Revised Blooms Taxonomy of Educational Objectives | সংশোধিত ব্লুমস ট্যাক্সোনমি : ব্লুমের ট্যাক্সোনমি শিক্ষণ পদ্ধতির ক্ষেত্রে একটি বিস্ময়কর সংযোজন। ব্লুমের ট্যাক্সোনমি 2001 সালে Anderson ও Krathwohl’s সংশোধন করেন। এটি শিক্ষা ক্ষেত্রে সংশোধিত ব্লুমের ট্যাক্সোনমি (Revised Bloom’s Taxonomy) নামে পরিচিত।
শিক্ষার্থীদের শিক্ষার উদ্দেশ্যে শ্রেণীবিন্যাস করনের ক্ষেত্রে ব্লুমের ট্যাক্সোনমি বা শ্রেণীবিন্যাসকরণ বাবর্গীকরণ বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এখানে ব্লুমের ট্যাক্সোনমির প্রথম সংস্করণ এবং সংশোধিত সংস্করণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ট্যাক্সোনমি বা বর্গীকরণ কি | Taxonomy
Taxonomy বিশ্লেষণ করলে এটি গ্রিক শব্দ Taxis থেকে এসেছে যার অর্থ হল বিন্যাসকরণ করা। তাই ব্যুৎপত্তিগতভাবে Taxonomy এর অর্থ হল নিয়ম বা আইনের বিন্যাস করণ। বা বিন্যস্ত করনের জন্য সূত্র গঠন।
Taxonomy বা বর্গীকরণ মূলত জৈব প্রাণীর শ্রেণীবিন্যাসের বিজ্ঞানে ব্যবহৃত হয়েছিল। কিন্তু আধুনিককালে ব্লুম সর্বপ্রথম শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষাগত উদ্দেশ্য গঠনের ক্ষেত্রে Taxonomy বা বর্গীকরণ বা শ্রেণীবিন্যাস করেন করেন।
ব্লুমের ট্যাক্সোনমি বা বর্গীকরণ | Bloom’s Taxonomy
আমেরিকার শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক বেঞ্জামিন ব্লুমস (Benjamin S. Bloom’s) ও তার সহযোগীগণ সর্বপ্রথম শিক্ষায় ট্যাক্সোনমি বা শ্রেনীবিন্যাসকরণ বা বর্গীকরণের (Bloom’s Taxonomy) ধারণা দেন।
১৯৫৬ সালে ব্লুম কর্তৃক Taxonomy of Educational Objective নামে প্রকাশিত হয়। অর্থাৎ শিক্ষামূলক উদ্দেশ্য গুলি তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত ছিল। এগুলির এক একটি পর্যায়কে বলে ক্ষেত্র বা Domain. এই ক্ষেত্র তিনটি হল –
i) জ্ঞানমূলক ক্ষেত্র বা Cognitive Domain – এটি বেঞ্জামিন ব্লুম কর্তৃক ১৯৫৬ সালে প্রকাশিত হয়।
ii) অনুভূতিমূলক ক্ষেত্র বা Affective Domain – এটি Karathwle কর্তৃক ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত হয়।
iii) মনোসঞ্চালনমূলক ক্ষেত্র বা Psychomotor Domain – এটি Harow কর্তৃক ১৯৭২ সালে প্রকাশিত হয়।
এখানে এই তিনটি ক্ষেত্র ছকের মাধ্যমে দেখানো হল –
জ্ঞানমূলক ক্ষেত্র | অনুভূতিমূলক ক্ষেত্র | মনোসঞ্চালনমূলক ক্ষেত্র |
মূল্যায়ন | সংশ্লেষণ | বিশ্লেষণ | প্রয়োগ | উপলব্ধি বা বোধ | জ্ঞান | চরিত্রায়ন | সংগঠন | গুরুত্ব প্রদান বা মূল্যবোধকরন | প্রতিক্রিয়াকরণ | সংগ্রহ করা বা গ্রহণ করা | জটিল বাহ্যিক প্রক্রিয়া | যান্ত্রিক কৌশল | নিয়ন্ত্রিত প্রতিক্রিয়া | সেট বা স্থিরকরন | সংবেদন |
