্রমণ করে জয়ী হন এবং কলকাতার নতুন নামকরণ করেন আলিনগর । কিছুদিনের মধ্যেই ইংরেজরা কলকাতা পুনরুদ্ধার করে আলিনগরের সন্ধি করে । তাৎপর্য বিশ্লেষণ সন্ধির শর্ত রক্ষার্থে কোম্পানি নবাবের দরবারে ওয়াটসকে নিযুক্ত করে । ওয়ার্টস নবাবের দরবারে থেকে নবাবের সভাসদদের তাঁর বিরুদ্ধে উত্তেজিত করেন এবং কলকাতায় ইংরেজদের নবাবের আদেশ লঙ্ঘনে উৎসাহ দেন । এ কথা নবাবের অজানা নয় । প্রমাণ হিসেবে নবাব ওয়াটসনের ও ওয়াটসের চিঠি দরবারে পেশ করান — যেখানে ষড়যন্ত্রের ছবি স্পষ্ট । ওয়াটস নবাবের কাছে বলেন ‘ Punish me ‘ এবং I can only say that I have done my duty ‘ – এতেই নবাব উত্তেজিত হয়ে কথাগুলি বলেন ।

আরোও দেখুন:- মাধ্যমিক বাংলা – সিরাজদ্দৌলা (নাটক) শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত VVI প্রশ্ন ও উত্তর 

6. তোমাদের কাছে আমি লজ্জিত।- কে , কাদের কাছে লজ্জিত ? লজ্জা পাওয়ার কারণটি উল্লেখ করো ।  

Ans: আমাদের পাঠ্য শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘ সিরাজদ্দৌলা ’ , A কে , কাদের কাছে , লজ্জিত নাট্যাংশের দ্বিতীয় অঙ্কের প্রথম দৃশ্যে রাজদরবারে ফরাসি প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা – সহ সমস্ত ফরাসিদের কাছে নিজের অক্ষমতার জন্য নবাব স্বয়ং লজ্জিত বলে জানিয়েছেন । লজ্জার কারণ → ইংরেজ , ডাচ , পোর্তুগিজদের মতো ফরাসিরাও দীর্ঘকাল বাংলা দেশে বাণিজ্য করেছে । ঔপনিবেশিক প্রতিযোগিতা থাকায় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইঙ্গ – ফরাসি দ্বন্দ্ব সর্বজনবিদিত । বাংলাতেও সেই শত্রুতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক ছিল । কিন্তু নবাবের সুনজরে থাকার জন্য ফরাসিরা নিরুপদ্রবেই ছিল । ঘরে – বাইরে নবাব নানান সমস্যায় জর্জরিত থাকার সুযোগে ইংরেজরা চন্দননগর আক্রমণ করে ফরাসিদের বাণিজ্যকুঠি নিজেদের অধিকারে আনে এবং গোটা চন্দননগরের অধিকার নবাবের কাছে দাবি করেন । ফরাসিরাও নবাবের সাহায্য প্রার্থনা করে আবেদন জানান । নবাবের কলকাতা জয় ও শওকতজঙ্গের সঙ্গে সংগ্রামে অর্থবল ও লোকবল কমে আসে । মন্ত্রীমণ্ডলও যুদ্ধের পক্ষপাতী ছিল না । সমস্যা জর্জরিত সম্রাট নতুন করে আর ইংরেজদের সঙ্গে বিবাদে জড়াতে চাননি । নবাবের এই অক্ষমতার জন্য ফরাসিদের কাছে তিনি লজ্জিত ।

7. ‘ আমার এই অক্ষমতার জন্যে তোমরা আমাকে ক্ষমা করো । — বস্তুা কাদের কাছে কোন্ অক্ষমতা প্রকাশ করেছেন ?  

Ans: নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত ‘ সিরাজদ্দৌলা ‘ নাট্যাংশটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে লিখিত । বাংলার নবাব সিরাজদ্দৌলার জীবনকাহিনি । এবং নবাব তথা বাংলার ট্র্যাজিক পরিণতি এই নাটকের বিষয়বস্তু । উদ্ধৃত উক্তিটির বক্তা সিরাজদ্দৌলা , ফরাসি প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা – কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন । দীর্ঘকাল ধরেই ইংরেজদের সঙ্গে ফরাসিদের বিবাদ । সেই বিবাদের সূত্রপাত সাগরপারে হলেও তার সূত্র ধরেই এদেশেও উভয়পক্ষের মধ্যে রেষারেধি ছিল অব্যাহত । ইংরেজরা সিরাজদ্দৌলার অনুমতি ব্যতীতই চন্দননগর আক্রমণ ও অধিকার করে । সেখানকার সবকটি ফরাসি বাণিজ্যকুঠি অধিগ্রহণের দাবি জানায় । এর সুবিচারের আশায় ফরাসিরা নবাবের শরণাপন্ন হলেও সিরাজদ্দৌলা তাদের সাহায্য করতে পারেননি । এখানে তিনি নিজের সেই অক্ষমতার কথাই বলেছেন । 

  বক্তা নবাব সিরাজদ্দৌলা ফরাসিদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন । কারণ , ফরাসিরা তাঁর সঙ্গে কখনোই দুর্ব্যবহার করেনি । তাই তাদের প্রতি সম্পূর্ণ সহানুভূতি থাকলেও এবং তাদের অভিযোগ ন্যায়সংগত হওয়া সত্ত্বেও তিনি তাদের সাহায্য করতে অপারগ । নিজের অক্ষমতায় এবং নিষ্ক্রিয়তায় আন্তরিকভাবে লজ্জিত সিরাজ ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন । 

8. ‘ তুমি আমার প্রতি তোমার অন্তরের প্রীতিরই পরিচয় দিয়েচ । — কে , কার প্রতি প্রীতির পরিচয় দিয়েছেন ? কীভাবে তিনি প্রীতির পরিচয় দিয়েছেন ?

Ans: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত ‘ সিরাজদ্দৌলা ‘ নাটক থেকে উদ্ধৃতিটি গৃহীত । ফরাসি প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা নবাবের প্রতি যে – আন্তরিক প্রীতির পরিচয় দিয়েছেন । সে – কথাই নবাব বলেছেন । 

  ফরাসি ও ইংরেজদের মধ্যেকার পুরোনো শত্রুতার জন্য সিরাজকে অন্ধকারে রেখে ইংরেজরা চন্দননগর আক্রমণ করে ও অধিকার নেয় এবং ফরাসিদের বাণিজ্যকুঠিগুলি অধিগ্রহণের দাবি তোলে । ইংরেজদের এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ফরাসিরা নবাবের দ্বারস্থ হন । কিন্তু কলকাতা জয় ও শওকত জঙ্গের সঙ্গে যুদ্ধে লোকবল , অর্থবল প্রীতির পরিচয় কমে যাওয়ায় নবাব আর নতুন করে ইংরেজদের বিস্তারিতভাবে সঙ্গে শত্রুতা না বাড়িয়ে নিরপেক্ষ থাকতে চান । তখন ফরাসি প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা নবাবকে জানান বাধ্যত ভারতবর্ষ ছেড়ে চলে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই তাদের কাছে । যাওয়ার আগে মঁসিয়ে লা সিরাজকে সাবধান করে বলেন যে , তারা ভারত ছাড়লেই ইংরেজরা সর্বশক্তি নিয়ে তাঁর সাম্রাজ্য ধ্বংস করতে ঝাঁপিয়ে পড়বে । মঁসিয়ে লা – র কথা আন্তরিক ও সত্যতাপূর্ণ ছিল , তাতে নবাবের মনে কোনো সন্দেহ ছিল না । তাই তিনি বন্ধুভাবাপন্ন ও শুভাকাঙ্ক্ষী মঁসিয়ে লা – র স্মৃতি মনের মণিকোঠায় চিরদিন উজ্জ্বল হয়ে থাকার কথা বলেন । উদ্ধৃত বক্তব্যে সিরাজের সেই মনোভাবই ব্যক্ত হয়েছে ।

9. ‘ আর কত হেয় আমাকে করতে চান আপনারা ? -‘আপনারা কারা ? প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মন্তব্যটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও ।

Ans: নাট্যকার শচীন সেনগুপ্তের ‘ সিরাজদ্দৌলা ‘ নাট্যাংশ থেকে উদ্ধৃত অংশটি গৃহীত । ‘ আপনারা ‘ বলতে এখানে রাজবল্লভ , জগৎশেঠ , মীরজাফর প্রমুখ সভাসদের কথা বলা হয়েছে । এরাই বিভিন্ন সময়ে ইংরেজদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নবাবকে বিব্রত করেছিলেন । ইতিহাসে এরা বিশ্বাসঘাতক বলে পরিচিত । 

  পরিচয় বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজের সিংহাসন লাভটাই ছিল কাঁটা বিছানো পথে । ঘরে – বাইরে শত্রু , সভাসদদের অন্তর্ঘাত- সবমিলিয়ে এক অসহায় অবস্থার সৃষ্টি হয় । রাজদরবারে আলিনগরে সন্ধির শর্তাবলি রক্ষার্থে কোম্পানির নিযুক্ত রাজকর্মচারী ওয়ার্টসকে যখন তথ্যপ্রমাণসহ দোষী সাব্যস্ত করে নবাব দরবার থেকে একপ্রকার তাড়িয়েই দেন তখন ব্যাপারটা নবাবের সভাসদ রাজবল্লভ , জগৎশেঠদের ভালো লাগেনি । রাজবল্লভ এর প্রতিবাদও করেন । ক্রুদ্ধ নবাব তখন নিজেদের কথা ভাবার পরামর্শ দেন । উত্তরে জগৎশেঠ উপযুক্ত সময়ে কিছু ভাবা হয়নি বলায় নবাব ক্রুদ্ধ হন এবং অকপটে তাদের কটূক্তি , স্পর্ধা , দুর্নাম , কর্মচারী ও আত্মীয়দের মনকে বিষিয়ে তোলার ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার প্রতি তীব্র ধিক্কার জানিয়ে উক্তিটি করেছেন ।

10. ‘ আজ পর্যন্ত কদিন তা ধারণ করেছেন , সিপাহসালার ? —কে , কার উদ্দেশ্যে এই উক্তিটি করেছে ? প্রসঙ্গটি ব্যাখ্যা করো ।

Ans: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত ‘ সিরাজদ্দৌলা ’ নাট্যাংশ থেকে গৃহীত উক্তি — কে , কার প্রতি আলোচ্য উক্তিটির বক্তা হল সিরাজদ্দৌলার সভাসদ মোহনলাল । মোহনলাল এ কথা বালেছে মীরজাফরকে উদ্দেশ্য করে । প্রন্মোশ্বত প্রসঙ্গের বিশ্লেষণ নবাব সিরাজদ্দৌলার সভাসদদের মধ্যে যে তিন জন সবচেয়ে বেশি ষড়যন্ত্রে নিযুক্ত ছিল , তারা হল রাজবল্লভ , জগৎশেঠ , মীরজাফর । এদের লক্ষ্য ছিল কোম্পানির সঙ্গে হাত মিলিয়ে যে – কোনো ভাবে নবাবের পতন । তাই এরা নবাবের অপদার্থতা , অযোগ্যতা প্রমাণের জন্য নবাবের পক্ষে সম্মানহানিকর এমন বহু কাজে লিপ্ত হয় । কখনও তারা নবাবকে কটূক্তি করেছে আবার কখনও – বা সভাসদের এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে রাজকর্মচারী , আত্মীয়স্বজনদের তাঁর বিরুদ্ধে বিষিয়ে তুলেছে । ষড়যন্ত্রের আঁচ পেয়ে নবাব অনুসন্ধান করতে গিয়ে যখন দেখেন যে , সভাসদদের স্বার্থসিদ্ধিই এর মূল কারণ তখন তারা এর প্রতিবাদ করে । ‘ পাপ কখনও চাপা থাকে না’ রাজবল্লভের এই কথার প্রেক্ষিতে নবাব হোসেনকুলীর প্রসঙ্গ আনতে সে চুপ হয়ে গেলেও পরম ষড়যন্ত্রকারী বন্ধু মীরজাফর তরবারি ধরে প্রতিজ্ঞা করে , মানী লোকের অপমান করলে সে নবাবের হয়ে অস্ত্র ধরবে না । এ প্রসঙ্গে নবাব – অনুগত মোহনলাল উক্তিটি করেছিল , যাতে মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতক রূপটি ফুটে ওঠে ।

আরোও দেখুন:- 

11. ‘ আমরা নবাবের নিমক বৃথাই খাই না , এ কথা তাদের মনে রাখা উঠিত।— নিমক খাওয়ার তাৎপর্য কী ? উক্তিটি থেকে বস্তার চরিত্রের কোন পরিচয় পাওয়া যায় ?  

Ans: নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘ সিরাজদ্দৌলা ‘ নাটকে উদ্ধৃত উক্তিটির বক্তা সিরাজের একান্ত অনুগত ও বিশ্বস্ত সহচর মীরমদন । নিমক নিমক খাওয়া — তাৎপর্য খাওয়ার অর্থ হল কারও আর প্রতিপালিত হওয়া । তিনি সিরাজের বেতনভুক কর্মচারী । তাই তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনই যে যথার্থ সে – কথা বোঝাতেই উক্তিটির অবতারণা । 

  মীরমদন তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণেই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হননি । তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলি হল 

সৎ : তিনি সৎ ও চরিত্রবান সৈনিক । তাই রাজদরবারের সংখ্যাগরিষ্ঠের দুর্নীতি তাঁকে স্পর্শ করতে পারে না । 

দৃঢ়চেতা : তিনি অত্যন্ত নম্র , ভদ্র ও পরিশীলিত হওয়া সত্ত্বেও স্থানবিশেষে কাঠিন্য প্রদর্শন করতেও পিছপা হন না । তাই সর্বসমক্ষে মীরজাফরকে অপ্রিয় সত্য কথাটি বলতে তিনি দ্বিধাবোধ করেননি । এ তাঁর চারিত্রিক দৃঢ়তার দৃষ্টান্ত ।

অনুগত : নবাবের প্রতি মীরমদনের আনুগত্য প্রশ্নাতীত । বীর মীরমদন নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন । তাই নবাবের অন্য সভাসদদের নবাবের প্রতি দুর্ব্যবহার ও স্পর্ধা লক্ষ করে , তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে রুখে দাঁড়ান । কৃতজ্ঞতা , ভালোবাসা ও আনুগত্য মীরমদনের চরিত্রে একইসঙ্গে এনে দিয়েছে নম্রতা , দৃঢ়তা এবং বিশ্বস্ততীবোধ । 

12. আপনাদের কাছে এই ভিক্ষা যে , আমাকে শুধু এই মাশ্বাসদিন— কাদের কাছে বস্তুা ‘ ভিক্ষা ’ চান ? তিনি কী আশ্বাস প্রত্যাশা করেন ?

Ans: প্রখ্যাত নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত ‘ সিরাজদ্দৌলা ’ নাটক থেকে গৃহীত উক্তিটির বক্তা বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজের । তিনি তাঁর সভাসদ জগৎশেঠ , রাজবল্লভ , রায়দুর্লভ মীরজাফর প্রমুখর বক্তা যাদের কাছে ভিক্ষা চান কাছে ক্ষমা চান । 

  নবাবের সভাসদ জগৎশেঠ , রাজবল্লভ , রায়দুর্লভ , মীরজাফর প্রমুখ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাঁকে বাংলার মসনদ থেকে উৎখাত করতে চাইছিলেন । এ কথা স্পষ্ট হয়ে যায় মীরজাফরকে লেখা ওয়াটসের একটি চিঠি যখন নবাবের হাতে আসে । তবুও নবাব তাঁদের শাস্তিবিধান না করে সৌহার্দ্যের ডাক দেন । নবাবের বক্তার আশ্বাস প্রত্যাশা অকপট স্বীকারোক্তি । মীরজাফরদের চক্রান্ত যেমন অন্যায় , তেমন তাঁর নিজের বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ আছে । নবাব বুঝেছিলেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে দেশীয় শক্তিকে একত্রিভূত করতে গেলে মীরজাফরদের সহায়তা প্রয়োজন । আর এজন্যই বাংলাকে ইংরেজদের হাত থেকে বাঁচাতে সিরাজ তাঁর সভাসদদের কাছে সৌহার্দ্য ও সহযোগিতার আশ্বাস চেয়েছেন । তাঁর অনুরোধ তাঁরা যেন এই দুর্দিনে তাঁকে ছেড়ে না – যান । বহিঃশত্রুকে পর্যুদস্ত করতে সিরাজ মতপার্থক্য , ন্যায় – অন্যায় ভুলে সকলের মধ্যে আন্তরিক বন্ধুত্ব ও সহৃদয়তার বীজ বপন করতে চেয়েছেন । 

13. ‘ আপনি আমাদের কী করতে বলেন জাঁহাপনা ! -বস্তু ও জাঁহাপনা কে ? জাঁহাপনা এর উত্তরে যা বলেছিলেন তার মর্মার্থ বুঝিয়ে দাও । 

Ans: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘ সিরাজদ্দৌলা ‘ নাটক থেকে সংকলিত বস্তা এবং তাঁহাপনার আমাদের পাঠ্য নাট্যাংশ ‘ সিরাজদ্দৌলা ‘ থেকে পরিচয় গৃহীত অংশটিতে বক্তা হলেন নবাবের সভাসদ মীরজাফর আলি খান । আর ‘ জাঁহাপনা ‘ হলেন নবাব সিরাজদ্দৌলা ।

  মীরজাফর আলি খানের প্রশ্নের উত্তরে জাঁহাপনা যা বলেছিলেন তাতে তাঁর অসহায়তার ছাপ ছিল স্পষ্ট । একদিকে কোম্পানির আগ্রাসন , অন্যদিকে রাজবল্লভ , জগৎশেঠ , রায়দুর্গভ , মীরজাফরের মতো সভাসদদের ষড়যন্ত্রে তাঁর সিংহাসন টলমল করছিল । তিনি বুঝেছিলেন তরবারির আঘাতে নয় ; মানুষের দেশাত্মবোধ , সংহতি ও ভালোবাসাকে কাজে লাগিয়ে তাদের সংহত করে এ বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে । তাঁর কাছে তখন সিংহাসন নয় , বাংলার স্বাধীনতা রক্ষার প্রশ্নই বড়ো হয়ে দেখা দিয়েছিল । আত্মসমালোচনার সঙ্গে নিজের অপরাধ স্বীকার ও তার জন্য প্রাপ্য সাজা মাথা পেতে নেওয়ার অঙ্গীকার করেও দেশের শত্রুকে আগে প্রতিহত করার ডাক দেন তিনি । বাংলা হিন্দু – মুসলমান উভয়েরই মাতৃভূমি বলে শত্রু মোকাবিলায় সংহতিতে জোর দিয়েছিলেন । এককথায় জাঁহাপনার বক্তব্যে তাঁর স্বদেশপ্রেম , ধর্মনিরপেক্ষতা , ভ্রাতৃত্ববোধ ও বিনয় প্রকাশ পেয়েছে ।

14. ‘ জাতির সৌভাগ্য – সূর্য আজ অস্তাচলগামী ; ‘ — কোন্ জাতির কথা বলা হয়েছে ? তার সৌভাগ্য – সূর্য আজ অস্তাচলগামী বলার কারণ কী ? অথবা , ‘ বাংলার ভাগ্যাকাশে আজ দুর্যোগের ঘনঘটা— বক্তা কে ? বক্তার এমন উক্তির কারণ কী ? 