সংশোধিত ব্লুমের ট্যাক্সোনমি | Revised Bloom’s Taxonomy
ব্লুমের ট্যাক্সোনমি 2001 সালে Anderson ও Krathwohl’s সংশোধন করেন। এটি ব্লুমের ট্যাক্সোনমি বা শ্রেণীকরণের সংশোধন (Bloom & Krathwohl, 1956) যেখানে জ্ঞানমূলক ক্ষেত্রকে বা জ্ঞানীয় প্রক্রিয়ার মাত্রা এবং জ্ঞানের মাত্রার ক্ষেত্রগুলি পুনরায় সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
তবে ব্লুমের ট্যাক্সোনমি কেবলমাত্র জ্ঞানমূলক ক্ষেত্রগুলির কিছু বিষয় পরিবর্তন হয়। এটি পিরামিডের মতো ক্রমানুযায়ী ভাবে বিন্যস্ত। তাছাড়া অনুভূতিমূলক ক্ষেত্র ও মনোসঞ্চালনমূলক ক্ষেত্রের কোনো পরিবর্তন হয়নি।
Download the Revised Bloom’s Taxonomy (PDF)
এখানে সংশোধিত ব্লুমের ট্যাক্সোনমি (Revised Bloom’s Taxonomy) -এর জ্ঞানমূলক ক্ষেত্রটি যে পরিবর্তন সাধিত হয়েছে, তা আলোচনা করা হল –
জ্ঞানমূলক ক্ষেত্র | অনুভূতিমূলক ক্ষেত্র | মনোসঞ্চালনমূলক ক্ষেত্র |
সৃজন করা | মূল্যায়ন | বিশ্লেষণ | প্রয়োগ | উপলব্ধি বা বোধ | স্মরণ করা | চরিত্রায়ন | সংগঠন | গুরুত্ব প্রদান বা মূল্যবোধকরন | প্রতিক্রিয়াকরণ | সংগ্রহ করা বা গ্রহণ করা | জটিল বাহ্যিক প্রক্রিয়া | যান্ত্রিক কৌশল | নিয়ন্ত্রিত প্রতিক্রিয়া | সেট বা স্থিরকরন | সংবেদন |
1. জ্ঞানমূলক ক্ষেত্র
ব্লুমের ট্যাক্সোনমিতে জ্ঞানমূলক ক্ষেত্রের উদ্দেশ্য গুলিকে কাঠিন্যের মাত্রা অনুযায়ী ছটি ক্রমচ্চশীলতার ভিত্তিতে বিন্যস্ত করা হয়েছে। প্রত্যেকটি উদ্দেশ্য আবার আগের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত।
১৯৫৬ সালে প্রকাশিত জ্ঞানমূলক ক্ষেত্রের সাথে ২০০১ সালের সংশোধিত জ্ঞানমূলক ক্ষেত্রের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। এখানে ২০০১ সালের সংশোধিত জ্ঞানমূলক ক্ষেত্রের ছয়টি দিক উল্লেখ করা হল –
i) স্মরণ করা
এই মাত্রাটির অন্তর্গত হল শিক্ষার্থীরা স্মরণ করে বা স্মৃতির মাধ্যমে জ্ঞানগত বিষয় বলতে পারবে বা চিনতে পারবে। এর মধ্যে ব্যবহৃত ক্রিয়াপদ গুলি হল – শনাক্ত করা, উল্লেখ করা, স্মরণ করা, নির্বাচন করা, মিল করা, সংজ্ঞা বলা প্রভৃতি।
ii) উপলব্ধি বা বোধ
এই ক্ষেত্রটির মধ্যে অন্তর্গত হল বর্ণনা করা, ব্যাখ্যা করা, শ্রেণীকরণ করা, তুলনা করা, সারাংশ লিখতে পারা, উদাহরণ দেওয়া, পার্থক্য নির্ণয় করা প্রভৃতি।
iii) প্রয়োগ করা
এই ক্ষেত্রটির মধ্যে অন্তর্গত হল শিক্ষার্থীরা শিখন অভিজ্ঞতা প্রয়োগ করতে পারবে। যেমন – স্মরণ করে প্রয়োগ করা, সমজাতীয় বিষয় বলতে পারা, সমজাতীয় ঘটনার উদ্ধৃতি দেওয়া, সঠিক পদ্ধতিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রভৃতি।