Ans: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত ‘ সিরাজদ্দৌলা ’ নাট্যাংশে যে – ‘ জাতির ’ প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়েছে , তা বাঙালি জাতিকেই বুঝিয়েছে । 

  উদ্ধৃত উক্তিটি আমরা ‘ সিরাজদ্দৌলা ‘ নাটকে সিরাজের কণ্ঠে পাই । ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে বাণিজ্য করতে এসে ভারতীয়দের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এদেশের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে হস্তক্ষেপ করতে শুরু করে এবং পলাশির যুদ্ধে সিরাজকে পরাস্ত কারণ ব্যাখ্যা ‘ সৌভাগ্য – সূর্য , অস্তাচলগামী করে তারা বণিকের মানদণ্ডকে রাজদণ্ডে পরিণত করে । এই পরাজয়ের পিছনে কোম্পানির শক্তির চেয়ে নবাবের সভাসদদের সম্মিলিত অশুভ শক্তির অবদান বেশি ছিল , নবাব তা ভালোভাবেই অনুধাবন করেছিলেন । তাই মীরজাফর , জগৎশেঠ , রাজবল্লভ , রায়দুল্লভ প্রমুখের চক্রান্তের কাছে নবাবকে অসহায় লেগেছে । সব জেনেশুনেও নবাব তাদের শাস্তি দিতে পারেনি । নবাব জানতেন যে , এককভাবে নয় সম্মিলিতভাবেই কোম্পানির শক্তিকে পরাস্ত করতে হবে । বাংলার মানমর্যাদা – স্বাধীনতা রক্ষার্থে নবাব হিন্দু – মুসলমানসহ বাংলার সমস্ত মানুষের কাছে আহ্বান জানিয়েছিলেন । নবাব জানতেন পলাশির যুদ্ধে পরাজয় মানে বাংলার স্বাধীনতার অবসান । তাই স্বাধীন বঙ্গভূমির এমন ঘোরতর দুর্দিনে , তার সভাসদ ও সমগ্র বঙ্গাবাসীর কাছে বাঙালির সৌভাগ্য সূর্যের অস্তাচল রোধ করতে তিনি কাতর আবেদন জানিয়েছিলেন ।

15. ‘ আমি আজ ধন্য । আমি ধন্য / –আলোচ্য উক্তিটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও ।

Ans: প্রখ্যাত নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত ‘ সিরাজদ্দৌলা ‘ নাটক থেকে গৃহীত আলোচ্য উক্তিটির বস্তুা হলেন সিরাজদ্দৌলা । কোম্পানি সিরাজের অনুমতি ছাড়াই চন্দননগর আক্রমণ করে ফরাসি বাণিজ্যকুঠিগুলি অধিগ্রহণের প্রচেষ্টা চালাচ্ছিল । এ সংবাদে বিচলিত নবাব বুঝতে পারছিলেন উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য যে , অচিরেই তাঁর ওপর ব্রিটিশের কোপ নেমে আসতে চলেছে । মীরজাফর , রাজবল্লভ , জগৎশেঠ প্রমুখ নবাবের ঘনিষ্ঠ সভাসদ একে একে নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছিলেন । প্রমাণ পাওয়া সত্ত্বেও সিরাজ এঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ না করে বরং সৌহার্দ্য সহকারে কাছে টানার চেষ্টা করেছিলেন । বাংলা দেশের মানমর্যাদা ও স্বাধীনতা রক্ষার খাতিরে , তাঁরা যেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নবাবের সঙ্গ দেন , সিরাজ সেই আবেদন রেখেছিলেন । সভায় উপস্থিত সকলকে বৈরিতা ভুলে একত্রিত হতে বলেন । সকলের কাছে আন্তরিক অনুরোধ জানান , ‘ বাংলার এই দুর্দিনে আমাকে ত্যাগ করবেন না । নবাবের এই অনুনয়ে মীরজাফর ও অন্যরা নবাবের সঙ্গে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন । নবাবের অনুগত ও বিশ্বস্ত মোহনলাল এবং মীরমদনও সিপাহসালার মীরজাফরের নির্দেশ মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন । এই সহযোগিতাপূর্ণ পরিস্পির্তিতে আনন্দিত নবাব উক্তিটি করেছিলেন ।

আরোও দেখুন: প্রলয়োল্লাস কবিতা প্রশ্নোত্তর – মাধ্যমিক বাংলা ২০২৬ প্রস্তুতির সম্পূর্ণ গাইড

16. ‘ বাংলার মান , বাংলার মর্যাদা , বাংলার স্বাধীনতা রক্ষার প্রয়াসে আপনারা আপনাদের শক্তি দিয়ে বুদ্ধি দিয়ে , সর্বরকমে আমাকে সাহায্য করুন । — সিরাজ কাদের কাছে এই সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন ? কেন তিনি এই সাহায্যের প্রত্যাশী হয়েছেন ?

Ans: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের লেখা আমাদের পাঠ্য ‘ সিরাজদ্দৌলা ‘ সিরাজের আবেদন নাট্যাংশে নবাব সিরাজদ্দৌলা তাঁর সভাসদ ষড়যন্ত্রকারী রাজবল্লভ , রায়দুর্লভ , জগৎশেঠ , মীরজাফরদের কাছে এই সাহায্যের আবেদন জানিয়েছিলেন । 

  আলিবর্দির মৃত্যুর পরে সিরাজের বাংলার মসনদে আরোহণ সিরাজের শত শত্রু ও ষড়যন্ত্রকারীর জন্ম দেয় । তাই তার পনেরো মাসের নবাবি জীবনে একটি দিনও সুখের ছিল না । পারিবারিক শত্রু তো ছিলই , তার সাহায্যের প্রত্যাশী সঙ্গে যুক্ত হন সভাসদরা । নানা ঘটনার প্রেক্ষিতে হওয়ার কারণ নবাব ক্ষতবিক্ষত ও অসহায় হয়ে পড়েন । একদিকে ইংরেজ কোম্পানি কলকাতায় সৈন্য সমাবেশ , দুর্গ নির্মাণ , চন্দননগর আক্রমণ , কাশিমবাজার অভিযান করে নবাবের রক্তচাপ বাড়াতে থাকে ; অন্যদিকে , নবাবের কাছে অপমানিত ওয়াটসের ষড়যন্ত্রে সভাসদরা কোম্পানির সঙ্গে আপসে সমস্যার সমাধান করতে চাপ দিতে থাকেন এবং রাজসভা ত্যাগ করতে উদ্যত হন । এই অবস্থায় অসহায় নবাব বুঝেছিলেন , বাংলার এই দুর্দিনে সব জাতি , সব শক্তির মিলিত প্রয়াস । প্রয়োজন । তাই অকপটে নিজের ভুল – ত্রুটি স্বীকার করে নিয়ে তিনি সাহায্যের প্রত্যাশী হয়েছিলেন । 

17. ‘ দুর্দিন না সুদিন । বক্তা কে ? ‘ দুর্দিন ‘ ও ‘ সুদিন ‘ বলতে এখানে কী বোঝানো হয়েছে ?

Ans: ‘ সিরাজদ্দৌলা ‘ নাট্যাংশ থেকে গৃহীত , আলোচ্য উদ্ধৃতিটির বক্তা হলেন নবাব আলিবর্দি খাঁ – র জ্যেষ্ঠা কন্যা ও নবাব সিরাজদ্দৌলার মাসি ঘসেটি বেগম । 

  আলিবর্দি খাঁ – র মৃত্যুর পর সিংহাসনে বসেন তাঁর প্রিয় সৌহিত্র সিরাজদ্দৌলা । কিন্তু তাঁর নিঃসন্তান জ্যেষ্ঠা কন্যা ঘসেটি বেগম চেয়েছিলেন । যে , তার এক বোনের পালিত পুত্র শওকতজগাকে সিংহাসনে বসাতে । তা না – হওয়ায় তিনি সিরাজদ্দৌলার বিরুদ্ধে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে পড়েন এবং মীরজাফর , জগৎশেঠ প্রমুখের সঙ্গে সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন । সিরাজদ্দৌলা বুঝতে পারেন যে , ঐশ্বর্যের দত্ত ঘসেটি বেগমকে এতখানি উদ্ধৃত করেছে । তিনি ঘসেটির মতিঝিল প্রাসাদ অধিকার করে নেন ও তাঁকে সসম্মানে নিজের প্রাসাদে স্থান দেন । কিন্তু ঘসেটি সেই সম্মানের মর্যাদা রাখেননি । তিনি মনেপ্রাণে চেয়েছেন , ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ফৌজ দ্বারা কাশিমবাজার আক্রমণ । তাই ব্রিটিশ বাহিনীর মুরশিদাবাদ আক্রমণ সিরাজের চোখে ‘ দুর্দিন ‘ হলেও , ঘসেটির কাছে তা ছিল ‘ সুদিন ’ । কেন – না ইংরেজ বাহিনীর দ্বারা সিরাজের ধ্বংসই তাঁর একমাত্র কাম্য ছিল । 

18. সিরাজদ্দৌলা ‘ নাট্যাংশ অবলম্বনে সিরাজদ্দৌলার চরিত্র – বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো ।

Ans: বিংশ শতাব্দীতে নাট্যকাররা ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বকে মুক্তি – আকাঙ্ক্ষার প্রতীকরূপে ভেবে নাটক রচনায় ব্রতী হন । শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘ সিরাজদ্দৌলা ‘ নাটকের সিরাজ সেরকমই এক ব্যক্তিত্ব । 

দেশাত্মবোধ : সিরাজ তাঁর নিজের বিরুদ্ধে যাবতীয় ষড়যন্ত্রকে কখনোই ব্যক্তিগত আলোকে দেখেননি । বরং বাংলার বিপর্যয়ের দুশ্চিন্তাই তাঁর কাছে প্রধান হয়ে ওঠে । বাংলাকে বিদেশি শক্তির হাত থেকে বাঁচাতে তিনি অধস্তনের কাছে ক্ষমা চাইতে বা শত্রুর সঙ্গে সন্ধিতেও পিছপা হন না । 

সাম্প্রদায়িকতা – মুক্ত মানসিকতা সিরাজ বুঝেছিলেন বাংলা শুধু হিন্দুর নয় , বাংলা শুধু মুসলমানের নয়- হিন্দু – মুসলমানের মিলিত প্রতিরোধই পারে বাংলাকে ব্রিটিশদের আগ্রাসন থেকে রক্ষা করতে । সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত এই জাতীয়তাবোধ সত্যিই বিরল দৃষ্টান্ত 

আত্মসমালোচনা : নবাব বুঝেছিলেন ষড়যন্ত্রীরা যেমন ভুল করেছে , তেমনি অনেক ত্রুটি আছে তাঁর নিজেরও । বাংলার বিপদের দিনে তাই তিনি নিজের ভুল স্বীকারে দ্বিধাগ্রস্ত হন না । 

দুর্বল মানসিকতা : সিরাজ তাঁর শত্রুদের চক্রান্ত বুঝতে পারলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো কড়া ব্যবস্থা নিতে পারেননি । তেমনই ঘসেটি বেগমের অভিযোগেরও তিনি প্রতিবাদ করতে পারেন না বরং নিজের দুর্বলতা নিজে মুখেই স্বীকার করে নেন , ‘ পারি না শুধু আমি কঠোর নই বলে । ‘ সব মিলিয়ে লেখক সিরাজকে সফল ট্র্যাজিক নায়কের রূপ দিতে সক্ষম হয়েছেন । 

19. অর্থনও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে আপোষে নিষ্পত্তি পর্ভবপর ।’— কার উক্তি ? প্রসঙ্গ নির্দেশসহ বক্তার চরিত্রটি আলোচনা করো । 

Ans: উক্তিটি নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত ‘ সিরাজদ্দৌলা ‘ নাট্যাংশ থেকে গৃহীত । এই উক্তির বক্তা হলেন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদ্দৌলার সভাসদ রাজবল্লভ । 

  নবাবের বহিঃশত্রু যদি হয় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি , তবে ঘরশত্রু হলেন তার চার সভাসদ মীরজাফর , জগৎশেঠ , রায়দুর্লভ ও রাজবল্লভ । কোম্পানির প্রসঙ্গ নির্দেশসহ সঙ্গে নবাবের এই সভাসদরা একত্রিত হয়ে একটা বস্তার চরিত্রবিশেষণ ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে , তা নবাব জানতে পারেন । এ সম্পর্কে তাদের কাছে জানতে চাইলে নবাবের কাছে তারা সমস্ত ঘটনাই অস্বীকার করেন । নবাব যখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধি ওয়ার্টসের মীরজাফরকে লেখা চিঠির কথা উল্লেখ করেন তখন মীরজাফর – সহ অন্য সভাসদরা হতচকিত হয়ে পড়েন । অতি উৎসাহী হয়ে রাজবল্লভ নবাবের কাছে তার কোনো গোপন চিঠি আছে কিনা জানতে চান । নবাব এসব কথা সরিয়ে বাংলার দুর্দিনে তাদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা ও সৌহার্দ্যের ডাক দেন । এসব সত্ত্বেও রাজবল্লভ নবাবকে অভিযুক্ত করে কোম্পানির সঙ্গে আপসের কথা বলেন । নাটকের স্বল্প পরিসরে রাজবল্লভকে পাঠকগণ একজন শঠ , ধূর্ত , বিশ্বাসঘাতকতার অন্যতম চক্রী হিসেবেই দেখবেন । 

20. …. তাই আজও তার বুকে রক্তের তৃষা । জানি না , আজ কার রক্ত সে চায় । পলাশি , রাক্ষসী পলাশি ! ‘ — ‘ ‘ পলাশি ‘ নামকরণের কারণ নির্দেশ করে উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো ।

Ans: নদিয়া জেলার ভাগীরথীর পূর্বতীরে বাংলার ঐতিহাসিক স্থান পলাশি । লাল পলাশের রঙে রঙিন হয়ে থাকত বলেই জায়গাটির এমন নাম । বাংলার ইতিহাসে পলাশি সেই রঙ্গম , যেখানে এক লজ্জাজনক ও কলঙ্কময় অধ্যায় অভিনীত হয়েছিল । পলাশের ‘ পলাশি ‘ নামকরণের কারণ নির্দেশসহ তাৎপর্য বিশ্লেষণ লাল রঙের সঙ্গে রক্তের রং একাত্ম হয়ে গিয়েছিল । শচীন্দ্রনাথের নাটকে পলাশির শেষ পরিণতি কী হবে তা না – জেনেই আগে সিরাজ উদ্ভিটি করেছেন । সিরাজ জানতেন কোম্পানির সঙ্গে যুদ্ধে বিজয়ী হওয়া কঠিন । নবাব ঘরে – বাইরে শত্রুবেষ্টিত হয়ে অনেকটাই অসহায় হয়ে পড়েছিলেন । ষড়যন্ত্রে সংশয়াচ্ছন্ন সিরাজ মানসিক দিক থেকে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়েছিলেন । ঘসেটি বেগমের অভিসম্পাত তাঁকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছিল । তাই নাট্যাংশের শেষ সংলাপে নবাবের দ্বন্দ্বদীর্ণ ক্ষতবিক্ষত মনের পরিচয় মেলে । মানসিক টানাপোড়েনে আহত নবাব আশঙ্কা প্রকাশ করেন । পলাশে রাঙা পলাশির লালের নেশা ঘোচেনি , তাই সে রক্তের পিয়াসি । কিন্তু কার রক্ত তা অজানা , কারণ যুদ্ধের পরিণতি সম্পর্কে তিনি ছিলেন অনিশ্চিত ।

21. ‘ সিরাজদ্দৌলা নাট্যাংশটি ঐতিহাসিক নাটক হয়ে উঠেছে কিনা , তা বিচার করো ।

Ans: নাট্যকার যদি কোনো ঐতিহাসিক চরিত্রের কর্মপ্রচেষ্টায় বা বৈশিষ্ট্যে অনুপ্রাণিত হয়ে তার জীবনের দ্বন্দ্বকে ভিত্তি করে নাটক লেখেন , তবে তাকে ঐতিহাসিক নাটক বলা যায় । নাট্যকারের প্রধান লক্ষ্য হবে চরিত্রসৃষ্টি , ইতিহাস বিবৃতি নয় । শচীন্দ্রনাথ ইতিহাসের ঘটনার থেকে ইতিহাস চেতনার ওপর বেশি জোর দিয়েছেন । ঐতিহাসিক নাটক হিসেবে এক্ষেত্রে লক্ষ করা যায় , নাট্যকার কোথাও ‘ সিরাজদ্দৌলা ‘ ইতিহাসকে বিবৃত ও বিকৃত করেনি । তাঁর নটাকের সার্থকতা ” চরিত্রচিত্রণে আছে ইতিহাসের আনুগত্য । সিরাজের বিরুদ্ধে স্বদেশ ও বিদেশের মানুষের ষড়যন্ত্র , ঘসেটি বেগমের চরিত্র ও কর্মকাণ্ডও ইতিহাস – স্বীকৃত । কাহিনিবিন্যাসে ও নাটকীয়তা সৃষ্টিতে , অনৈতিহাসিক চরিত্রসৃষ্টিতে নাট্যকার অসাধারণ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন , যার উদাহরণ গোলামহোসেন চরিত্র । ঐতিহাসিক তথ্যের অপ্রতুলতা থাকলেও নাটকটিকে ঐতিহাসিক নাটক বলতে দ্বিধা নেই । ইতিহাসের পটভূমিতে পলাশির যুদ্ধকে নাট্যকার একটি জাতির স্বাধীনতার সমাপ্তির প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেছেন । পরাধীনতার গ্লানিময় ভবিষ্যতের সামনে দাঁড়িয়ে সমগ্র জাতি শিহরিত হয়েছে । প্রথাসিদ্ধ ঐতিহাসিক নাটক না – হলেও ঘটনাগুলি ইতিহাস চেতনাকে জাগ্রত করে — এখানেই নাটকটির যথার্থ ঐতিহাসিকতা ।

22. মনে হয় , ওর নিশ্বাসে বিষ , ওর দৃষ্টিতে আগুন , ওর অভা সম্মালনে ভূমিকম্প ! — ‘ ওর ’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে ? বক্তার উদ্দিষ্টের প্রতি এমন মন্তব্যের কারণ আলোচনা করো ।

Ans: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের নাট্যাংশ ‘ সিরাজদ্দৌলা ’ থেকে উদ্ধৃতিটি গৃহীত । এখানে বক্তা হলেন সিরাজপত্নী লুৎফা আর ‘ ওর ’ – এর পরিচয় ‘ ওর ’ বলতে বোঝানো হয়েছে সিরাজের বিরুদ্ধে অন্যতম ষড়যন্ত্রকারিণী ঘসেটি বেগমকে , যিনি সম্পর্কে সিরাজের মাসি । নবাব আলিবর্দির তাঁর প্রিয় দৌহিত্র সিরাজকে সিংহাসনে বসানোর ব্যাপারটি ঘরে – বাইরে অনেকেই মেনে নেয়নি । এঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন আলিবর্দির কন্যা ঘসেটি বেগম । তিনি তাঁর অন্য এক বোনের পালিত পুত্র শওকতজাকে বাংলার মসনদে দেখতে মন্তব্যের কারণ চেয়েছিলেন । ঘসেটি বেগম নবাবের মাতৃসমা হলেও মাতৃত্বের লেশমাত্র তাঁর মধ্যে লক্ষ করা যায়নি । প্রতিহিংসাপ্রবণা ঘসেটি সিরাজের প্রতি বিষোদ্গার করেন এবং নবাবের সভাসদ ও কোম্পানির সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে নবাবকে উৎখাতের স্বপ্ন দেখতে থাকেন । সিরাজ তাঁর মতিঝিল প্রাসাদ অধিকার করে তাঁকে সম্মানের সঙ্গে নিজের প্রাসাদে স্থান দেন । না – পাওয়ার যন্ত্রণায় ঘসেটির প্রতিনিয়ত অভিশাপবর্ষণ সিরাজকে ক্ষতবিক্ষত করে তোলে । স্ত্রী লুৎফার কাছে নবাব একান্ত আলাপচারিতায় জানতে চান ঘসেটি বেগম মানবী না দানবী ? সিরাজের চোখের জল আর ঘসেটির ভয়ে বিচলিত লুৎফা নবাবের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেছেন । 