iv) বিশ্লেষণ
এই দক্ষতা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করতে ও মত প্রকাশ সহায়তা করে। এই ক্ষেত্রটির মধ্যে অন্তর্গত হল – শ্রেণীকরণ করা, বিশ্লেষণ করা, সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য নির্ণয় করা, শনাক্ত করা, বৈসাদৃশ্যের নির্ধারণ করা, পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রতিটি ধাপ বিশ্লেষণ করা প্রভৃতি।
v) মূল্যায়ন
মূল্যায়ন একটি বিশেষ দক্ষতা। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত পারদর্শিতার বিচারকরন করা হয়ে থাকে। এই দক্ষতার ক্ষেত্রটি হল – গুরুত্ব আরোপ করা, বিচার বিশ্লেষণ করা, মূল্যমান বিচার করা, মূল্যায়নের পর বাদ দেওয়া, স্বপক্ষে যুক্তি দেওয়া, পুনর্নির্মাণ করা প্রভৃতি।
vi) সৃজন
জ্ঞানমূলক ক্ষেত্রের এটি একটি অন্যতম দক্ষতা এবং জ্ঞানমূলক ক্ষেত্রের এটি সর্বোচ্চ সীমা। এই দক্ষতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিখন অভিজ্ঞতার পুনর্বিন্যাস, পরিকল্পনা, সৃজনমূলক কাজ ইত্যাদির উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
আরোও পোস্ট পড়ুন –
উপসংহার (Conclusion)
পরিশেষে বলা যায়, ব্লুম দ্বারা প্রস্তুত শিক্ষার উদ্দেশ্যের ট্যাক্সোনমির ৪টি ভিত্তি ছিল। এগুলি হল – শিক্ষাগত ভিত্তি, যুক্তিগত ভিত্তি, মনস্তাত্ত্বিক ভিত্তি এবং ক্রমবর্ধ্মান বৃদ্ধি। এদের মধ্যে শিক্ষাগত ভিত্তি জনপ্রিয়তা অর্জন করে। অর্থাৎ এই শিক্ষাগত ভিত্তির মধ্যে ব্লুম ট্যাক্সোনমি তিনটি ক্ষেত্রে মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান কিভাবে ক্রম অনুযায়ী অর্জিত হয় তার সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।
প্রশ্ন – সংশোধিত ব্লুমস ট্যাক্সোনমি কি?
উত্তর – ব্লুমের ট্যাক্সোনমি 2001 সালে Anderson ও Krathwohl’s সংশোধন করেন। এটি ব্লুমের ট্যাক্সোনমি বা শ্রেণীকরণের সংশোধন (Bloom & Krathwohl, 1956) যেখানে জ্ঞানমূলক ক্ষেত্রকে বা জ্ঞানীয় প্রক্রিয়ার মাত্রা এবং জ্ঞানের মাত্রার ক্ষেত্রগুলি পুনরায় সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
প্রশ্ন – ব্লুমের ট্যাক্সোনমি প্রশ্নের ছয়টি স্তর কি কি?
উত্তর – ১৯৫৬ সালে প্রকাশিত ব্লুমের ট্যাক্সোনমির জ্ঞানমূলক ক্ষেত্রের প্রশ্নের ছয়টি স্তর হল – জ্ঞান, উপলব্ধি বা বোধ, প্রয়োগ, বিশ্লেষণ, সংশ্লেষণ এবং মূল্যায়ন।
প্রশ্ন – ব্লুমস ট্যাক্সোনমির প্রবর্তক কে?
উত্তর – ব্লুমস ট্যাক্সোনমির প্রবর্তক হলেন বেঞ্জামিন ব্লুম (Benjamin S. Bloom’s)।
প্রশ্ন – Cognitive domain এর প্রবক্তা কে?
উত্তর – Cognitive domain এর প্রবক্তা হলেন বেঞ্জামিন ব্লুম (Benjamin S. Bloom’s)।