24. সিরাজদ্দৌলা ‘ নাটকে লুৎফা চরিত্রটি আলোচনা করো ।

Ans: আমাদের পাঠ্য শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘ সিরাজদ্দৌলা ‘ নাট্যাংশে যে দুটি নারীচরিত্র আছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন সিরাজপত্নী লুৎফা । নাট্যাংশে লুৎফাকে আমরা প্রথম দেখতে পাই ঘসেটি বেগমের সঙ্গে নবাবের মতিঝিলের অধিকার নিয়ে যখন বাদানুবাদ চলছিল তখন । ঘসেটির কথায় শওকতের মতো কেউ নবাবকে যেদিন হত্যা করবেন সেদিনই তিনি শাস্তি পাবেন । স্বামীর বিরুদ্ধে এই অভিসম্পাত শুনে লুৎফা অনুরোধের সুরে ঘসেটিকে এমন কথা বলতে বারণ করেন । ঘসেটির ভর্ৎসনা সত্ত্বেও লুৎফা তাঁর উদ্দেশ্যে একটা কটু কথাও উচ্চারণ করেননি , এটি তার বিনয় । স্বামীর প্রতি লুৎফা একনিষ্ঠ , তাই স্বামীর বিপদের বিষয়ে সে উদ্‌বিধা । বিভিন্ন সময়ে তিনি স্বামীর পাশে থেকে , কাজে সাহায্য করেছেন । ঘসেটির প্রতিহিংসা থেকে বাঁচাতে নবাবকে মতিঝিল ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন । স্বল্প রাজত্বকালে নানান সমস্যায় দীর্ণ সিরাজকে বিশ্রামের পরামর্শ দিয়ে যোগ্য সঙ্গিনীর পরিচয় দিয়েছেন । লুৎফা হলেন সেই নারী যিনি ট্র্যাজিক নায়কের পাশে থেকে তাকে ভালোবাসা সেবা – সাহস ও আস্থা জুগিয়েছেন , যাতে হতাশ , সমস্যাদীর্ণ নবাবের যন্ত্রণার ক্ষততে কিছুটা হলেও প্রলেপ পড়েছে । 

25. ‘ সিরাজদ্দৌলা ‘ নাট্যাংশের শেষ অংশে ঘসেটি ও লুৎফা চরিত্র দুটি কীভাবে বিপরীতধর্মী ভূমিকা পালন করেছে , তা আলোচনা করো ।

Ans: নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত ‘ সিরাজদ্দৌলা ’ নাটকের যে – অংশটুকু আমাদের পাঠ্য , তার শেষ অংশে নাটকের দুই নারীচরিত্র ঘসেটি বেগম ও লুৎফা – উন – নেসা প্রায় একইসঙ্গে নাট্যভূমিতে অবতীর্ণ হয় । ঘসেটি বেগম নবাব সিরাজদ্দৌলার মায়ের বোন অর্থাৎ মাসি । অথচ ঘসেটি চরিত্র তাঁর মধ্যে মাতৃসত্তা বিন্দুমাত্র লক্ষ করা যায় না । বরং প্রতিহিংসায় মত্ত হয়ে তিনি প্রতিমুহূর্তে সিরাজের প্রতি বিষোদ্গার করেন । বাংলার ইতিহাস সিরাজের বিরুদ্ধে তাঁর শত্রুতা পোষণের সাক্ষ্য দেয় । বাধ্য হয়ে সিরাজ তাঁর মতিঝিল প্রাসাদ অধিকার করে নিলেও তাঁকে সসম্মানে নিজের প্রাসাদে স্থান দিয়েছিলেন । কিন্তু সর্বস্ব হারানোর , বিশেষত ক্ষমতা হারানোর ক্ষোভ ঘসেটিকে প্রতিনিয়ত দগ্ধ করেছে । সিরাজের মৃত্যুই তাঁর একমাত্র উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায় । 

  সু চরিত্র অন্যদিকে , লুৎফা সিরাজের পত্নী । তিনি স্বামীর মঙ্গল – অমঙ্গল বিষয়ে উদ্‌বিপ্না । তাই ঘসেটির মুখে সিরাজের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার ও অভিশাপবর্ষণ । শুনে তিনি স্থির থাকতে পারেননি , নবাবকে তাঁর প্রাসাদ ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন । সিরাজের চোখের জল বিচলিত করেছে লুৎফাকে । ঘসেটির উপস্থিতি তাঁর কাছেও ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে । পলাশির যুদ্ধের অনিবার্যতার সংবাদে লুৎফা ভয় পান । নবাব – পত্নী হিসেবে তাঁর এই উদ্‌বেগ অত্যন্ত স্বাভাবিক । ঘসেটি ও লুৎফার চরিত্র নাট্যাংশে প্রায় একইসঙ্গে আবির্ভূত হয়েও নাট্যাংশে সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী দায়িত্ব পালন করেছে । এঁরা দুজন যেন সিরাজের ভাগ্য ও ভবিতব্যের দুটি বিপরীত প্রতিচ্ছবিকে তুলে ধরেছে ।

26. বাংলার এই দুর্দিনে আমাকে ত্যাগ করবেন না । —কার কাছে , কার এই অনুরোধ ? এই অনুরোধের কারণ কী ?

Ans: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘ সিরাজদ্দৌলা ‘ নাট্যাংশে বল সিরাজদ্দৌলা তাঁর প্রধান সিপাহসালার মীরজাফরকে অনুরোধ অনুরোধের কারণ এই অনুরোধ জানিয়েছিলেন । 

  আলিবর্দির মৃত্যুর পরে বাংলার মসনদে আরোহণ করেছিলেন । সিরাজদ্দৌলা । কিন্তু ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে গোপনে বোঝাপড়া করে রায়দুর্লভ , জগৎশেঠ ও মীরজাফরেরা তাঁকে বাংলার মসনদ থেকে উৎখাত করতে চেয়েছিল । মীরজাফর যে নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত এই তথ্যপ্রমাণও সিরাজের কাছে ছিল । কিন্তু পারস্পরিক দোষ – ত্রুটি ভুলে তিনি সকলকে একত্রিত করে বহিঃশত্রু ইংরেজকে পর্যুদস্ত করার স্বপ্ন দেখেছিলেন । তাঁর মনে । হয়েছিল অন্যায় উভয় পক্ষেরই হয়েছে , তবে এখন বিচারের পরিবর্তে অন্তরের সৌহার্দ্য স্থাপনই বেশি জরুরি । এই বিশ্বাস ও আবেগের বশবর্তী হয়েই নবাব সিরাজ সকলের কাছে উপরোক্ত অনুরোধ করেছিলেন ।

27. ‘ নবাব যদি কলকাতা আক্রমণ না করতেন , তা হলে এসব কিছুই আজ হতো না ’ – ‘ নবাব ’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে ? কোন্ ঘটনার প্রতি নির্দেশ করা হয়েছে ? 

Ans: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘ সিরাজদ্দৌলা ‘ নাট্যাংশ থেকে গৃহীত ‘ নবাব ’ – এর পরিচয় উদ্ধৃতাংশে ‘ নবাব ’ বলতে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদ্দৌলার কথা বলা হয়েছে । 

 আলিবর্দি ছিলেন নিঃসন্তান । তাই তিনি ছোটো মেয়ের পুত্র সিরাজকে নিজের উত্তরাধিকারী হিসেবে নির্বাচিত করেছিলেন । ফলে আলিবর্দির মৃত্যুর পরে সিরাজদ্দৌলা বাংলার মসনদে বসেন । তিনি ছিলেন স্বাধীনচেতা । ঐতিহাসিক ঘটনার ক্ষমতাসীন হওয়ার পরেই তিনি ইংরেজদের প্রতি নির্দেশ চন্দননগর আক্রমণ , কলকাতা ও কাশিমবাজারে সৈন্য সমাবেশের সংবাদ পান । এক্ষেত্রে কোনো রকম আপসে না – গিয়ে সিরাজ কাশিমবাজার কুঠি দখল করেন এবং কলকাতা আক্রমণ করে ইংরেজদের বিতাড়িত করেন । এখানে সেই ঐতিহাসিক ঘটনার প্রতিই নির্দেশ করা হয়েছে । 

28. ‘ আর আমরাই বুঝি ক্ষমা করব বিদ্রোহিণীকে ‘ বিদ্রোহিণী ’ কে ? তার সম্পর্কে এমন উক্তির কারণ কী ? 

Ans: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘ সিরাজদ্দৌলা ‘ নাট্যাংশে ‘ বিদ্রোহিণী ’ ‘ বিদ্রোহিণী ‘ – র পরিচয় বলতে নবাব সিরাজদ্দৌলার বড়ো মাসি ঘসেটি বেগম তথা মেহরুন্নিসা বেগমের কথা বলা হয়েছে । প্রশ্নোশ্বত উক্তির কারণ → ঘসেটি চেয়েছিলেন তাঁর আর – এক বোনের ছেলে শওকতজঙ্গ বাংলার মসনদে বসুক । তাই পিতা আলিবর্দি উত্তরাধিকারী হিসেবে সিরাজকে মনোনীত করলে , তা তিনি ভালোভাবে নেননি । আবার সিরাজও এ কথা জানতেন । তাই ঘসেটির সঙ্গে নবাব হওয়ার আগেই , তিনি প্রকাশ্য শত্রুতায় জড়িয়ে পড়েছিলেন । ফলে ঘসেটি দেওয়ান রাজবল্লভের মাধ্যমে সিরাজ – বিরোধী ষড়যন্ত্রে ইংরেজদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ছিলেন । তখন সিরাজদ্দৌলা তাঁকে ‘ বিদ্রোহিণী ‘ আখ্যা দিয়ে বন্দি করেছিলেন ।

29. ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে আপোষ – ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে আপস সম্ভব নয় কেন বুঝিয়ে দাও ।

Ans: প্রশ্নোদ্ভূত অংশটি শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘ সিরাজদ্দৌলা ‘ নাট্যাংশ থেকে নেওয়া । ঘসেটির দেওয়ান রাজবল্লভ নবাব সিরাজকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে আপাস নিষ্পত্তির প্রস্তাব দেওয়ায় , তিনি এমন মন্তব্য করেছিলেন । আসলে সিরাজের চরিত্রের একটি মহৎ গুণ , তিনি । ছিলেন স্বাধীনচেতা । তাই ইংরেজ বণিকেরা যে বাংলার শাসনক্ষমতা দখল করতে চায় সেটা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন । কলকাতায় সৈন্য সমাবেশ , চন্দননগর আক্রমণ , কাশিমবাজার অভিযান কিংবা ওয়াটস কর্তৃক আলিনগর সন্দ্বির অবমাননায় ইংরেজদের এই দুরভিসন্ধিই স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল । ক্লাইভ মাদ্রাজ থেকে ফিরে কলকাতা পুনরায় দখল করায় , পরিস্থিতির চাপে তখনকার মতো সিরাজ আলিনগরের সন্ধির মাধ্যমে মীমাংসা করতে বাধ্য হন । আর সেসময় থেকেই ইংরেজরা মীরজাফর , রায়দুর্গভ , জগৎশেঠ – দের সঙ্গে নিয়ে অনমনীয় সিরাজকে মসনদ থেকে অপসারিত করার ষড়যন্ত্র শুরু করেন । এ সমস্তই সিরাজ জানতেন । তাই তাঁর পক্ষে ইস্ট কোম্পানির সঙ্গে আপস সম্ভব ছিল না । 

30. কিন্তু ভদ্রতার অযোগ্য তোমরা কাকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলা হয়েছে ? এ কথা বলার কারণ কী ? 

Ans: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘ সিরাজদ্দৌলা ‘ নাট্যাংশে নবাব যাকে উদ্দেশ্য করে উক্তি সিরাজদ্দৌলা রাজদরবারে উপস্থিত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধি ওয়াটসকে উদ্দেশ্য করে এ কথাটি বলেছেন । 

  সিরাজ বাংলার মসনদে বসার মাস দুয়েকের মধ্যেই ; ইংরেজদের কাশিমবাজার কুঠি দখল করেন এবং কলকাতা থেকে তাদের বিতাড়িত করেন । কিন্তু রবার্ট ক্লাইভ মাদ্রাজ থেকে কলকাতায় ফিরে পুনরায় তা দখলে আনেন । সেসময় পরিস্থিতির চাপে সিরাজ ; ইংরেজদের সঙ্গে আলিনগরের সন্ধির মাধ্যমে মীমাংসা করেন । কিন্তু স্বাধীনচেতা সিরাজকে সরানোর জন্য ইংরেজরা তলে তলে নানারকম চক্রান্ত শুরু করে । মীরজাফর , রায়দুর্লভ , রাজবল্লভ ও জগৎশেঠদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নবাবকে উৎখাত করার নীল – নকশা রচিত হয় । এ সম্পর্কিত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধির সঙ্গে মীরজাফরের ষড়যন্ত্রমূলক গোপন চিঠি নবাবের হস্তগত হয় । ইংরেজদের এই দুঃসাহস – স্পর্ধা ও অন্যায় আচরণে ক্রুদ্ধ হয়ে তাই সিরাজদ্দৌলা প্রশ্নোদ্ভূত মন্তব্যটি করেছেন ।

31. ” I know we shall never meet’- কে , কাকে প্রশ্ন এ কথা বলেছেন ? এ কথা বলার কারণ বুঝিয়ে দাও ।

Ans: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের লেখা ‘ সিরাজদ্দৌলা ‘ নাট্যাংশে উক্তি — কে , কাকে রাজসভায় উপস্থিত ফরাসি প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা এ কথা নবাব সিরাজদ্দৌলাকে বলেছেন । ইংরেজদের মতোই ফরাসিরাও এদেশে বাণিজ্য করতে এসেছিল । তাদের বাণিজ্যকুঠি ছিল চন্দননগর । কিন্তু বাংলায় ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে । নবাবের সম্মতি ছাড়াই ইংরেজরা চন্দননগর অধিকার করে । তখন প্রতিকারের আশায় ফরাসিরা সিরাজের সাহায্য প্রার্থনা করে । তবে কলকাতা প্রশ্নোত উক্তির কারণ ও পূর্ণিয়ার যুদ্ধের পর পরিস্থিতির চাপে দুর্বল সিরাজ , নতুন করে যুদ্ধের পক্ষপাতী ছিলেন না । তাই তিনি মঁসিয়ে লা – কে নিজের অক্ষমতার কথা জানান । মঁসিয়ে লা – কে কিছুটা ক্ষুণ্ন হয়ে নবাবের সমস্যা ও বিপদ সম্পর্কে তাঁকে সচেতন করে এ দেশ ছাড়ার বাধ্যবাধকতার কথা বলেন । প্রত্যুত্তরে সিরাজ ফরাসিদের বন্ধুত্ব এবং প্রীতির কথা বলে ধন্যবাদ জানিয়ে আবার প্রয়োজনে তাদের স্মরণ করার কথা বলায় , মঁসিয়ে লা উপরোক্ত উক্তিটি করেছিলেন ।

32. ‘ আমার রাজ্য নাই । তাই আমার কাছে রাজনীতিও নাই , আছে শুধু প্রতিহিংসা- কে , কার উদ্দেশ্যে এ কথা বলেছে ? বক্তার প্রতিহিংসার কারণ কী ?

Ans: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘ সিরাজদ্দৌলা ‘ নাট্যাংশে সিরাজের উক্তি — কে , কাকে মাতৃঘসা ঘসেটি বেগম এ কথাগুলি নবাব সিরাজদ্দৌলার উদ্দেশ্যে বলেছেন ।

  আলিবর্দি , নিজের কোনো পুত্র না থাকায় তৃতীয় মেয়ের পুত্র সিরাজদ্দৌলাকে নিজের উত্তরাধিকারী মনোনীত করেছিলেন । সেইমতো আলিবর্দির মৃত্যুর পরে , সিরাজ বাংলার মসনদে বসেন । কিন্তু এই ঘটনায় সর্বাপেক্ষা বিরূপ হয়েছিলেন ঘসেটি বেগম । তিনি আর – এক বোনের পুত্র পূর্ণিয়ার শাসনকর্তা শওকতজঙ্গকে বাংলার মসনদে বসাতে চেয়েছিলেন । এজন্যে তিনি সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেন । ফলে সিরাজ মাতৃম্বসা ঘসেটিকে নিজ প্রাসাদে বন্দি করেন । বন্দিনি ঘসেটির প্রতিহিংসার এই ছিল মূল কারণ ।

33. ‘ অন্তরে যে কথা দিন – রাত গুমরে গুমরে মরচে , তাই আজ ভাষায় প্রকাশ করচি । বক্তার ভাষায় প্রকাশ করা কথাগুলি কী ছিল ?

Ans: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘ সিরাজদ্দৌলা ’ নাট্যাংশ থেকে উদ্ধৃত উক্তিটির বক্তা নবাব সিরাজের মাতৃদ্বসা ঘসেটি বেগম । ঘসেটি কখনোই বাংলার নবাব হিসেবে সিরাজকে মেনে নিতে পারেননি । তাই তিনি সিরাজকে অপসারিত করে পূর্ণিয়ার শাসনকর্তা শওকতজঙ্গকে বাংলার মসনদে বসানোর চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছিলেন । তখন সিরাজ তাঁকে নিষ্ক্রিয় ও অন্তর্দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ জব্দ করার জন্য নিজ প্রাসাদে বন্দি করেন । বন্দিনি ঘসেটির অসহায় অন্তরের জ্বালা – যন্ত্রণা ও ক্ষোভ প্রকাশিত হয়েছে প্রশ্নোদৃত অংশে । তিনি জানান , মাসির মতিঝিলের প্রাসাদ ও ধনদৌলত লুট করে সিরাজ তাঁকে সামান্য দাসীতে রূপান্তরিত করেছেন । এমনকি সিরাজই তাঁর পালিত পুত্রকে সিংহাসন থেকেও দূরে সরিয়ে রেখেছেন । এত অপমান , লাঞ্ছনা ও কষ্ট ঘসেটির পক্ষে ভুলে যাওয়া সম্ভব নয় । সিরাজ নানাভাবে বুঝিয়ে তাঁর ক্ষোভ প্রশমিত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন ।

34. ‘ এইবার হয়ত শেষ যুদ্ধ ! – কোন্ যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে । বস্তুা তাকে শেষ যুদ্ধ বলেছেন কেন ?

Ans: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘ সিরাজদ্দৌলা ‘ নাট্যাংশে নবাব সিরাজ এখানে আসন্ন পলাশির যুদ্ধের কথা বলেছেন । সিরাজ বাংলার মসনদে আসীন হয়েই কাশিমবাজার কুঠি দখল করেন । শেষ যুদ্ধ বলার কারণ এবং কলকাতায় গিয়ে ইংরেজদের বিতাড়িত করেন । কিন্তু মাম্রাজ থেকে ক্লাইভ ফিরে কলকাতা ফের দখলে আনেন । এই সময় পরিস্থিতির চাপে উভয় পক্ষের মধ্যে আলিনগরের সন্ধির মাধ্যমে মীমাংসা হয় । কিন্তু এসবই ছিল সাময়িক যুদ্ধবিরতি মাত্র । ইংরেজরা বুঝতে পেরেছিল স্বাধীনচেতা সিরাজকে মসনদ থেকে না সরালে বাংলায় নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দখল সম্ভব নয় । তাই তারা মীরজাফরকে নবাব করার প্রস্তাবে সম্মতি দিয়ে রাজবল্লভ , রায়দুর্লভ ও জগৎশেঠদের সঙ্গে সম্মিলিত ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় । এই লক্ষ্যেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনা পুনরায় কাশিমবাজার অভিমুখে যাত্রা শুরু করে । আপসহীন সিরাজ হিন্দু – মুসলিম নির্বিশেষে সকল সভাসদদের একত্র করে বহিঃশত্রুকে পর্যুদস্ত করার চেষ্টা করেন । কারণ তিনি অনুধাবন করেছিলেন পলাশির যুদ্ধে পরাজয়ের অর্থই হল স্বাধীন বাংলার পতন । ঘরে – বাইরে ষড়যন্ত্রে , চক্রান্তে জর্জরিত সিরাজের কণ্ঠে সৈ – কথাই ধ্বনিত হয়েছে । 

35. সিরাজদ্দৌলা ‘ নাট্যাংশে ঘসেটি বেগম স্বার্থান্বেষী , প্রতিহিংসাপরায়ণ , যুগোপযোগী এক বাস্তব নারীচরিত্র বিশ্লেষণ করো ।

Ans: ঘসেটি বেগম ছিলেন নবাব আলিবর্দির বড়ো মেয়ে । তাঁর প্রকৃত নাম মেহেরুন্নিসা । তিনি ঢাকার শাসনকর্তা শাহমজঙ্গ – এর স্ত্রী হওয়ায় প্রবল ধনসম্পদের অধিকারী ছিলেন । সিরাজ কখনোই তাঁর প্রিয়পাত্র ছিল না । তাই আলিবর্দি যখন সিরাজকে বাংলার মসনদের উত্তরাধিকারী হিসেবে ঘোষণা করেন তখন তা তিনি ভালোভাবে নেননি । সিরাজও এ কথা জেনে তাঁর বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বৈরিতায় লিপ্ত হয়েছিলেন । ফলে আলিবর্দির মৃত্যুর পরে সিরাজ বাংলার নবাব হলে ঘসেটি তাঁকে গদিচ্যুত করার ষড়যন্ত্র শুরু করেন । ঘসেটির লক্ষ্য ছিল পূর্ণিয়ার শাসনকর্তার পুত্র শওকতজঙ্গকে বাংলার মসনদে বসানো । এ বিষয়ে দেওয়ান রাজবল্লভকে তিনি কাজে লাগান । এভাবেই সিরাজ ও ঘসেটির মধ্যে স্বার্থ আর প্রতিহিংসাপরায়ণতা চরম রূপ ধারণ করে । ক্রমে আলিবর্দির ভগ্নীপতি মীরজাফর এবং রায়দুল্লভ জগৎশেঠ – উমিচাঁদ ও ইয়ারলতিফের মতো প্রভাবশালী সভাসদেরা সিরাজকে অপসারণের চক্রান্তে জড়িয়ে পড়েন । এ অবস্থায় ক্ষিপ্ত সিরাজ ক্রমে ঘসেটির মতিঝিলের প্রাসাদ ও ধনসম্পদ অবরুদ্ধ করে শওকতজঙ্গকে যুদ্ধে হত্যা করেন এবং ঘসেটিকে নিজ প্রাসাদে নজরবন্দি করেন । ঈর্ষা ও হিংসায় অন্ধ , বন্দিনি ঘসেটির কণ্ঠে তাই ধ্বনিত হয় সিরাজের বিরুদ্ধে ক্ষোভ – বিক্ষোভ ও অভিশাপ । এক অসহায় নারীর দীর্ঘশ্বাসে এবং অকল্যাণের কামনায় প্রতিনিয়ত দগ্ধ হন সিরাজ ও লুৎফা । তাই সিরাজের দুর্দিনে তিনি যেমন মনের খুশি গোপন করেন না , তেমনই পলাশির প্রান্তরে নিজের মুক্তি এবং নবাবের নবাবির অবসান আসন্ন জেনে উৎফুল্ল হন । এভাবেই এক রাজপরিবারের অনাথা বিধবা ঈর্ষা – হিংসা ও স্বার্থপরতার জীবন্ত মিশেলে বাস্তব আর যুগোপযোগী চরিত্র হয়ে ওঠে ।

36. মা , মা , তোমার মুখের ও – কথা শেষ কোরো না মা ! — বহুক্স কে ? ‘ মা ’ বলে কাকে সম্বোধন করা হয়েছে । তাঁর মুখের কথা শেষ না করার অনুরোধ করা হয়েছে কেন ?  

Ans: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘ সিরাজদ্দৌলা ‘ নাট্যাংশ থেকে উদ্ধৃত উদ্ভিটির বক্তা হলেন নবাব সিরাজের স্ত্রী লুৎফা – উন – নেসা তথা লুৎফা উদ্ধৃতাংশে ‘ মা ‘ বলে তিনি সিরাজের বড়ো মাসি ঘসেটি বেগমকে সম্বোধন করেছেন । 

  অনুরোধ কেন ঘসেটি বেগম সিরাজকে গদিচ্যুত করতে চেয়েছিলেন । তাই তিনি সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন । সিরাজ তাঁকে মুখের কথা শেষ বিদ্রোহিণী আখ্যা দিয়ে নিজপ্রাসাদে নজরবন্দি করেন । বন্দিনি এবং প্রতিহিংসাপরায়ণ ঘসেটি রাগে অন্ধ হয়ে সিরাজের পতন ও সর্বনাশ কামনা করতে থাকেন । এ প্রসঙ্গেই তিনি বলেন যেদিন অন্য কেউ সিরাজের প্রাসাদ অধিকার করে , তাকে সিংহাসনচ্যুত করে …. ঠিক এসময় নিজের স্বামীর সবচেয়ে মর্মান্তিক পরিণতির কথা সহ্য করতে না – পেরে লুৎফা ছুটে এসে , ঘসেটিকে মুখের কথা শেষ না করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন ।

37. ‘ জানি না , আজ কার রক্ত সে চায় । এখানে কার কথা বলা হয়েছে ? উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও ।

Ans: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘ সিরাজদ্দৌলা ’ নাট্যাংশ থেকে গৃহীত উদ্ধৃতিতে ঐতিহাসিক স্থান পলাশির প্রান্তরের কথা বলা হয়েছে । ২০ নং প্রশ্নের উত্তর দ্যাখো ।

38. ‘ আপনার অভিযোগ বুঝিতে পারিলাম না । বক্তা ” কে ? তার বা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলি কী ছিল ?

Ans: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘ সিরাজদ্দৌলা ‘ নাট্যাংশ থেকে গৃহীত বক্তা কে ? উদ্ধৃতিটির বক্তা নবাব সিরাজের রাজসভায় উপস্থিত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারী ও প্রতিনিধি ওয়াটস । 

  শত্রু পরিবেষ্টিত হয়েই বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবের সিংহাসন লাভ । সিংহাসন লাভের সময় থেকেই নবাবের চারপাশে একদিকে নিজ আত্মীয় ও রাজকর্মচারীরা আর অন্যদিকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রতিনিয়ত স্বার্থসিদ্ধির জন্য চক্রান্তের জাল বুনে চলেছিল । আলিনগরের সন্ধির শর্ত রক্ষার্থে তাঁর দরবারে নিয়োজিত ওয়াটস ও কোম্পানির নৌসেনাপতি ওয়াটসনের মধ্যে চক্রান্তপূর্ণ যে – দুটি চিঠির অভিযোগ আদানপ্রদান হয়েছিল তা নবাবের হস্তগত হয় । উদ্ধৃত অংশে ওয়াটসনের চিঠিটির কথা বলা হয়েছে । সেখানে চিঠির শেষের দিকের কয়েকটি ছত্রে চক্রান্তের স্পষ্ট বার্তা পাওয়া যায় । নবাবের আদেশে মুনশি অনুবাদ করে যা শোনায় তার সারমর্ম হল , ক্লাইভের পাঠানো সৈন্য শীঘ্রই কলকাতায় পৌঁছোবে । সেনাপতি ওয়াটসন খুব শীঘ্রই মাদ্রাজে জাহাজ পাঠাবেন এবং কলকাতায় আরও সৈন্য ও জাহাজ পাঠানোর কথা জানাবেন । তাঁর উদ্যোগে বাংলায় আগুন জ্বলে উঠবে । অতএব এই চিঠির মূল উদ্দেশ্য সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়ে বাংলা দখল । এখানে এই অভিযোগের কথাই বলা হয়েছে ।

39. ‘ আজ বিচারের দিন নয় , সৌহার্দ্য স্থাপনের দিন ? — কার উক্তি ? উক্তিটির বক্তব্য পরিস্ফুট করো । 

Ans: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘ সিরাজদ্দৌলা ‘ নাট্যাংশে নবাব সিরাজ স্বয়ং উদ্ধৃত উক্তিটি করেছেন । 

১২ নং প্রশ্নের উত্তরের দ্বিতীয় অংশটি দ্যাখো ।

40. ‘ পাপ কখনও চাপা থাকে না । কোন প্রসঙ্গে এই উক্তি ? এই উক্তির তাৎপর্য কী ? 

Ans: নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘ সিরাজদ্দৌলা ‘ নাট্যাংশে চক্রান্তে – ষড়যন্ত্রে ও মিথ্যা কলঙ্ক অপবাদে ক্ষতবিক্ষত এক নবাবের যন্ত্রণাদায়ক ছবি আমরা ফুটে উঠতে দেখি । সিরাজ নিজের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ খণ্ডন করে , যখন নবাব হিসেবে তাঁর অনাচারের খতিয়ান জানতে চান , তখন রাজবল্লভ প্রশ্নোদৃত উক্তিটি করেছিলেন । 

  উক্তির তাৎপর্য → রাজবল্লভ ছিলেন সিরাজদ্দৌলার বড়ো মাসি ঘসেটি বেগমের দেওয়ান । ঘসেটির প্রিয়পাত্র ছিলেন না সিরাজ । তাই ঘসেটি সিরাজকে সরিয়ে পূর্ণিয়ার শাসনকর্তার পুত্র শওকতজঙ্গকে বাংলার মসনদে বসাতে চেয়েছিলেন । এই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করতে সিরাজ মতিঝিলের প্রাসাদে ঘসেটিকে অবরুদ্ধ করে নিজ প্রাসাদে নজরবন্দি করে রাখেন । সেইসঙ্গে ঘসেটির সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেন এবং পুর্ণিয়ার যুদ্ধে শওকতজঙ্গকে পরাজিত ও নিহত করেন । এখানে ‘ পাপ ‘ বলতে রাজবল্লভ এসব ঘটনার প্রতিই অর্থপূর্ণ ইঙ্গিত করেছেন ।

41. “ তোমার কথা চিরদিনই মনে থাকবে । — ‘ তোমার শব্দটির দ্বারা কাকে বোঝানো হয়েছে ? বক্তার চিরদিন মনে থাকবে কেন ?

Ans: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘ সিরাজদ্দৌলা ’ নাট্যাংশ থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশে ‘ তোমার ’ শব্দটির দ্বারা ফরাসি প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা – কে বোঝানো হয়েছে ।

  ৮ নং প্রশ্নের উত্তরের দ্বিতীয় অংশটি দ্যাখো । 

42. ‘ বাংলা শুধু হিন্দুর নয় , বাংলা শুধু মুসলমানের নয় —মিলিত হিন্দু – মুসলমানের মাতৃভূমি গুলবাগ এই বাংলা।- কাদের উদ্দেশ্য করে এ কথা বলা হয়েছে ? এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বক্তার কী চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়েছে ?

 অথবা , ‘ বাংলা শুধু হিন্দুর নয় , বাংলা শুধু মুসলমানের নয় – মিলিত হিন্দু – মুসলমানের মাতৃভূমি গুলবাগ এই বাংলা।— উদ্ধৃতাংশটির আলোকে বক্তার দেশপ্রেম ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিবোধের পরিচয় দাও ।

Ans: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘ সিরাজদ্দৌলা ‘ নাট্যাংশ থেকে গৃহীত উদ্ধৃতিটির বক্তা নবাব সিরাজদ্দৌলা । তিনি রাজবল্লভ , জগৎশেঠ , রায়দুর্লভ প্রমুখকে উদ্দেশ্য করে এ কথা বলেছেন । 

  নাট্যাংশে যুদ্ধে – চক্রান্তে ও ষড়যন্ত্রে ক্ষতবিক্ষত এক রক্তমাংসের মানুষের দেখা মেলে । তিনি ঘরে – বাইরে নানা সমস্যায় জর্জরিত । কিন্তু এ সমস্যাকে তিনি কখনোই ব্যক্তিগত সমস্যা বলে মনে করেন না । কারণ এ বিপদ বস্তুবো প্রতিফলিত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য স্বদেশ ও স্বজাতির বিপদ । তাই বহিঃশত্রু ইংরেজের ক্ষমতা দখলের স্বপ্নকে ব্যর্থ করতে ; তিনি সমস্ত ন্যায় – অন্যায় বিচার ও ভেদাভেদ ভুলে সকলকে একসঙ্গে নিয়ে চলার সংকল্প করেন । তাঁর কাছে এ লড়াই বাংলার মানমর্যাদা ও স্বাধীনতা রক্ষার লড়াই । তিনি জানেন লোভ কিংবা মোহের বশবর্তী হয়ে মানুষ অনেক সময় অন্যায় কাজে প্রবৃত্ত হয় । কিন্তু দেশের বিপদে সব ভুলে ঝাঁপিয়ে পড়াই হল প্রকৃত পৌরুষ ও দেশপ্রেমের লক্ষণ । তাই মীরজাফর , রাজবল্লভ , জগৎশেঠ বা রায়দুর্গভদের এ বাংলাকে হিন্দু কিংবা মুসলমানের বাংলা হিসেবে না দেখে ; উভয়েরই প্রিয় মাতৃভূমি হিসেবে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন । কারণ এক্ষেত্রে উভয়েই অন্যায় কিংবা আঘাতের সমান অংশীদার । এমনকি তিনি নিজেকেও মুসলমান হিসেবে প্রতিপন্ন না করে ; উপস্থিত সভাসদদের আর একজন স্বজাতি হিসেবেই দেখতে চেয়েছেন । এভাবেই তিনি জন্মভূমিকে রক্ষা করতে ধর্মীয় বিভাজনের ঊর্ধ্বে উঠে , সম্প্রীতি ও দেশপ্রেমের চিরকালীন বার্তাকেই ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন ।

43. ‘ আপনার চোখে জল যে আমি সইতে পারি না ।। -বক্তা কে ? এখানে উদ্দিষ্ট ব্যক্তির চোখে জল কেন বুঝিয়ে দাও । উত্তর / শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘ সিরাজদ্দৌলা ‘ নাট্যাংশ থেকে গৃহীত উদ্ধৃতিটির বক্তা নবাব সিরাজের স্ত্রী লুৎফা – উল – নেসা তথা লুৎফা ।

Ans: অপুত্রক নবাব আলিবর্দি তাঁর দৌহিত্র সিরাজদ্দৌলাকে আপন উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনীত করেছিলেন । সেইমতো আলিবর্দির মৃত্যুর পরে ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে সিরাজ বাংলার মসনদে বসেন । কিন্তু তিনি নবাব হওয়ায় অনেকের আশাভঙ্গ হয় ও ঈর্ষাপরায়ণ বঞ্চিতরা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে । এদের মধ্যে প্রধান ছিলেন সিরাজের মাতৃম্বসা ঘসেটি বেগম । তিনি দেওয়ান রাজবল্লভের মাধ্যমে উদ্দিষ্ট ব্যক্তির চোখে সিরাজকে মসনদচ্যুত করার চক্রান্ত করেন । জলের কারণ পরবর্তীকালে মীরজাফর , ইয়ারলতিফ , জগৎশেঠ ও রায়দুর্লভরাও এই দলে যোগ দেন । সিরাজ বিদ্রোহিণী ঘসেটিকে জব্দ করতে নিজপ্রাসাদে নজরবন্দি করেন । কিন্তু বন্দিনি ও প্রতিহিংসাপরায়ণ ঘসেটির দীর্ঘশ্বাস আর অভিসম্পাতে সিরাজের হৃদয় বেদনা – যন্ত্রণায় প্রতিনিয়ত দগ্ধ হতে থাকে । তিনি নির্মম হতে পারেন না বলেই মাতৃসমা ঘসেটির কণ্ঠকে চিরতরে থামিয়ে দিতে পারেন না । বরং মানবীয় দুর্বলতায় , শত্রুর বেদনায় নিজেও কষ্ট পান । এই অন্তর্দ্বন্দ্বের জ্বালা – যন্ত্রণাতেই সিরাজের চোখে জল দেখা যায় ।

44. ‘ জাহাপনা । নীচের এই স্পর্ধা ! ‘ — কথাটি কে , কাকে বলেছেন ? প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করো ।

Ans: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘ সিরাজদ্দৌলা ‘ নাটকে প্রধান সেনাপতি মীরজাফর , অধস্তন সেনাপতি মীরমদনের কথায় ক্ষুব্ধ হয়ে অভিযোগের সুরে নবাব সিরাজকে এ উদ্ভি – কে , কাকে কথা বলেছেন । 

..নবাব সিরাজের বিরুদ্ধে মীরজাফর , রাজবল্লভ , রায়দুৰ্ল্লভ প্রমুখ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিলেন । মীরজাফরের লক্ষ্য ছিল বাংলার মসনদ । আর এ কাজে তাঁর অন্যতম প্রধান সহযোগী ছিলেন ঘসেটির দেওয়ান রাজবল্লভ । প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা রাজসভায় সিরাজের দৃঢ় ও সুস্পষ্ট প্রত্যুত্তরে রাজবল্লভের ভালোমানুষির মুখোশ খসে পড়লে , মীরজাফর তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন । তিনি সিরাজকে জানান সম্মানিত লোকের সর্বসমক্ষে এমন অসম্মান হলে , তাঁরা নবাবের সপক্ষে অস্ত্রধারণ করবেন না । এ কথার প্রত্যুত্তরে মোহনলাল জানতে চান , এ পর্যন্ত কতদিন তিনি নবাবের হয়ে অস্ত্রধারণ করেছেন ! পরে মীরমদনও যখন মোহনলালকে সমর্থন করে একই প্রশ্ন করেন , তখন ক্ষুব্ধ ও বিড়ম্বিত মীরজাফর প্রশ্নোদ্ধৃত উক্তিটি করেছিলেন ।

Madhyamik Suggestion 2026 | মাধ্যমিক সাজেশন ২০২৬

Bengali drama question answer for Madhyamik Madhyamik 2026 Bengali notes Madhyamik 2026 Bengali Question Pattern Madhyamik Bengali 2026 Suggestion Madhyamik Bengali chapter wise Q&A Madhyamik Bengali important suggestions 2026 Madhyamik Bengali Long Questions Sirajuddaula Bengali Questions and Answers Sirajuddaula Madhyamik Bengali Q&A শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত নাটক প্রশ্ন সিরাজউদ্দৌলা নাটক Madhyamik 2026 সিরাজউদ্দৌলা নাটক MCQ সিরাজউদ্দৌলা নাটক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর সিরাজউদ্দৌলা নাটক নাট্য বিশ্লেষণ সিরাজউদ্দৌলা নাটক প্রশ্ন ও উত্তর সিরাজউদ্দৌলা নাটক বহুনির্বাচনী প্রশ্ন সিরাজউদ্দৌলা নাটক রচনাধর্মী প্রশ্ন সিরাজউদ্দৌলা নাটক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন সিরাজউদ্দৌলা নাটক সাজেশন সিরাজউদ্দৌলা নাটকের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর সিরাজদ্দৌলা নাটকের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট সিরাজদ্দৌলা নাটকের বিষয়সংক্ষেপ
---Advertisement---

Related Post

📘 Indian Army Agniveer Maths 2025 – Most Important Maths MCQs with Answers

Indian Army Agniveer Maths 2025: The Indian Army Agniveer Exam 2025 is scheduled to be held from June 30 to July 10, 2025, for various posts including General ...

Download Indian Army Agniveer Syllabus 2025 PDF: Subject-wise Important Topics

The Indian Army Agniveer Syllabus 2025 is a crucial resource for candidates preparing for the online entrance exam. The official syllabus has been published on the Indian Army’s ...

Indian Army Agniveer Exam Pattern 2025: Latest Paper Format & Negative Marking Details

The Indian Army recruits Agniveers through a two-stage selection process. The first stage is the Online Common Entrance Exam (CEE), conducted at designated Computer Based Test Centres assigned ...

Indian Army Agniveer Model Question Papers 2025: Download PDF with Answers

Indian Army Agniveer Model Question Papers 2025: Candidates preparing for the Army Agniveer 2025 exam are strongly encouraged to practice with Agniveer model question papers. The Indian Army ...

Leave a Comment